‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর একঘেয়েমি কাটাতে নিউ নরম্যালের নতুন ট্রেন্ড ‘ওয়ার্কেশন’

কোভিড-পৃথিবীতে (Covid-19) নিউ নর্ম্য়ালে  ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির অভিধানে নতুন সংযোজন 'ওয়ার্কেশন'।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর একঘেয়েমি কাটাতে নিউ নরম্যালের নতুন ট্রেন্ড ওয়ার্কেশন
ছবি সৌজন্য়ে ইন্টারনেট

|

Nov 24, 2020 | 11:23 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল:  কেমন হয় যদি এই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম'(Work from Home)-এর মরশুমে, ব্ল্য়াক কফি হাতে জানলার ধারের স্টাডি টেবিলটায় বসলে অতি-পরিচিত ঘরের  দেওয়ালটার বদলে আপনি দেখতে পান একটা পাহাড়? কেমন হয় যদি সকাল ৯টায় ঘরোয়া পোশাকে লগ ইন (Log In) করার পর শুনতে পেলেন সমুদ্রের গর্জন? তারপরই লকডাউনে ওট্স খেতে-খেতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া আপনি দেখলেন পাশের টেবিলে সার্ভ করা হল আপনার পছন্দের ইংলিশ ব্রেকফাস্ট (English Breakfast)। শুধু তাই-ই নয়, ‘লগড্ ইন’ থাকাকালীন চাইলেই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন আপনার প্রিয় রিচ অ্য়ারোমা কফি। আপাতদৃষ্টিতে স্বপ্ন মনে হলেও বাস্তবে হুবহু এমনটাই সম্ভব এবার। সৌজন্য়ে ‘ওয়ার্কেশন’ (Workation)। এই কোভিড-পৃথিবীতে (Covid-19) নিউ নর্ম্য়ালে (New Normal)  ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির অভিধানে নতুন সংযোজন ‘ওয়ার্কেশন’।

ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) দৌলতে এখন বাড়ি বসে দেশ-বিদেশ ঘোরা আর বড় কথা নয়। তবে ভার্চুয়াল-ভ্রমণ চোখকে সাময়িক ভাবে স্বস্তি দিলেও তা আসলে আমাদের ছুটি নেওয়ার খিদেটাকেই যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। লকডাউনের (Lockdown) জেরে গত ৯ মাস গৃহবন্দী থাকলেও কর্মজীবন থেকে ছুটি মেলেনি কারওরই। আর নানবিধ বিধিনিষেধ এবং পরিবহণগত বাধা থাকায় ঘুরতে যাওয়াও হয়নি বহুদিন। টুক করে ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্য়ালেন্স’টা আর একবার বুঝে নিতেই যেন ‘ওয়ার্কেশন’।

‘ওয়ার্কেশন’:

ওয়ার্ক + ভ্যাকেশন (Vacation)। দিন দশেকের জন্য পরিচিত ওয়ার্ক-স্টেশন থেকে ব্রেক নিয়ে পাড়ি দিতে পারেন ছুটির দেশে, যেখানে ওয়ার্ক এবং ভ্যাকেশন হবে একসঙ্গে। সেখানে থাকা, খাওয়া-সহ অফিস করার জন্য মিলবে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কও (Network)। কাজের ফাঁকে বোর হলে মিলতে পারে মনোরঞ্জক কিছু অ্যাক্টিভিটি (Activity)-র সুযোগ। এই অতিমারির কবলে পড়ে আমাদের প্রায় সকলেরই বাড়ি এবং অফিসের মাঝের যে দূরত্ব, তা আবছা হতে-হতে এখন কার্যত ভ্য়ানিশ। এই পরিস্থিতিতে তাই ওয়ার্কেশন’ যথেষ্ট লোভনীয়।

ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

আরও পড়ুন: হাজার হাজার টাকা খরচ করে মাস খানেক কিংবা দুয়েকের জন্য ঘর-বাড়ি ছেড়ে এক অপরিচিত স্থানে একা-একা বসে কাজ করাটা আদৌও সুখকর হতে পারে? 

এবার এই লোভনীয় ব্যাপারটা শোনার পর নিশ্চয়ই ভাবছেন এই সব সুবিধে পাবেন কোথায়?
বেশ কিছু পরিবহণ সংস্থা সম্প্রতি এই ওয়ার্কেশন-এর বুকিং নিতে শুরু করেছে। আপনার বাড়ি থেকে ঘন্টা তিন-চারেক দূরত্বের কোন পর্যটন কেন্দ্রে মাস খানেক বা দুয়েকের জন্য মিলতে পারে ওয়ার্কেশন-এর দুর্দান্ত সব সুযোগ-সুবিধে। স্যানিটাইজড রুম, হাই স্পিড ইন্টারনেট (High Speed Internet) পরিষেবা-সহ ‘সোশ্যাল ডিস্ট্য়ানসিং’ মেনে নিশ্চিন্তে মিলবে নিভৃতদিন যাপনের অবকাশ। তবে এই পরিষেবা ভবিষ্যতে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে বলে মনে করা হলেও এখনও পর্যন্ত খুব স্বল্প সংখ্যক ভারতীয় পর্যটন সংস্থাই ওয়ার্কেশন-এর আয়োজন করেছে।

জস্টেল (Zostel) জয়পুর, যোধপুর, কুর্গ, উদয়পুর, মুক্তেশ্বরের মতো বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের ‘ওয়ার্কেশন’-এর আয়োজন করেছে। কোভিডের সংক্রমণ এড়াতে স্যানিটাইজড ক্যাব (Sanitized Cab)-সহ সোশ্যাল ডিস্ট্য়ানসিং (Social Distancing)-এর যাবতীয় প্রয়োজনীয় গাইডলাইন মেনেই এই বন্দোবস্ত। অতিথিদের জন্য রয়েছে হেল্পলাইন নম্বরের ব্যবস্থাও।

শুধু জস্টেল (Zostel) নয়, জস্টেলের মত ‘হস্টেলার’, ‘ওয়ান্ডার অন’ -এর মত পর্যটন সংস্থাগুলিও নাম লিখিয়েছে একই দলে। এই সংস্থাগুলির দাবি, এই অতিমারির পরিস্থিতিতে মানুষকে খানিক স্বস্তি দিতে এবং পর্যটন ব্যবস্থাকে আবারও লাভের মুখ দেখানোর একমাত্র উপায় এই ‘ওয়ার্কেশন’। এই প্রসঙ্গে ট্র্যাভেল ব্লগার সৌরভ সাবিখি বলেছেন, “চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থেকে অফিসের কাজ করার থেকে নিজের পছন্দের জায়গায় বসে গরম চা কিংবা কফিতে চুমুক দিতে দিতে কাজ করাটা অনেক বেশী কার্যকরী।” তবে সম্প্রতি এই ট্রেন্ডটি শো-অফে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন সৌরভ।

কাজ যখন করতেই হবে তখন শুধু অফিস থেকে কেন? পাহাড় কিংবা সমুদ্রের পাড় থেকে নয় কেন? কিন্তু কোথায় যাবেন, সেটা ভেবে উঠতে পারছেন না ?

যদি আপনার পছন্দের কাজ করার জায়গা হয় সবুজের দেশ, তাহলে হিমাচল প্রদেশের ‘বির’ (Bir) অবশ্য়ই হয়ে উঠতে পারে আপনার গন্তব্য়। কিংবা আরব সাগরে সূর্যোদয় দেখতে-দেখতে একটা গ্রুপ কল অ্যাটেন্ড করার বহুদিনের ইচ্ছা থেকে থাকে আপনার, তাহলে ত্রিবান্দ্রামের ‘ভারকাল'( Varakal) আপনার জন্য পারফেক্ট। আর আপনি যদি ভীষণ রকম কফিপ্রেমী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ল্যাপটপ নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে কেরলের ‘কুর্গ’ (Coorg)-এ। পাহাড়প্রেমীদের জন্য অবশ্য ‘খীরগঙ্গা’-র বিকল্প কিছুই হতে পারে না।

কুর্গ – ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন, এত সুন্দর-সুন্দর সব জায়গায় কবে যাবেন? গ্য়াঁট খরচা খুব বেশি হয়ে যাবে মনে হচ্ছে?
‘ওয়ার্কেশন’গুলো খানিকটা ব্যয়সাপেক্ষ, তা ঠিক। তবে এর অভিজ্ঞতাও তো সম্পূর্ণ আলাদা। তাই একবার স্বাদ বদলের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন যে কোন একটি ‘ওয়ার্কেশন স্পট’ থেকে। হয়ত সমুদ্রের পারে বা পাহাড়ের কোলে বসে মিলতে পারে ‘জুম ক্লাউডে’ (Zoom Cloud) মিটিং অ্যাটেন্ড করার সৌভাগ্য। সংস্থা ভেদে খরচ ভিন্ন হলেও সাধারণত মাথা পিছু ৩০০০ টাকা খরচ হবে আপনার একদিনের জন্য়। বন্দিদশা কাটাতে এতটুকু তো করাই যায়, তাই না?