EXCLUSIVE: ‘আমি অর্জুন, অভিমন্যু নই, চক্রব্যূহ ভেঙে বেরতে জানি’

‘তৃণমূলে এখন কোনও ইলেকশন মেশিনারি নেই’

EXCLUSIVE: 'আমি অর্জুন, অভিমন্যু নই, চক্রব্যূহ ভেঙে বেরতে জানি'
অলঙ্করণ - অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Dec 17, 2020 | 9:23 PM

অর্জুন সিং

দু’হাজার ইগারোর (২০১১)  ইলেকশনটা, আমি তখন তৃণমূল কংগ্রেস করতাম। তখন একটা লড়াই ছিল, আমরা সবাই ভরসা করেছিলাম মমতা ব্যানার্জির ওপরে, মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee) আন্দোলনের ওপরে। কখনও ভাবিনি, যার বিরুদ্ধে লড়াই করছি  ক্ষমতায় আসার পর সেই লোকদের নিয়ে, যারা ক্ষমতায় নিয়ে এলেন তাদের সর্বনাশ করে দেবেন (মমতা)। যে সিঁড়ি দিয়ে মমতা ব্যানার্জি উঠলেন, সব সিঁড়িটাকে ভেঙে দিলেন।

যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলাম, যার বিরুদ্ধে করলাম, সে হয়ে গেল ওনার সেনাপতি। তো  একটা হাতাশা (হতাশা) দু’হাজার ইগারোর (এগারো) পর এল, যারা আমরা প্রকৃত তৃণমূল করতাম, সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছিল।

Mamata Banerjee

ছবি – ফেসবুক

আমি তো দু’হাজার এক সাল থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিলাম। বলতে গেলে, শুধু পার্টি নয়, যার কোনও অবদান নেই ভোট জেতায়, এমনি কোনও অবদানও নেই, তারা হয়ে গেল দিদির কাছের লোক। শুধু তাই নয়, আমাদের ওপর রোলার চলানো শুরু হল। আর যখন থেকে ভাইপোর (Abhishek Banerjee) ইন্ট্রি (এনট্রি) হল, তখন তো ছেড়েই দিন। ওকে আমরা দেখতাম হাফ প্যান্ট পরে পিংপং বল খেলত। তারপর রাজনীতিতে ওর ইন্ট্রি (এনট্রি) হল সোনার চামচ মুখে নিয়ে। সে আসার পর আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হল। পার্টিটা, আদর্শাটা (আদর্শ), ইডোলজিটা (ইডিওলজি) পুরোপুরি ধসে গেল। আর হাউ টু আর্ন মানি – পার্টির মূল সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। কীভাবে আমি টাকা কামাবো। ভাইপোর হাতে রাস চলল। ভাইপো পুলিশদের ডেকে ডেকে বলল, নিজের দলের লোককে ক্রস করো। আমার গাড়ি চেক করানো হয়েছিল। কাকে ধরার জন্য? মণীশ শুক্লাকে ধরার জন্য।

সেই মণীশ শুক্লার কী হল? আমি যখন বিজেপিতে এলাম, সেই মণীশ শুক্লাকেই মমতা ব্যানার্জি বাড়িতে ডেকে, নবান্নতে ডেকে মিটিং করল। তো, মমতা ব্যানার্জির একটা অদ্ভুত ক্যারেকটার আছে।

কুণাল ঘোষ  আমাকে শেখাবে কীভাবে সংগঠন করতে হবে?

যের(ক)ম কু’ণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ইকদিন (একদিন) কুণাল ঘোষ আমাদের ডিকটেশন দিচ্ছে, কি না হাউ টু – কীভাবে অর্গানাইজ করতে হবে, সংগঠন করতে হবে। আমি তখন উঠে বললাম কী, কুণাল ঘোষ থেকে এখন শিখতে হবে সিপিএমের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়ব? যে কুণাল ঘোষ দিদিকে ডাকাত রানি বলল, সে এখন প্রবক্তা। এই দলের কী হবে?

Kunal Ghosh

ছবি – ফেসবুক

একটা সময় লড়াই হয়েছিল, আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জির ফেস দেখে লড়াই করেছিলাম, মমতা ব্যানার্জি সরকারটাকে চেঞ্জ করবেন। এখন চেঞ্জ হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে বলছেন, সব আমি করে দিয়েছি। কিন্তু একটা যুদ্ধে কেবল সেনাপতি, রাজাকে দিয়ে যুদ্ধ করা যায় না, আমরাও ছিলাম। শুধু আমি। আমিত্ব যেটা বলে বাংলাতে, আমি সব করেছি, আমি বংলাতে (বাংলা) ক্ষমতা এনেছি। এই জায়গাটা চলে এল। যে আইডোলজিটা নিয়ে লড়লাম, সেটা যখন তাসের ঘরের মতো ভাঙতে লাগল, আমরা মমতা ব্যানার্জিকে বললাম এখানে স্রেফ লুঠ চলছে। তখন, যাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতাম, তারা মমতা ব্যানার্জির কাছের লোক হয়ে যায়। এই অপমান সহ্য করতে করতে বাধ্য হয়ে দল ছাড়লাম।

মমতা ব্যানার্জি আমার কাছে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হেরে গেছেন

আমার সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করুক না, কোনও অসুবিধা নেই। উনি শুরু করলেন কেন দল ছাড়বে? আমাকে ওনার পার্টিতে থাকতে হলে ওনার গুলাম (গোলাম) থাকতে হবে। গুলাম (গোলাম) যদি মাথা ওঠায়, তাহলে তার সর কলম (মুণ্ডপাত) করে দিতে হবে, যেটা ইসলামিক কানট্রিতে হয়। মমতা ব্যানার্জি গলা কাটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ লাগিয়ে, গুণ্ডা লাগিয়ে চেষ্টা করছেন। একশোর ওপর মামলা হয়ে গেছে আমার ওপর। রাজনৈতিক লড়াইয়ে মমতা ব্যানার্জি আমার সঙ্গে হেরে গেছেন, এখন ব্যক্তি লড়াই করছেন।

সিপিএম-এর বিরুদ্ধে লড়াই ছিল অনেক কঠিন

এই সব জায়গা থেকে দু হাজার একুশের ইলেকশনটা সহজ। সেই সময়টা আমি তৃণমূল হয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, এখুন (এখন) বিজেপি হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এ জন্যই আমি বলছি, দু হাজার ইগারোর লড়াইটা কঠিন লড়াই ছিল। একটা অরগানাইজ দল, অরগানাইজ সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল।

CPM

একই ফ্রেমে প্রকাশ কারাত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিমান বসু।

খুব বেশি যার জনবল থাকত, যার পিছনে মানুষের সাপোর্ট থাকত, সিপিএম (CPM) তার গায়ে হাত দিত না। সিপিএম রাজনৈতিক লড়াই করত, ব্যক্তি লড়াই করত না। এখন আমি বলব, মমতা ব্যানার্জির সরকার দু’হাজার একুশ কেন, এখনই ভোট হলে ধরাশায়ী হয়ে যাবে। এখন যদি তিনশো ছাপান্ন লাগু করে দেয়, চার ঘণ্টার মধ্যে দলটা উড়ে যাবে। চার ঘণ্টার মধ্যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে। উড়ে যাবে।

রাজ্যে ‘মমতা অনুগামী’ হলে কোনও অসুবিধা নেই, ‘দাদার অনুগামী’ হলেই অসুবিধা। সম্পর্ক না রাখলেই  সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। এমপি, এমলএ যদি বিরোধী হয়, রাজ্য সরকার কোনও সিকিউরিটি দেবে না। কোন দেশে এমন আইন আছে, ভারতবর্ষের কোনও রাজ্যে কি এমন আইন আছে? সমস্ত চোর গুণ্ডা, যার উপর মার্ডার কেস, আর্মস কেস, যাদের বিরুদ্ধে ড্রাগস কেস, পুলিশ তাদেরকে সিকিউরিটি দিয়ে রেখেছে। এটা কোথাও হয় না।

বাংলায় এখন পুলিশের রাজ চলছে। সিভিক পুলিশ বাংলা চালাচ্ছে, আর পুলিশ সিকিউরিটি দিচ্ছে – এ র ক ম দুর্ভাগ্য শেষ টাইম সিপিএমের সময় দেখেছিলাম। তখন সিপিএমের নেতারা পুলিশ ছাড়া এগোতে পারত না, তৃণমূলেও এখন যারা আছেন, ‘সো কলড আছেন’ তাঁরাও সিকিউরিটির ভরসায় চলছেন।

‘ভোট হলে মমতা ব্যানার্জির দল থার্ড হবে’

দু’হাজার উনিশের ইলেকশন থেকে একুশের (West Bengal Assembly Election 2021) লড়াইটা অনেক অনেক আলাদা। দু হাজার ইগারা (এগারো)-তে লড়াই হয়েছিল, এবারে কোনও লড়াই-ই হবে না। একটা গল্প আছে না? ‘রোম জ্বল রাহা থা, নিরো বংশি বাজা রাহা থা’, মমতা ব্যানার্জি ভাবছেন বাংলার সব ঠিক আছে। তাবেদার যারা রাজনীতি বুঝে না, ‘ইয়েস ম্যান’, চাটুকার তারা মমতা ব্যানার্জির আশাপাশে, দিদিকে দেখাচ্ছে, ‘এই তো দেখুন আজ সূর্য পশ্চিমে উঠেছে, আপনি কাল বলেছিলেন সূর্য পশ্চিমে উঠবে, পশ্চিমেই উঠেছে’। ইলেকশন কমিশন যদি ভোটটা করাতে পারে, মমতা ব্যানার্জির দল তিন নম্বরে যাবে।

সিপিএমের নেটওয়ার্কের ভিতরে ঢোকা ছিল অনেক কঠিন। সেই নেটওয়ার্কটা আমরাও চালিয়েছিলাম। আমাদেরও জানা। বিজেপিতে থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ।

‘অর্জুন তো অভিমন্যু নয়, চক্রব্যূহ ভেদ করতে জানে

যে র ক ম অভিমন্যুকে বধ করে দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু জন্ম হয়ে গিয়েছিল, শুনতে পারেনি কীভাবে চক্রব্যূহ ভাঙবে। কিন্তু অর্জুন তো জানে। মহাভারতে চক্রব্যূহ রচনা কীভাবে হয়েছিল এবং কীভাবে তা ভাঙা যাবে তা অর্জুন জানত। আগামী দিনে যারা আমাদের দলে আসবে তারাও জানবে।

তৃণমূলে চক্রব্যুহ রচনা করার লোকই নেই।  চক্রব্যূহ রচনা করার যে লোক ছিল, যেমন মুকুল রায়, সে নেই। যে যোদ্ধা ছিল, অর্জুন সিং নেই।  সরকারে থেকে পুলিশ, গুণ্ডা দিয়ে সরকারে থাকা যেতে পারে, কিন্তু ইলেকশন জেতাটা কঠিন হয়ে যাবে।

আমি আমি করেই মমতা ব্যানার্জি ডুবে গেলেন

সিপিএমের বিরুদ্ধে যখন লড়াই করেছেন, মমতা ব্যানার্জির এক কথায় আমার মতো হাজার হাজার নেতা গলা পর্যন্ত কাটিয়ে নিতে প্রস্তুত ছিল। এখন এক ফুট উঁচু থেকে লাফ দিতে বললেও দেবে না।

Mamata

ছবি – ফেসবুক

আমি। সব আমার। সবটা আমাকে দেখে হচ্ছে, আমি করেছি। এই আমিত্বই সবটা শেষ করে দিল।  যে লোক জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড ঘটাল, সেই ছত্রধর মাহাতো এখন দলের সম্পদ। এই সব সিদ্ধান্ত নিয়েই মমতা ব্যানার্জি নিজের বিপদ নিজে ডেকে নিয়ে এলেন।

তৃণমূলে এখন কোনও ইলেকশন মেশিনারি নেই

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবছেন পিকে-কে দিয়ে ভোট জিতবেন, পিকে কি ভোট করাবে না কি? সিপিএম আমাকে কখনও হারাতে পারেনি, কিন্তু সিপিএম থেকে অনেক শিখেছি। কীভাবে সংগঠন করতে হয়, কীভাবে গ্রাসরুট-এ সংগঠন করতে হবে, কীভাবে ভোট করতে হবে, সিপিএম থেকে শিখেছি। মমতা ব্যানার্জির দলে এখন ‘ইলেকশন মেশিনারি’ নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়, একান্ত আলাপে।

আগে বাংলার প্রত্যেকটা গ্রামে ঢোকার মুখে মুখে শনি মন্দির, কালী মন্দির থাকত। এখন গ্রামে গ্রামে হনুমান মন্দির হয়ে গিয়েছে। যেখানে মানুষ চেঞ্জ হয়ে যায়, সেখানে আর কিছু করার থাকে না।

(অনুলিখন: সৌরভ পাল)

 

দেদার বালি পাচার দক্ষিণ দিনাজপুরে, তৎপর প্রশাসন
দেদার বালি পাচার দক্ষিণ দিনাজপুরে, তৎপর প্রশাসন
'কাছেই বাড়ি', এই অজুহাতে হেলমেট পরেন না অনেকেই...বিপদ ঘটলে সেই দায় কা
'কাছেই বাড়ি', এই অজুহাতে হেলমেট পরেন না অনেকেই...বিপদ ঘটলে সেই দায় কা
'তৃণমূলের প্রচারক, ভোটার সবই তো বাংলাদেশ থেকে আসে', বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ
'তৃণমূলের প্রচারক, ভোটার সবই তো বাংলাদেশ থেকে আসে', বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ
'রাশিয়ান বিষ' দিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা, সরকারের দিকে একের পর এক নিশানা অ
'রাশিয়ান বিষ' দিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা, সরকারের দিকে একের পর এক নিশানা অ
শিশুদিবসে কাতর আর্জি কাঞ্চনের! অভিনেতা বললেন,"আমার ছেলে-মেয়েকে..."
শিশুদিবসে কাতর আর্জি কাঞ্চনের! অভিনেতা বললেন,
ড্রাইভারের ভাগ ১২ শতাংশ, কনডাক্টরের ৬! সেই প্রথাই ডেকে আনছে সর্বনাশ
ড্রাইভারের ভাগ ১২ শতাংশ, কনডাক্টরের ৬! সেই প্রথাই ডেকে আনছে সর্বনাশ
গুলি-বোমা-খুনোখুনি, ৫ বছরেও বদলাল না ভাটপাড়ার ছবি
গুলি-বোমা-খুনোখুনি, ৫ বছরেও বদলাল না ভাটপাড়ার ছবি
Shah Rukh Khan: ৩১ বছর পর তৈরি হচ্ছে 'বাজিগর ২', নায়ক কি শাহরুখ?
Shah Rukh Khan: ৩১ বছর পর তৈরি হচ্ছে 'বাজিগর ২', নায়ক কি শাহরুখ?
বাতাসে বারুদের গন্ধ, ৫ বছরেও বদলায়নি ভাটপাড়া!
বাতাসে বারুদের গন্ধ, ৫ বছরেও বদলায়নি ভাটপাড়া!
শুভেন্দু অধিকারীকে 'স্বপ্নের অভিধান' কেনার পরামর্শ কেন দিলেন কুণাল?
শুভেন্দু অধিকারীকে 'স্বপ্নের অভিধান' কেনার পরামর্শ কেন দিলেন কুণাল?