Bijli Mahadev: তুষার আবাসে বিজলি মহাদেবের মন্দিরে কেন ভয়াবহ বাজ পড়ে প্রতিবছর?

পাহাড়ের মাথায় মেঘ জমছে দেখে ওই ব্যক্তি এমনই ভিডিও করছিলেন। হঠাৎই বিরাট এক আগুনের গোলার মতো বজ্রপাত হয় ওই পাহাড়ে যেখানে বিজলি মহাদেব বিরাজ করছেন!

Bijli Mahadev: তুষার আবাসে বিজলি মহাদেবের মন্দিরে কেন ভয়াবহ বাজ পড়ে প্রতিবছর?
ভয়ঙ্কর বজ্রপাতে কেঁপে ওঠে পর্বতস্থিত শিব মন্দির!
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 27, 2021 | 10:53 PM

হিমাচল প্রদেশের বাংলা অর্থ তুষার আবাস। তবে লোকে হিমাচল প্রদেশকে ‘দেবভূমি’ হিসেবেই মান্য করে। রাজ্যটির বেশিরভাগ অংশই পর্বতশ্রেণী, গভীর উপত্যকা, আন্দোলিত জলপ্রপাত ও ঘন সবুজ বন দ্বারা আবৃত। পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ। এই রাজ্য, পশ্চিম থেকে পূর্বে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু। হিমাচলের কলুষমুক্ত হিম বাতাস, রহস্যময় বনরাজির সমাবেশ, বিরাট পর্বত, তুষার গলা জলের পুষ্ট তীব্র নদী যেন প্রকৃতপক্ষেই যে কোনও নশ্বর অক্ষিদ্বয়কে নিয়ে যায় ঈশ্বরের তপোবনে! প্রবল অবিশ্বাসীও বিশ্বাস করতে শুরু করে এখানেই ব্যাঘ্রচর্মে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হয়ে ধ্যান করেন সৃষ্টিকর্তা! সেই ধ্যানে পবিত্র হয়ে ওঠে চরাচর!

বিস্ময়কর হিমাচলে রয়েছে একাধিক রহস্যময় মন্দির। মন্দিরগুলিকে জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য অলৌকিক আখ্যান। এমনই এক বিখ্যাত এবং আশ্চর্য মন্দির হল ‘বিজলি মহাদেবের মন্দির’। কুলু উপত্যকায় বিয়াস ও পার্বতী নদীর সঙ্গম স্থলে উঠে গিয়েছে এক সুউচ্চ পাহাড়। সেই পর্বতের ২৪৬০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে এই বিজলি মহাদেবের মন্দির। কুলু জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরেই স্থাপিত এই মন্দির। ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে উঠতে হয় সেই মন্দিরে। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসও ভারী চমকপ্রদ! কথিত আছে, পুরাকালে এই উপত্যকায় বাস করত কুলান্ত নামে এক দৈত্য। দুষ্টু সেই দৈত্য একবার বিশালাকায় অজগরের রূপ ধারণ করে। এরপর সে নিজের শরীরে দিয়ে বিয়াস নদীতে বাধার সৃষ্টি করে যাতে সেই জল ভাসিয়ে দেয় গ্রামবাসীদের। ভয়ঙ্কর দৈত্যের কার্যকলাপে ভীত ভক্তরা আকুল স্বরে মহাদেবকে স্মরণ করতে থাকে। ভক্তের ডাকে আবির্ভূত হন ভোলেবাবা। ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধে অজগরকে পরাস্ত করেন মহেশ্বর। তারপর নিজের ত্রিশূল দিয়ে বধ করেন কুলান্তকে! বিশালাকায় সেই সাপের আকার নেয় পর্বতের। কুলান্তের নাম থেকেই এই এলাকার নাম হয়েছে কুলু। শোনা যায় ভক্তদের অনুরোধে পাহাড়েই মহাদেব শিবলিঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় চারিদিক। ঘন ঘন বাজ পড়তে থাকে। সকলে ভয় পেলে মহাদেব সকলকে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন তিনি নিজে সকল বিপদ নিজের শরীরে ধারণ করবেন ও ভক্তদের রক্ষা করবেন। বজ্রপাত সেই বিপদেরই রূপক। এরপর সমস্ত বাজ পড়ে শিবলিঙ্গে। শিবলিঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ভক্তেরা এহেন দৃশ্য দেখে লবণ হীন মাখন, ময়দা দিয়ে দ্বিখণ্ডিত শিবলিঙ্গকে ঢেকে দেন। মাখন গললে দেখা যায় শিবলিঙ্গ সত্যিই জুড়ে গিয়েছে! এরপর থেকেই মনে করা হয় প্রতিবছর শিবলিঙ্গের উপর ভয়ঙ্কর বাজ পড়ে ও শিবলিঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তখন মাখন দিয়ে শিবলিঙ্গকে জুড়ে দিতে হয়। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, স্বয়ং মহাদেবই নাকি বজ্রপাতের দেবতা ইন্দ্রদেবকে আদেশ দেন ভক্তদের যেন বজ্রপাত থেকে কোনও ক্ষতি না হয়। তিনি আরও বলেন ১২ বছর অন্তর যেন এই উপত্যকায় একবারই মাত্র ভয়ঙ্কর বজ্রপাত ঘটান ইন্দ্রদেব। সেই বজ্র মহাদেব নিজের শরীরেই ধারণ করবেন। আখ্যান যাই হোক না কেন, প্রতিবছর শিবরাত্রি এবং শ্রাবণমাসে অগণিত ভক্তের সমাগম হয় বিজলি মহাদেবের মন্দিরে। আয়োজন করা হয় মেলারও।

এখন প্রশ্ন হল সত্যিই কি বাজ পড়ে মন্দিরে? ২০২১ সালে হঠাৎই এক ব্যক্তির মোবাইলে ধরা পড়ে আশ্চর্য ঘটনা। সুতীব্র বজ্রপাতের দৃশ্যে হাড় হিম হয়ে যায় প্রত্যক্ষদর্শীর। এই দৃশ্যই ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। আরও বেশি করে বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে ভক্তদের মধ্যে।

আরও পড়ুন: Guru Purnima : হাজার বছর আগে যে গুহায় বসে ব্যাসদেব মহাভারত রচনা করেছিলেন, সেই গুহা কোথায়, জানেন?