IPL 2021: কামিন্স-রাসেল ঝড়েও চেন্নাই অধরা কেকেআরের

চেন্নাই সুপার কিংসের ২২০ তাড়া করতে নেমে কেকেআর থামল ২০২-এ। ১৮ রানে ম্যাচ জিতল চেন্নাই। হার দিয়ে আইপিএল শুরু করলেও পরের ৩ ম্যাচ জিতে লিগ টেবলের মগডালে উঠে পড়ল ধোনির হলুদ জার্সি।

IPL 2021: কামিন্স-রাসেল ঝড়েও চেন্নাই অধরা কেকেআরের
ছবি-টুইটার
Follow Us:
| Updated on: Apr 22, 2021 | 8:26 AM

অভিষেক সেনগুপ্ত

 চেন্নাই সুপার কিংস ২২০ (২০ ওভারে) কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০২ (১৯.১ ওভারে)

২, ৬, ৬, ৬, ৪, ৬! মাত্র ৬ বলে ৩০ রান! এই আইপিএলে সবচেয়ে ঝোড়ো ওভার। মনে হচ্ছিল যেন ওয়াংখেড়েতে বৈশাখী ঝড় উঠেছে! এমন রূদ্রমূর্তি যাঁর, তিনি নাম নীতিশ রানা, শুভমন গিল নন। এমনকি ইওন মর্গ্যানও নন। ইনি প্যাট কামিন্স। আইপিএল তো বটেই, সারা ক্রিকেট দুনিয়া যাঁকে পেস বোলার হিসেবেই চেনে। সেই কামিন্সই কিনা প্রায় পাল্টে দিচ্ছিলেন ম্যাচের গল্প।

চেন্নাই সুপার কিংসের ২২০ তাড়া করতে নেমে কেকেআর থামল ২০২-এ। ১৮ রানে ম্যাচ জিতল চেন্নাই। ওয়াংখেড়েতে বলা হয়, রান তাড়া করেই ম্যাচ জেতা সহজ। কিন্তু রানের পাহাড় গড়লে যে কোনও ম্যাচ জেতা যায়। তা যতই কামিন্সের মতো কেউ শেষ দিকে রোমাঞ্চকর ব্যাটিং করুন। হার দিয়ে আইপিএল শুরু করলেও পরের ৩ ম্যাচ জিতে লিগ টেবলের মগডালে উঠে পড়ল ধোনির হলুদ জার্সি।

শেষ দু’ওভারে দুটো রান আউটই কি পাল্টে দিল ম্যাচের গল্প? উত্তর হ্যাঁ এবং না। নন স্ট্রাইক এন্ডে যিনি দাঁড়িয়ে, তিনি বাড়তি সময় পান। মারমুখী কামিন্সকে স্ট্রাইক দেওয়ার দায়িত্বটা নিতে হত বরুণ চক্রবর্তী, প্রসিধ কৃষ্ণাদের। ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, কামিন্সই ছক্কা বন্যায় তোলপাড় করে দিচ্ছিলেন ওয়াংখেড়ে। শুধু ১৫তম ওভারেই নয়, স্যাম কারানের ১৯তম ওভারেও মারলেন পাগল করা ছক্কা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২০ রান। বোলার শার্দূল ঠাকুর। কিন্তু প্রথম বলেই রান আউট হয়ে গেলেন প্রসিধ।

এত দিন আইপিএলে আরসিবির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২০৬ তাড়া করে জিতেছিল কেকেআর। বুধবার নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারত নাইটরা। অন্তত সে দিকেই যেন গড়াচ্ছিল ম্যাচ। হতে হতেও হল না। ৩৩ বলে ৬৫ করে নট আউট থেকে গেলেন কামিন্স। আইপিএল তো বটেই, কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ রান। বল হাতে দিয়েছিলেন ৫৮ রান। সেটাই যেন ব্যাট হাতে পুষিয়ে দিয়ে গেলেন, ৩৪ বলে নট আউট ৬৬ করে। আক্ষেপ থেকে গেল তাঁর, ম্যাচটা জেতাতে পারলেন না টিমকে।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংসের মতো টিমগুলো কেন আইপিএলে এত সফল? দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন প্লেয়াররা। অলরাউন্ডারদের ভিড়। ম্যাচ উইনারদের লম্বা লা-ই-ন! সেই কারণেই যে কোনও মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ায় টিম। গতবার সাফল্য না পাওয়া ধোনির টিম আইপিএল ১৪-তে তাই এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। কেকেআরের বিরুদ্ধে বুধ-সন্ধেয় যেন অন্য মোড়কের ক্রিকেট খেলতে নেমেছিল সিএসকে। ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে এই প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ধরা হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের পাহাড়। কিন্তু আইপিএলে সে ভাবে খুঁজে পাচ্ছিলেন না নিজেকে। নাইটদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠলেন। ৪২ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে ঝড় বইয়ে দেওয়ার কাজটা শুরু করেছিলেন তিনিই। শেষটা করলেন ফাফ দু প্লেসি। ৬০ বলে নট আউট ৯৫ রানের ইনিংস। ৯টা চার আর ৪টে ছয় দিয়ে ভিত গড়েছিলেন চেন্নাইয়ের। এবং, অনেক দিন পর ধোনিকে যেন ধোনির মতো দেখাল। নামলেন চার নম্বরে। করে গেলেন ৮ বলে ১৭।

২২১ তাড়া করার চাপ প্রথম থেকেই থাকে। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হয়। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে হয়। নীতিশ, শুভমন, রাহুল, মর্গ্যান, নারিন— পর পর ফিরতেই স্কোর বোর্ডে ৩১/৫। দীপক চাহার ৪ উইকেট ভেঙে দিয়েছেন নাইটদের মেরুদণ্ড। সেখান থেকে হঠাৎই পাল্টে গেল খেলাটা। সৌজন্যে দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেল আর প্যাট কামিন্স। রাসেল ২২ বলে ৫৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন। ৬টা ছয়, ৩টে চার দিয়ে যখন ইনিংস সাজাচ্ছিলেন, ভয় ধরে গিয়েছিল ধোনিদের। স্যাম কারান তাঁকে ফেরান। কিন্তু কার্তিক কেকেআরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করে যাচ্ছিলেন। ২৪ বলে ৪০ করে প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ফিরতেই কামিন্স শো ওয়াংখেড়েতে।

আরও পড়ুন:IPL 2021: ধোনি-রোহিতদের ক্লাবে কার্তিক

কিছু খেলা এমনই হয়। অবিশ্বাস্য চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে ধরা যায় না। কেকেআর যেমন লড়ল। ধোনির চেন্নাই যেমন অধরাই থাকল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: চেন্নাই সুপার কিংস ২২০ (দু প্লেসি নট আউট ৯৫, ঋতুরাজ ৬৪, মইন ২৫, বরুন ১/২৭, রাসেল ১/২৭, নারিন ১/৩৪)। কলকাতা নাইট রাইডার্স (রাসেল ৫৪, কার্তিক ৪০, কামিন্স , দীপক ৪/২৯, এনজিডি ৩/২৮)।