Cricket: যে ভাবে ‘রাজার’ খেলা থেকে রঙিন হল ক্রিকেট, বদলে দিল দিশা

অভিষেক সেনগুপ্ত | Edited By: দীপঙ্কর ঘোষাল

Jan 10, 2024 | 8:00 AM

Evolution of Cricket: এ যেন অনেকটা ফরাসি বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ। কিংবা জারতন্ত্রের অবসান ঘটানো রুশ বিপ্লব। যা কিছু কুক্ষিগত, অভিজাত, কিছু মানুষের জন্য বরাদ্দ, তাই একসময় ছিনিয়ে নিতে চায় মানুষ। অধিকারের জন্ম বোধ হয় সেখান থেকেই হয়। হয় বলেই গণঅভ্যুত্থান মনে থেকে যায়, চিরকালের জন্য। ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও কি তা বলা যায়? হয়তো। পুরোপুরি না হলেও একচিমটে স্ফুলিঙ্গ এতেও তো রয়েছে।

Cricket: যে ভাবে রাজার খেলা থেকে রঙিন হল ক্রিকেট, বদলে দিল দিশা
Image Credit source: TV9 Bangla Graphics

Follow Us

 

অভিষেক সেনগুপ্ত

রাজকীয়তায় মোড়া ছিল সাদা পোশাক আর লাল বলের ক্রিকেট। চোস্ত ইংরেজি বুলিতেই সন্তুষ্ট ছিল সে। সূর্য মধ্যগগনে পা রাখার আগেই লাঞ্চ পছন্দ ছিল তার। ভাঙা দুপুরে টি-ব্রেক। নীল বা কালো বর্ডার দেওয়া সোয়েটারে শীতযাপন করত সে। বেতের চেয়ারে নরম রোদে পা সেঁকত। রাজকীয় মসনদ থেকে ক্রিকেট কী ভাবে ঢুকে পড়ল আম জনতার ঘরে? পকেটে রুমাল রেখে টেস্ট খেলতে ভালোবাসত যে, ক্ষমা-ঘেন্না করে একটু-আধটু ওয়ান ডে, সেই ক্রিকেট রাতারাতি চরিত্র বদলে ফেলল কেন? নাক উঁচু ইংরেজ খেলা রঙিন পোশাক, নৈশালোক ছাপিয়ে সরাসরি চিয়ার লিডারদের জুড়ে ফেলল কেন? কোন আগ্রাসনে ওয়ান ডে ইতিহাসের পাতায় জায়গা নিতে চাইছে? আদি-অনন্ত টেস্ট ক্রিকেট ২-৩ দিনের বেশি গড়াতে ভয় পাচ্ছে কেন? কী ভাবে জন্ম হল এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের? TV9Bangla Sports তুলে ধরল এমন কিছু গল্প, যা অনেকেই হয়তো জানেন না। পড়ে দেখুন তো…

সে যেন অভিজাত তাকমাতেই সন্তুষ্ট ছিল। সাদা শার্ট আর প্যান্টে ধরা থাকত কৌলিন্য। গাল ভরা জেন্টলম্যান্স গেম। বাংলায় আদর করে ভদ্রলোকের খেলা কতটা বলা হয়েছে, সন্দেহ আছে। বরং একটু দূরত্ব রেখে আমজনতা বলেছে, বড়লোকের খেলা! বড় লোকের তো বটেই! বিধি, নিয়ম, শৃঙ্খলায় এত মোড়া থাকলে লোকে ভয়ই তো পাবে! যত্রতত্র খেলা সম্ভব নয়। মাপ মতো ঘাস কেটে, পিচ বানিয়ে তবে খেলতে হয়। বল গড়ানোর আগেই যে খেলার জন্য খরচ করতে হয়, তা কি খেলা যায়? চামড়া আর সুতোয় বাঁধা লালচে বলের দাম জোগানোই কঠিন। ইংলিশ উইলো ছাড়া ভালো ব্যাট হয় না। তার দামও যে আকাশ ছোঁয়া। দরকার প্যাড, গ্লাভস, থাইগার্ড, হেলমেট, কিপিং গ্লাভস…! উপসসস! গরীব লোক এত পাবে কোথায়? ক্রিকেট যদি খেলতে হয়, রাজা-মহারাজা হতে হবে। জমিদারি চাই। নিদেন পক্ষে বেশ বড় মাপের ব্যবসায়ী হতে হবে। তাতেও কি ক্রিকেটের ভ্রুকুটি থামবে? ফ্যামিলি স্ট্যাটাস না থাকলে ক্লাবের মেম্বারশিপই জোটে না, ক্রিকেট কি খেলবে?

এ যেন অনেকটা ফরাসি বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ। কিংবা জারতন্ত্রের অবসান ঘটানো রুশ বিপ্লব। যা কিছু কুক্ষিগত, অভিজাত, কিছু মানুষের জন্য বরাদ্দ, তাই একসময় ছিনিয়ে নিতে চায় মানুষ। অধিকারের জন্ম বোধহয় সেখান থেকেই হয়। হয় বলেই গণঅভ্যুত্থান মনে থেকে যায়, চিরকালের জন্য। ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও কি তা বলা যায়। হয়তো। পুরোপুরি না হলেও একচিমটে স্ফুলিঙ্গ এতেও তো রয়েছে। একচিলতে বিদ্যুতের রেখার মতো ঝলক তো দেখেওছে অতীতে। না হলে যুগ বদলের ডাক উপেক্ষা করা গেল না। আসলে, ক্রিকেটও চেয়েছিল বদলাতে। বদল না হলে প্রাসঙ্গিক থাকবে না যে!

এই বদলের ডাক হঠাৎ শুনতে পেলেন কে? ১৯৯২ সালে যিনি দীপক প্যাটেলকে দিয়ে ওয়ান ডে-তে বোলিং ওপেন করে ক্রিকেট বিজ্ঞানটাই বদলে দিয়েছিলেন। ডেনিস লিলি, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিংদের সেরা সময়ে যিনি অবলীলায় সেঞ্চুরি করতে পারতেন। যাঁর হাত ধরে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট মাথা উঁচু করে হাঁটতে শুরু করেছিল। সেই মার্টিন ক্রো-ই জন্ম দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ঠিক আজকের চেহারায় না হলেও একটা ছাঁদ তৈরি করে দিয়েছিলেন, যে পথে হাঁটার সাহস জুগিয়েছিলেন ক্রো-ই। ক্রিকেট ম্যাক্স চালু করেছিলেন কিংবদন্তি কিউয়ি। ছোট মাপের ক্রিকেট চালুর করার পাশাপাশি ফ্রি-হিট দিয়ে সাজিয়েছিলেন রোমাঞ্চকর খেলা। তিনি নিজে কী ভাবতেন ওই ক্রিকেট নিয়ে? ক্রো-র কথায়, ‘আমার মনে হয়েছিল, টিভিতে যাঁরা দেখেন, যে সব সমর্থক মাঠে আসেন, তাঁদের জন্য ক্রিকেটকে আরও ছোট করার সময় এসেছে। খুব রঙিন করে তুলতে হবে। কিছু মূল্যবোধও রেখে দিতে হবে। সেই কারণেই ক্রিকেট ম্যাক্স সাজিয়েছিলাম।’

১৯৯৬ সালে যে কথা বলে গিয়েছেন মার্টিন ক্রো, সেই পথে হাঁটতে আরও ১০টা বছর লাগবে ক্রিকেটের। তাও হত না হয়তো, যদি না স্টুয়ার্ট রবার্টসনের মতো মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ থাকতেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের। ততদিনে কাউন্টি ক্রিকেট গুরুত্ব হারাতে শুরু করেছে। গ্যালারিতে লোক কমছে। আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে কাউন্টি। বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ শেষ হওয়ার পর নতুন কিছু দরকার ছিল। যা চাঙ্গা করবে ক্রিকেট অর্থনীতিকে। ক্রিকেটকে আবার আলোয় ফেরাতে বুদ্ধিমান স্টুয়ার্ট নিউজিল্যান্ডের দিকেই তাকিয়েছিলেন। আরও ভালো করে বলতে গেলে মার্টিন ক্রো-র নয়া ক্রিকেট লিগ। ২০০৩ সালে তৈরি হয়ে গেল টি-টোয়েন্টির নতুন নিয়ম। কাউন্টিতে পা রাখল নতুন লিগ।

খেলা অনেকটা হাওয়ার মতো। মাঝে মাঝেই দিক বদলে ফেলে। আসলে খেলাও খোঁজে মুলুক, নতুন দর্শক। যার বুকে নিশ্চিন্তে জায়গা করে নেবে। টি-টোয়েন্টি লিগের মতো। নিউজিল্যান্ডে শুরু হল যা, তাই ইংল্যান্ডে পেল নতুন পরিচিতি। আর তাই ভারতে এসে সুপারহিট। স্রেফ ক্রিকেট দিয়ে অর্থনীতি তৈরি করা যায়, আইপিএল না হলে কে জানত?

Next Article