
রক্তিম ঘোষ
কলকাতা: দুপুর তখন দুটো বাজতে দশ। ইডেনের মূল ফটকের বাইরে প্রায় শখানেক দর্শক। টিকিটের খোঁজে অবশ্যই। তার মাঝেই তাঁদের কানে গেল খবর, একটু পরেই আসছে পাকিস্তান টিম বাস। ব্যস, গেট ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। কিন্তু দলের নাম যেহেতু পাকিস্তান, তাই নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি থাকা স্বাভাবিক। মূল গেট থেকে কিছুটা দূরে সরানো হল সমর্থকদের। তার কিছু পরেই একেবারে হুটার বাজিয়ে ঢুকলেন বাবর আজমরা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
প্রথমে পুলিশের বড় ভ্যান। ভর্তি পুলিশ। তারপর পাইলট কার। আর তার ঠিক পেছনে বাবরদের টিম বাস। তার পেছনে নিয়মমাফিক ডামি বাস। বাসের দরজা খুলতেই প্রথমে উৎসুক মুখদের মাথা উঁচিয়ে খুঁজে বেড়ানো। শাহিন আফ্রিদি নামতেই হৈহৈ রব। ‘সিগনেচার’মুচকি হেসে ড্রেসিংরুমের পথে পাক ফাস্ট বোলার। দ্বিতীয় যাঁকে নিয়ে হৈহৈ হল তিনি, মহম্মদ রিজওয়ান। হাত নাড়িয়ে গ্রহণ করলেন সেই দর্শকদের অভ্যর্থনাও। কিন্তু লাইমলাইটের সবটা শুষে নিলেন একজন। তিনি বাবর আজম।
দল ছন্দে নেই। তাঁর অধিনায়কের চেয়ার টলমল। ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনা। ব্যাট হাতে তিনি রান পাচ্ছেন বটে। কিন্তু তাতে তো ‘জল গরম হচ্ছে না’। শেষ ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। কিন্তু তাতেও বাবরকে ঘিরে সেদেশে ক্ষোভ বিন্দুমাত্র কমেছে বলে মনে হয় না। অন্তত ইডেনে আসা পাক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে তেমনই তো ইঙ্গিত মিলল। তবে বাবর বাস থেকে নামতেই, ইডেন যে গগনভেদী চিৎকার শুনল। তা অনেকদিন মনে রাখবেন পাক অধিনায়ক।
‘বাবর, বাবর’…চিৎকার। এই জোরালো অভ্যর্থনা বোধ হয় আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। ইডেনের মূল গেটে ঢোকার পরেই থমাকেলন ক্ষণিকের জন্য। কাঁধে সবুজ ব্যাগ। স্থানীয় ম্যানেজারের সঙ্গে অবশেষে হাত মিলিয়ে ঢুকলেন ড্রেসিংরুমে। বাবরকে ঘিরে এই উন্মাদনা দেখে অনেকেই খানিকটা অবাক হতে পারেন। কিন্তু তাঁদের পিছিয়ে যেতে হবে পূর্ব পরিসংখ্যানে। আসলে ইডেন যে পাকিস্তানকে কোনওদিন খালি হাতে তেমন ফেরায়নি। অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে। নন্দনকাননে মাত্র একবারই একদিনের ম্যাচ হেরেছে পাকিস্তান। ২৬ বছর আগে। ১৯৯৭ সালে বিশ্বজয়ী শ্রীলঙ্কার কাছে হার হয়েছিল পাকিস্তানের। ব্যস, ওই একবারই। তার আগে বা পরে যতবার ইডেনের মখমলের মত মাঠে নেমেছে সবুজবাহিনী। আরও রঙিন হয়ে ফিরেছে সাফল্যের সৌজন্যে।
পরিসংখ্যান দেখুন, ১০ বছর ১০ মাস আগে শেষবার ইডেনে খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেই ম্যাচেও শেষ হাসি হেসেছিল পাকিস্তানই। নাসির জামশেদ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সেই ম্যাচে হয়েছিলেন নাটক। শেষ টি২০ ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান ৭ বছর আগে। সেবার ইডেনে তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। একেবারে কোনঠাসা করে ম্যাচ পকেটে পুড়েছিল পাকিস্তান। যে শহর তাদের খালি হাতে ফেরায় না। সেই শহর তো যুদ্ধের আগের দিন পাকিস্তানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে, তা আর নতুন কী!