রক্তিম ঘোষ
কলকাতা: ক্রিকেট ভাগ্য অন্বেষণে উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। এরপর ডালহৌসি ক্লাবে কিছুদিন। তারপর দীর্ঘদিন টাউন ক্লাবে। ভারতীয় দলের জার্সি যখন পরব পরব অবস্থা, তখন যোগ মোহনবাগানের ক্রিকেট ক্লাবে। ততদিনে সামি হয়ে উঠেছেন বাংলা রঞ্জি দলের নির্ভরযোগ্য একটা নাম। আগুন ঝড়াচ্ছেন পিচে। তবে টাউন ক্লাবের শুরুর দিনগুলো ছিল বোলার সামির তৈরি হওয়ার দিন। যা সামনে থেকে দেখেছেন সিএবি কর্তা দেবব্রত দাস। যিনি আবার টাউন ক্লাবের শীর্ষকর্তাও বটে। বিশ্বকাপে সামির ইতিহাস দেখে আবেগপ্রবণ ময়দানের দেবুদা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
মুম্বইতে ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ইতিহাস। কলকাতায় সামির ‘অভিভাবক’ দেবব্রত দাস এখন অপেক্ষায় ফাইনালে আরও একটা ইতিহাসের জন্য। তার আগে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের সামনে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন দেবব্রত। ‘ডালহৌসির হয়ে একটা ম্যাচ খেলছিল সামি। দেখেই ভাবলাম একে আমার লাগবে। পরের মরসুমেই নিলাম টাউনে। প্রতি ম্যাচে সামির পারিশ্রমিক তখন মাত্র ১০০টাকা। মরসুমের চুক্তির অর্থ ৭০ হাজার টাকা। তারপর তো…’, আবেগে গলা ধরে আসছিল দেবব্রত দাসের। আবার শুরু করলেন গল্প, ‘বাড়িতে এনে রেখেছিলাম। কত লোক কত কথা বলল। বাড়িতেও আপত্তি ছিল। অথচ, একটা সময় পর আমার বাড়িতে সামিই হয়ে উঠল প্রিয় সদস্য।’
ময়দানে দেবব্রত দাসের পরিচিতি, পেসার খোঁজার পারদর্শিতার জন্য। দেবব্রত নিজেই বলেন, পেসার খোঁজা তাঁর নেশা। সামি এতদূর যাবে, ভাবতে পেরেছিলেন? প্রশ্ন থামিয়ে, ‘বিশ্বাস কর, প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল, এ অনেক দূর যাবে। একদিন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বললাম, বোলারটাকে দেখো। মাধু দা (সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাক নাম) দেখেই বলল, দেবু এ তো ইন্ডিয়া খেলার মেটেরিয়াল রে!’ তারপর, কলকাতার ‘অভিভাবক’ শুরু করলেন লালন পালন।
সামিকে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস ধরানো দেবব্রত দাসের। কলকাতায় থাকার সময় সামিকে চুটিয়ে ইলিশ মাছ খাইয়েছিলেন। তবে এখন সামির অনেক রুটিন জীবন। নিয়মিত ব্যায়াম। পরিমিত খাবার। ডায়েট। সামি এখন যেন সামি ২.০।
বদলে যাওয়া সামিকে কেমন দেখেন? দেবব্রত থামিয়ে বললেন, ‘সামি কিন্তু খুব বদল হয়নি। হয়তো নিয়ম কিছু মানছে। তোমায় বলি, ২০২১ ইংল্যান্ড সিরিজ। আমি ভারতীয় দলের ম্যানেজার হয়ে গিয়েছি। লন্ডনে টিপু সুলতান নামে একটা রেস্তোঁরা আছে। আমি আর সামি যেতাম প্রায়ই। বিরিয়ানি খেতে। সেই সিরিজে, বিরাট আমাকে দেখলেই সামিকে বলত, দেখ তেরা বাপ আয়া!’ গড়গড় করে বলছিলেন দেবব্রত দাস।
সেই সিরিজ নিয়ে গল্প করতে করতে দেবব্রত দাস বললেন এক অজানা গল্প। ‘হঠাৎ বিরাট কোহলি এল সামির কাছে। ব্যাগ থেকে বের করল সামির জন্য একজোড়া মোজা। সামিকে আসলে ভীষণ ভালবেসে যে বিরাট!’ সে আর বলতে! সামি উইকেট নিলেই বিরাটের যা অভিব্যক্তি, যা উচ্ছ্বাস! দেখেছে তো গোটা দুনিয়া!
কাকতলীয় বিষয় হলেও, একটা ঘটনা যে ঘটেছে এই বিশ্বকাপে। চলতি বিশ্বকাপে যেখানে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির নাম সামি, সেখানে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী কে? তিনি তো বিরাট কোহলি!