
ক্যাপ্টেন। শব্দটার মধ্যে অনেক দায়িত্ব থাকে। সেখানেই যেন হেরে গেলেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। গত বার আইপিএলে অভিষেক হয়েছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের। প্রথম বারই প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছিল। এ বার টুর্নামেন্টের মাঝপথেই ছিটকে যান লখনউ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ক্রুনালের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় বার প্লে-অফও নিশ্চিত করে। তবে এলিমিনেটরের মতো মরণ বাঁচন ম্যাচে তাঁর কিছু ভুল সিদ্ধান্তেই লজ্জার হার লখনউ সুপার জায়ান্টসের। অন্য দিকে, রোহিত শর্মা। আইপিএলের সবচেয়ে সফল দল মুম্বই। পাঁচ বারই রোহিতের নেতৃত্বে ট্রফি জিতেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। গত মরসুমে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে খেলেছে মুম্বই। হতাশাজনক ফল হয়েছিল। এ বারও শুরু ভালো হয়নি। কোনওরকমে প্লে-অফে। কিন্তু দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কোয়ালিফায়ারেও জায়গা করে নিল মুম্বই। তরুণরাই মুম্বইয়ের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন। ম্যাচ শেষে কী বললেন দুই অধিনায়ক? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। চিপকের পিচে স্পিনাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন। রান তাড়া করা খুবই কঠিন। আগের দিন গুজরাট টাইটান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচেও তাই দেখা গিয়েছে। ফলে প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে রাখতে না পারলে কঠিন। ক্রুনাল পান্ডিয়া এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কুইন্টন ডি’ককের মতো অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটারকে দলেই রাখলেন না! বোলিং ওপেন করলেন লখনউ অধিনায়ক নিজেই। এই মাঠে কী ভাবে বোলিং করতে হয় একদিন আগেই তা দেখিয়ে দিয়েছেন সিএসকের বাঁ হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা। ক্রুনাল পান্ডিয়ার দিশাহীন বোলিং ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় লখনউকে। ৪ ওভারে ৩৮ রান দেন তিনি। উইকেটের কলাম শূন্য।
ব্যাটিংয়েও গলদ। বোর্ডে ১৮৩ রানের বিশাল লক্ষ্য। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে ওপেন করেন প্রেরক মানকড়। জুটি ভাঙতেই ক্রিজে ক্রুনাল। অথচ ছন্দে থাকা মার্কাস স্টইনিস ছিলেন। কিংবা টপ অর্ডারে নামার মতো দীপক হুডাও ছিলেন। দুই ওপেনার ফিরতেই নামানো স্টইনিসকে। ক্রুনালের দায়িত্ব ছিল ইনিংস অ্যাঙ্কর করা। কেন না, উল্টোদিক থেকে রানের গতি ভালো রেখেছিলেন স্টইনিস। যদিও ক্রুনাল করলেন উল্টো। ১০ বলে ৮ রান করার পরই হঠকারী সিদ্ধান্ত। পীযুষ চাওলার বলে তুলে মারতে গিয়ে টিম ডেভিডের ক্যাচে ফিরলেন ক্রুনাল। ৬৯-২ স্কোরে ক্রুনালের সেই শট থেকে ১০১ রানে অলআউট লখনউ। একা কুম্ভ স্টইনিস। ম্যাচ শেষে ক্রুনাল পান্ডিয়া বলেন, ‘আমি তখন ওই শটটা না খেললে এমন বিপর্যয় হত না। এই হারের সমস্ত দায় আমার।’ কুইন্টনকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত যে কত বড় ভুল ছিল সেটাও স্বীকার করে নিলেন। ৮১ রানের হারে টানা দ্বিতীয় বার প্লে-অফেই বিদায় লখনউয়ের।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স গত মরসুমে ১০ দলের টুর্নামেন্টে দশম স্থানে শেষ করেছিল। তরুণদের ওপর ভরসা হারাননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এই ম্যাচেও ভরসা দিলেন সেই তরুণরাই। মুম্বই হয়তো ১৫০ রানেই আটকে যেতে পারত। তবে দুই তরুণ ব্যাটার তিলক ভার্মা, নেহাল ওয়াদেরার ক্যামিও ইনিংস তাদের বড় রানে পৌঁছে দেয়। বোলিংয়ে তেমনই এ বারই আইপিএল অভিষেক হওয়া আকাশ মাধওয়াল। মাত্র ৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট। ফিল্ডিংয়েও অনবদ্য মুম্বই। তিনটি রানআউট করল মুম্বই। কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত হওয়ার পর অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘জানতাম আমরা পারব। আকাশ গত মরসুমেও আমাদের সঙ্গে ছিল। খেলার সুযোগ পায়নি। তরুণদের ওপর ভরসা রেখেছি। আত্মবিশ্বাস ছিল, আকাশ পারবে।’
মুম্বই অধিনায়ক তরুণ ক্রিকেটারদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ওরা যে দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সেই অনুভূতিটা দিতে হবে। ওরা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে। তবে আইপিএল পুরোপুরি আলাদা। ওদের সেই স্পেশাল ফিল করানোটা জরুরি। অধিনায়ক হিসেবে আমার দায়িত্বই হল, মাঠে ওরা যাতে স্বচ্ছন্দ থাকে, সেটা দেখা। বুমরা, হার্দিকরাও এভাবেই স্টার হয়েছিল। কয়েক বছর পর হয়তো সকলেই বলবে, আরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে তো প্রচুর স্টার প্লেয়ার।’