রুটের স্পিন মন্ত্রই সাফল্যের চাবিকাঠি

রুট যখন ডাবল সেঞ্চুরির পথে বেশ কয়েকজন বন্ধু জানতে চাইছিল, স্পিনের বিরুদ্ধে এতটা সাবলীল কীভাবে রুট? উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচে স্পিন খেলতে গেলে দু'টো অস্ত্র লাগে। প্রথমটা সুইপ। দ্বিতীয়টা কাট শট। এই দু'টো শটের ক্ষেত্রে টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামনে পিছনে যখন ফিল্ডার থাকে, তখন স্পিন সামলানোর জন্য দরকার পড়ে সাহস। রুট এই মন্ত্রে দীক্ষিত।

রুটের স্পিন মন্ত্রই সাফল্যের চাবিকাঠি

|

Feb 06, 2021 | 8:06 PM

                                                                              ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস- ৫৫৫/৮

 

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

উপমহাদেশের উইকেটে সফল হওয়ার মন্ত্র কী? অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলো যখনই পা দেয় ভারতে, এই প্রশ্নের উত্তরই খোঁজে। সোজা কথায়, স্পিন বোলিং খেলার স্কিলটা অর্জন করতে হয়। সেটা থাকলে ভারতের পিচে সে রান পাবেই। জো রুট যেমন।
রুট যখন ডাবল সেঞ্চুরির পথে বেশ কয়েকজন বন্ধু জানতে চাইছিল, স্পিনের (Spin)বিরুদ্ধে এতটা সাবলীল কীভাবে রুট? উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচে স্পিন খেলতে গেলে দু’টো অস্ত্র লাগে। প্রথমটা সুইপ। দ্বিতীয়টা কাট শট। এই দু’টো শটের ক্ষেত্রে টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামনে পিছনে যখন ফিল্ডার থাকে, তখন স্পিন সামলানোর জন্য দরকার পড়ে সাহস। রুট(Joe Root) এই মন্ত্রে দীক্ষিত। ওর ব্যাটিংয়ের সময় দেখছিলাম পেস বোলারদের ৩-৪টের বেশি বাউন্ডারি মারেইনি। স্পিনারদের ক্ষেত্রে সেটা অনেক বেশি। বোঝাই যায়, শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই রুট ভারতের পিচে সাফল্যের ‘রুট’ তৈরি করেই এসেছিল।
যেমন বুঝতে পারছি, ইংল্যান্ড হোমওয়ার্ক করে ভারতে খেলতে এসেছে। গতকালই বলেছিলাম রুটকে যত তাড়াতাড়ি ফেরাতে পারবে তত মঙ্গল ভারতের। সেই রুটই বাধা হয়ে দাঁড়াল। গতকাল সিবলে আর আজ বেন স্টোকসকে( Ben Stokes) নিয়ে যে ইনিংসটা খেললেন তা এককথায় অসাধারণ। শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি। এ এক অনন্য কৃতিত্ব। ইতিমধ্যে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নিজের নাম খোদাই করে ফেলেছে। অধিনায়ক রুটও নিজেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল। গলের ২২ গজে বল রাইট অ্যাঙ্গেল টার্ন করছিল। সেখানে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল। এই উইকেটে খেলতে তাই কোনও অসুবিধেই হয়নি রুটের। গতকালের খেলা শেষে রুট বলেছিল, ওদের টার্গেট কমপক্ষে ৬০০ রান। সেটা একরকম কাজে করে দেখিয়ে দিল ওরা। শুধু হোমওয়ার্ক নয়, ওদের আত্মবিশ্বাসও চূড়ায় রয়েছে। ভারতের কোনও বোলারই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না। শ্রীলঙ্কার মাঠে খেলার সুবিধেকে এখানে পুরোপুরি কাজে লাগাল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।
মাথায় রাখতে হবে ইংল্যান্ড এখনও অলআউট হয়নি। আগামীকাল দ্রুত ওদের ইনিংস শেষ করাই প্রাথমিক লক্ষ্য ভারতীয় বোলারদের। স্কোরবোর্ডে সাড়ে পাঁচশোর উপর রান উঠে গিয়েছে। কমপক্ষে ৫৭৫ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডকে বেধে ফেলা উচিত। দেড় বছর চিপকের ২২ গজে বল গড়ায়নি। তাই উইকেটে কোনও বাউন্সও হচ্ছে না, বল টার্নও করছে না। খেলা যত গড়াচ্ছে, উইকেট ততই মন্থর হচ্ছে। ফলে এই উইকেটে রান করা সহজ হবে না। বল অনেকটা গতিতে আসবে, সেই প্রত্যাশা না রাখাই ভালো। তবে এই উইকেটে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে জোফ্রা আর্চার(Jofra Archer)। ও একটু অন্য ধরণের বোলার। সাধারণত ওর বোলিংয়ের জন্য পিচের সাহায্য লাগে না। আর্চার হাওয়ায় সুইং করাতে পারে। তাই আগামীকাল ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত ফলো-অন এড়ানো। তারপর বড় স্কোরের দিকে এগনো উচিত। তবে রানের পাহাড়ে উঠতে হলে, ভারতের কাউকে রুটের মতো ইনিংস খেলতে হবে। শুধু তাই নয়, মজবুত পার্টনারশিপও প্রয়োজন। কারণ শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালে ভারত কিন্তু চাপে পড়ে যাবে। তাই আগামীকাল ভারতকে ভালো ব্যাটিং করতে হবে।
উইকেট দেখে আমি আশাবাদী নই। তাই এই টেস্ট ড্রয়ের পথেই এগোচ্ছে। যদিও ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। কখন কি হবে তা কেউ বলতে পারে না। বিশাল কোনও অঘটন না ঘটলে চিপকে প্রথম টেস্ট যে ড্র হবে তা ধরে নেওয়াই যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস- ৫৫৫/৮ (জো রুট ২১৮, সিবলে ৮৭, স্কোকস ৮২, ইশান্ত ২/৫২, বুমরা ২/৮১)