Emami East Bengal: ‘মা মোহনবাগানি, বাবা ইস্টবেঙ্গলের ভক্ত’, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে লাল-হলুদের মহিলা সিইও
Namrata Parekh: কলকাতা ময়দানে কি মহিলা প্রশাসক দেখা গিয়েছে? হাতে গোনা। মোহনবাগান কিংবা ইস্টবেঙ্গলে? কার্যকরী সমিতিতে কখনও সখনও কেউ হয়তো এসেছেন। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে একেবারেই নয়। যা কখনও দেখা এ বার তাই হতে চলেছে। ইমামি-ইস্টবেঙ্গলের নতুন সিইও হিসেবে যোগ দিতে চলেছে নম্রতা পারেখ। আপাদমস্তক খেলার দুনিয়ার মেয়ে। আদ্যপান্ত ফুটবল পরিবারের মেয়ে।

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতার ফুটবলে বিপ্লব? বিপ্লবই বটে। ইমামি ইস্টবেঙ্গল (Emami East Bengal) ফুটবল ক্লাবের সিইও (CEO) হলেন এক মহিলা। নাম নম্রতা পারেখ (Namrata Parekh)। তাঁর বাবার নাম মহেশ পারেখ, যিনি আবার ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। আর মা নাম নীতা পারেখ আপাদমস্তক মোহনবাগানি। এ হেন মেয়েকে নিয়ে হইচই তো পড়বেই। ইমামির তরফে নতুন সিইওর নাম ঘোষণার পর শুরু হয়ে যায় নম্রতার খোঁজ। কে এই নম্রতা পারেখ? কেনই বা তাঁকে এত বড় দায়িত্বে আনল ইমামি ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাব? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হঠাৎ করে ফুটবল দুনিয়ায় পা দেননি তিনি। ভারতীয় খেলাধূলার সঙ্গে বেশ ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে নম্রতা। তাই কলকাতায় বড় হয়ে ওঠা নম্রতাকেই সিইও বেছে নেওয়া হয়েছে। সিইও হওয়ার ঘণ্টাখানের মধ্যেই TV9 Banglaকে দিলেন এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন: আপনি তো ভারতীয় ফুটবলে বিপ্লব এনে ফেললেন! ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে ফুটবলের সিইও কি ভাবে হলেন?
নম্রতা: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমার সিইও হওয়াতে ভারতীয় ফুটবলে একটা বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। এটুকু বলতে পারি, সঠিক মানুষের হাতেই দায়িত্ব এসেছে। আমি তো এই দায়িত্ব সামলাতে পুরোপুরি তৈরি।
প্রশ্ন: ফুটবল প্রশাসনে সে ভাবে মেয়েদের দেখা যায় না। সে দিক থেকে ধরলে তো…
নম্রতা: ছেলে আর মেয়েদের জন্য কোনও ক্ষেত্রেই আলাদা দৃষ্টিকোণ তৈরি হয় না। আমি যে কাজে যুক্ত হয়েছি, সেটা একটা লিডারশিপ রোল। সবাইকে নিয়ে টিম হিসেবে কাজ করব। দুটো দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রথমটা টেকনিক্যাল। যেখানে ভালো মানের ফুটবলারদের নিয়ে একটা অসাধারণ দল তৈরি হয়েছে। বিশ্বমানের কোচ টিমের দায়িত্বে। আমাদের দলের বিশেষজ্ঞরা এই দিকটা দেখছেন। এই পুরো বিষয়টা ঠিক মতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করতে হবে। দুই, ব্র্যান্ড বিল্ডিং আর রেভিনিউ হ্যান্ডেল। এখানে কিন্তু ছেলে কিংবা মেয়েদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। যে এই ভূমিকায় থাকবে, সে একটাই লক্ষ্য রাখবে, কি ভাবে সব স্তরে ক্লাবকে সাফল্য দেওয়া যায়।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে অনেকের আবেগ জড়িয়ে। কী ভাবে সামলাবেন?
নম্রতা: আমার জন্ম কলকাতায়। মা, বাবা, একসময় কলকাতাতেই থাকতেন। মা এবং বাবার পরিবারের সবাই এখনও কলকাতাতেই থাকেন। আমাদের বাড়ি ভবানীপুরে। বাবা একসময় ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ করতেন। বাবার ব্যবসার জন্যই জন্মের কিছু বছর পরই ওড়িশায় চলে যাই। ওখান থেকে মুম্বইয়ে। ওড়িশায় থাকার সময় প্রত্যেক উইকেন্ডেই কলকাতায় যেতাম। পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করতাম। অনেক মজা হত। আর ফুটবল আমার পরিবারের কাছে ভালোবাসার। সেই কলকাতাতেই আবার ফিরছি। এটা একটা বড় প্রাপ্তি। ইমামি ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের সিইও হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য মুখিয়ে আছি। সমর্থকদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে চাই। শুধু ব্র্যান্ড কিংবা ব্যবসায়িক সাফল্যই নয়, সমর্থকদের একটা বিরাট অংশকেও কাজে লাগাতে চাই।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বড় ম্যাচ সম্পর্কে জানেন?
নম্রতা: আমার মা কিন্তু মোহনবাগানের সমর্থক। বাবা মারা গিয়েছেন অনেক আগে। উনি কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ভক্ত ছিলেন। বড় ম্যাচের সময় দু’জনের মধ্যে কত ঝগড়া দেখেছি। ক্রিকেটের থেকে অনেক বেশি ফুটবল নিয়ে আমাদের পরিবারে চর্চা হত। তাই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি আমার কাছে নতুন নয়। ওটা দেখেই বড় হয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার বাবার প্রিয় ইমামি-ইস্টবেঙ্গলের সিইও হলেন, পরিবারের সবাই কী বলছে?
নম্রতা: প্রথমে তো আমি কাউকে জানাইনি। কারণ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই সবাই আমাকে পাগল করে দিত। আমার পরিবারের সকলের ফুটবলের প্রতি আলাদা প্রেম রয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে এই দায়িত্বের কথা জানালে তখনই সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত।
প্রশ্ন: খেলার জগতে কি ভাবে এলেন?
নম্রতা: ৭ বছর ধরে একটা জনপ্রিয় স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট গ্রুপের ডিরেক্টর। তার আগে অন্য একটা কোম্পানিতে কাজ করতাম। ওখান থেকেই ৩ বন্ধু মিলে মেরাকি স্পোর্ট অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট নামের এই স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট গ্রুপ শুরু করি। ভারতে ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলাধুলোয় সে ভাবে বিনিয়োগ করা হয় না। কর্পোরেট সাপোর্ট ছাড়া অন্যান্য খেলাগুলো সে ভাবে দাঁড়াতে পারবে না। ওই ভিশন নিয়েই এই কোম্পানিটা খুলি আমরা। ২০১৫ সালে যার যাত্রা শুরু হয়। রাহুল দ্রাবিড়, দীপা কর্মকার, রোহন বোপান্নার মতো খেলোয়াড়রা আমাদের কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া পালক কোহলি (ব্যাডমিন্টন), জেহান দারুভালা (ফর্মুলা ২), শ্রীহরি নটরাজ (সাঁতার), জোহান্না রডরিগেজ (ব্রেকডান্স) এবং আরও খেলোয়াড় আমাদের কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।
প্রশ্ন: এর মধ্যে কি একবারও কলকাতায় এসেছেন?
নম্রতা: হ্যাঁ। ডুরান্ড কাপের সময়ই তো কলকাতায় গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে কি মাঠে এসেছিলেন?
নম্রতা: না, কাজের চাপে মাঠে গিয়ে খেলা দেখা হয়নি। তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে কিন্তু এর মধ্যে একবার গিয়েছি।
প্রশ্ন: দল সাফল্য না পেলে সমর্থকরা মেজাজ হারাবেন। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ কি ভাবে সামলাবেন?
নম্রতা: সমর্থকরা সব ক্লাবেরই সম্পদ। সবাই চায় তার প্রিয় দল সফল হোক, চ্যাম্পিয়ন হোক। ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টাররাও এর ব্যতিক্রম যে নন, ভালো করেই জানি। এটা একটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। তবে এটা সামলানোর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত। এমন কিছু করতে চাই, যাতে ইমামি ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের উন্নতি হয়।
