
অতীত আর বর্তমানের মধ্যে ফারাক আসলে কীসের? দর্শনের। গভীরে ঢুকে বললে, প্রজন্মের তফাত। জেন-এক্স যেভাবে ভেবেছে, জেন-জ়েড সেই রাস্তাতেই হাঁটবে কেন? একযুগ বছর আগের স্পেন বোধহয় দর্শনগত ভাবে নিজেদের পাল্টে ফেলেছে আমূল। ২০১১ সালের ঘটনাই ধরা যাক। ৯৪ সেকেন্ডে ৪২টা পাস খেলে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করেছিল স্পেন। যেন মাঠে আঁকিবুকি কেটেছিলেন জাভি হার্নান্ডেজ, ডেভিড সিলভা, খর্দি আলবারা। ইউরোর যোগ্যতা পর্বের ম্যাচ ছিল। ঠিক ১২ বছর পর সেই দর্শন পাল্টে গিয়েছে। চেনা, পরিচিত তিকিতাকা থেকে কার্যত ইউ-টার্ন নিয়েছে স্পেন।
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে এবারের ইউরোয় প্রথম ম্যাচ ছিল স্পেনের। লুইস দে লা ফুয়েন্তের টিম তিনটে পাস, ছ’টা টাচ আর ৬ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করেছে। লেফটব্যাক মার্ক কুকুরেলার লুজ বল রড্রি, ফাবিয়ানের পা ছুঁয়ে আলভারো মোরাতার গোল।
বল দখলে রাখা। পাস, পাস আর পাস। ক্রমাগত ওয়েভ তৈরির আন্তরিক চেষ্টা থেকে আচমকাই বেরিয়ে এল কেন স্পেন? উত্তর খুঁজতে হলে আবার ফিরতে হবে দর্শনের কাছে। যেখানে পাসিং, পজেশনের অস্তিত্ব মিলবে। সঙ্গে থাকবে গতির ঝড়। ইউরোর যোগ্যতা পর্বে দেখা স্পেনের সঙ্গে ইউরোর মূল মঞ্চে খেলা স্পেনের ফারাকেই সেই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। লুইস এনরিকের সময় থেকেই গতির ধোঁয়া উঠতে শুরু করেছিল। নতুন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের সময়ে তাই হয়ে উঠেছে ঝড়।
ফুয়েন্তের টিমে দুই উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের উপস্থিতি গতির খোঁজ দিয়েছে স্পেনকে। ফুয়েন্তের হাতে রয়েছেন ফেরান তোরেস, আয়োজে পেরেসরাও। ফুয়েন্তে দেরি করেননি গতিশীল ফুটবলারদের ব্যবহার করতে। পুরনো দর্শনে পড়ে না থেকে নতুনের কাছে গিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। ইয়ামাল, নিকোরাই তো ফুয়েন্তেকে দিয়েছেন নতুন বিকল্প। ক্রোয়েশিয়া তো বটেই, গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারানো যে কারণে সহজ হয়ে গিয়েছিল। ইয়ামাল আর নিকো দুটো প্রান্তকে প্রাণবন্ত করছেন। রড্রি আর মোরাতা সারছেন বাকি কাজ।
সাধে কি ফুয়েন্তে বলেছেন, ‘বিপক্ষ টিমগুলো জানে আমরা বল দখলে রাখব, পাস খেলব। ওরা জানে না আমরা গতির ঝড়ও তুলতে পারি।’ এমন চমক একসময় স্প্যানিশ ফুটবলকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিল। সেই অতীত কি আবার ফিরছে?