প্রান্তিক দেব
২৮ অক্টোবর ২০১৭। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল। মুখোমুখি স্পেন-ইংল্যান্ড। ১৭ বছর কিংবা তারও কম বয়সের কয়েকটা ছেলে সেদিন যুবভারতীতে যে রূপকথার ফুটবলটা খেলেছিল সেটা এখন তাদের চোখে লেখা আছে। যাঁরা সেদিন মাঠে ছিলেন। ম্যাচ শেষে অনেক অনেক মুগ্ধতা নিয়ে যাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন, তাঁদের মুখে মুখে ফিরছিল কয়েকটা নাম। আর, ১৭ বছরের কয়েকটা কিশোরের ফুটবল বোধ, ফুটবল শিল্পের কথা। গত কয়েক বছরে আইএসএল বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দৌলতে বিশ্ব ফুটবলার তারকাদের খুব সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে বাঙালির। কিন্তু কেরিয়ার শেষ পর্বে ভারতে এসে গার্সিয়া, দেল পিয়োরো, রবার্ট পিরেস, ফোরল্যানদের খেলা হোক বা একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলা, তারকাদের তারকা হয়ে ওঠার গল্পটা ওই কয়েকটা ঝলকে বোঝা সম্ভব নয়। ২০১৭ সালের ওই ছোটদের বিশ্বকাপটা সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল। ২০১৭ থেকে কাট টু ২০২৪। ইউরো কাপের ফাইনাল। মুখোমুখি স্পেন ও ইংল্যান্ড। সেদিন যুবভারতীতে খেলে যাওয়া ছোট ছোট ছেলেরা আজ বড় হয়েছে। যুবভারতীর মাঠে মুগ্ধতা তৈরি করা ফিল ফডেন, ফেরান তোরেসরা আর কিছুক্ষণ পরেই জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামবেন ইউরোপ সেরা হওয়ার দৌড়ে।
যুবভারতীর মঞ্চে সেদিন যারা তারকা হয়ে উঠেছিলেন তাদের অনেকে হারিয়ে গেছেন। কিন্তু যেটা হারায়নি সেটা মুগ্ধতা। ২০২২ বিশ্বকাপ বা ২০২৪ ইউরো কাপ ও কোপা, বিশ্বফুটবলে একটা বড় পরিবর্তন ঘটছে এই পর্বে। এতদিন যাদের তারকা হিসেবে চিনত সবাই, তাদের এবার অলবিদা জানানোর সময় এসেছে। চাই নতুন তারকা। যারা আগামী কয়েকটা বছর বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করবে। ২০১৭ সালের সেই ছোট ছোট ছেলেদের পালা এবার। যারা অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ খেলেছিল তাদেরই তারকা হওয়ার লাইসেন্স আছে বাকিদের নেই, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ট্যালেন্ট ও পারফরম্যান্সের ভারসাম্য থাকলে যে কেউ তারকা হতে পারেন। এখন সময়টা ওই ছোট ছোট ছেলেদের। ওদের সময়ের।
অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ খেলেছেন, অথচ হারিয়ে গেছেন এমন ফুটবলারের সংখ্যাও অনেক। আমাদের দেশের দিকেই তাকান। যাকে নিয়ে দুই প্রধানের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে, সেই আনোয়ার আলি ছাড়া আর কারও বিশেষ পাত্তা নেই। বিশ্ব ফুটবলেও তেমনটাই। ফিল ফডেন, ফেরান তোরেস ছাড়া আর সেভাবে কেউ তারকা হওয়ার দৌড়ে নেই। কিন্তু যেটা আছে সেটা ওই প্রজন্ম। ইউরো ফাইনালের দুই দলের দিকে তাকান, দেখতে পাবেন। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়স এমন ফুটবলারের সংখ্যাই বেশি। সোজা কথায় ওই প্রজন্মের ফুটবলারদের তারকা হওয়ার পালা এবার। ওই প্রজন্ম, যারা যুবভারতীর মঞ্চে রিহার্সাল দিয়েছিল। তারাই আজ বার্লিনে পারফর্ম করবে।