
পারফর্ম করতে হলে বড় মঞ্চের চেয়ে তাগিদ আর কী হতে পারে? কোয়েলের জন্য এই বড় মঞ্চই তাগিদ হয়ে দাঁড়াল। যার সৌজন্যে দেশজুড়েই ক্রীড়া মহলে আলোচনা শুরু। কোয়েল বর। মাত্র ১৭ বছরের কোয়েল আমেদাবাদে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৫৩ কেজি বিভাগে জোড়া সোনার পদক জিতেছেন। টিভিতে এই খবর দেখে আপ্লুত বাবা-মা এবং প্রতিবেশীরা। তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন ঘরে ফেরে সোনার মেয়ে। বাড়ি ফিরলে সোনার মেয়েকে পছন্দের পটলের তরকারি ও ইলিশ মাছ রান্না করে খাওয়াবেন মা।
সাঁকরাইল এর ধুলাগড়ের ব্যানার্জি পাড়ায় কোয়েল বরের বাড়ি। তাঁর বাবা মিঠুন বরের মুরগির মাংসের দোকান আছে। আর্থিক পরিস্থিতি এর থেকেও যেন অনেকটা বোঝা যায়। কোয়েলের বাবা মিঠুন একটা সময় ওয়েটলিফটিংয়ে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু নিজে বিশেষ সাফল্য পাননি। খেলার প্রতি ভালবাসা থেকেই ছেলেমেয়েকে ওয়েটলিফটিংয়ে এগিয়ে দেন। কোয়েল ২০১৮ সাল থেকে পাঁচলার দেউলপুরে কোচ অষ্টম দাসের তত্ত্বাবধানে ওয়েটলিফটিং শুরু করেন। প্রথমে জেলা, তারপর রাজ্য এবং পরে জাতীয় পর্যায়ের একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। বেশিরভাগ প্রতিযোগিতায় সোনার পদক।
আরও একটা সুখবর আসে বছর দুয়েক আগে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সাই) পাতিয়ালার জাতীয় ক্যাম্পে নির্বাচিত হন কোয়েল। তারপর থেকে সেখানেই পড়াশোনার সঙ্গে প্র্যাকটিস চালিয়ে যান। দশম শ্রেণীর ছাত্রী কোয়েল মঙ্গলবার আমেদাবাদে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৫৩ কেজি বিভাগে রেকর্ড ওজন তুলে দুটি সোনার পদক জেতেন। যখন তিনি প্রতিযোগিতার মঞ্চে ওজন তুলছেন তখন তার বাবা-মা এবং প্রতিবেশীদের চোখ টিভির পর্দায় এবং মোবাইলে। কোয়েল ৫৩ কেজি বিভাগে আগের রেকর্ড ১৮৮ কেজি ভেঙে ১৯২ কেজি ওজন তোলেন। এর মধ্যে স্ন্যাচে ৮৫ কেজি, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৭ কেজি ওজন তোলেন। ইউথ এবং জুনিয়র দুই বিভাগেই সোনা জয়।
কোয়েলের সাফল্যের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা তাঁর বাড়িতে সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন। প্রত্যেকেই এই সাফল্যে আপ্লুত। কোয়েলের মা শ্রাবন্তী বর বলেন, “আমি চাই মেয়ে খেলাধুলায় আরও সাফল্য পাক। ও পটলের তরকারি এবং ইলিশ মাছ খেতে ভালোবাসে। ক্যাম্পে ওসব পায় না। বাড়িতে এলে ওর জন্য ওই পদগুলো রাঁধবো।” বাবা মিঠুন বর বলেন,”আমি ওয়েটলিফটিংয়ের চর্চা করতাম। তবে তেমন কিছু সাফল্য পাইনি। তাই মেয়ে এবং ছেলেকে এই খেলায় নিয়ে আসি। কোয়েলের পারফরম্যান্স দেখেছি। রাতে ও ফোন করেছিল। খুব ভালো লেগেছে। আমি চাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও আরও এগিয়ে যাক।”
আমাদের বাংলার ঘরের মেয়ে, হাওড়ার বাসিন্দা কোয়েল বর আহমদাবাদে অনুষ্ঠিত ভারোত্তোলনের কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বরেকর্ডের হ্যাটট্রিক করে জোড়া সোনা জিতে বাংলাকে গর্বিত করেছে। আমি ওকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাই।
ওর অভিভাবক, কোচ – সকলকে জানাই শুভেচ্ছা।
আগামীদিনে…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 27, 2025
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোয়েলের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ঘরের মেয়েকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবেশীরাও কোয়েলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, কোয়েল ফিরলে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এখন পরিবারের লোকেরা অপেক্ষা করছেন কবে ফেরে ঘরের মেয়ে।