BUDGET 2023: ম্যাডাম, এইবার দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করুন, নির্মলাকে খোলা চিঠি এক মধ্যবিত্তের

Union Budget 2023: ভুবনেশ্বরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিশোর। সামনেই বাজেট। তার আগে মধ্যবিত্তের দুর্দশা নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে খোলা চিঠি লিখলেন তিনি।

BUDGET 2023: ম্যাডাম, এইবার দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করুন, নির্মলাকে খোলা চিঠি এক মধ্যবিত্তের
| Updated on: Jan 13, 2023 | 8:36 PM

নির্মলা ম্যাডাম

আমার নাম কিশোর। আমি ভুবনেশ্বরে থাকি। আমি একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। স্কুলে এখন টিফিন টাইম। পড়ুয়ারা মাঠে বসে খাচ্ছে আর খেলছে। আমি স্টাফরুমে একটা খবরের কাগজ পড়ছিলাম। বাজেটে আপনারা পরামর্শ চেয়েছেন বলে একটি খবর ছাপা হয়েছে। তাই আমি এই চিঠির মাধ্যমে আমার ধারণা আপনাকে জানাতে চাই। এটি আপনাকে আমার দুর্দশা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেবে।

ম্যাডাম, আমি চা খুব পছন্দ করি। আগে আমি দিনে ৪ থেকে ৫ কাপ চা খেতাম। আজকাল মাত্র দু’কাপ খাই। আমার কাছে আর কোনও উপায় নেই, কারণ স্কুলের বাইরে বাব্বান এক কাপ চায়ের দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা করেছে। দুধ, রেশন ও মাসিক খরচ সব কিছুই দামি হয়ে গেছে বলে তিনিও দাম বাড়াতে বাধ্য।

ম্যাডাম, আমরা দেশের মধ্যবিত্তরা আমাদের যা প্রয়োজন আর যা চাহিদা তার টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গেছে। আজকাল প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার মূল্য এতো বেড়ে গেছে যে আমাদের চাহিদা নিয়োমিত বিসর্জন দিতে হয়। আমার বাবা-মা তীর্থযাত্রায় যেতে চান। আমার স্ত্রী, মালা আমাকে ওয়াশিং মেশিন কেনার জন্য বলছে। এই শীতে ঠান্ডা জলে কাপড় ধোয়া খুব মুশকিল। আমার বেতন সংসারের খরচ চালানোর জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়।

যদি কিছু মেডিকেল ইমার্জেন্সি হয় তবে তার খরচ সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। মা-বাবা আর মালাকে এসব কীভাবে বোঝাবো জানি না। গত দু’বছর ধরে আমি তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য করোনাকে একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছি। নিজেদের মনের গভীরে তারাও নিশ্চই এইসব বুঝতে পারে।

মধ্যবিত্তরা কোথাও তাদের আবেগ প্রকাশ করতে পারে না, এমনকি তাদের পরিবারও নয়। মধ্যবিত্ত যা পারে তা হল সবকিছু সহ্য করা। যাই হোক, মালা দর্জির কাজ শুরু করেছে। ও বলে, সরকারের কাছ থেকে কিছু আশা করা বৃথা। দর্জির কাজ করে যা উপার্জন হবে তা দিয়ে ও একটা ওয়াশিং মেশিন কিনবে। আমি আমার পরিবারের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে চিন্তিত। তার উপরে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হবে।

এ বছর আমার ছেলে একাদশ শ্রেণিতে উঠবে। ও বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে বলবে। আমাদের তার টিউশনের জন্য টাকা দিতে হবে, তার জন্য একটি ল্যাপটপও কিনতে হবে। তার উপর ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিংয়ের জন্য ফি আছে। আমি এই সবকিছুর জন্য টাকা সঞ্চয় করছি। ম্যাম, আমি বি-টেক করতে পারিনি। কোনওভাবে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি পেয়েছি। আমি আমার ছেলের লেখাপড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। চাই সে ইঞ্জিনিয়ার হোক। বাকি টাকা দিয়ে একটা স্কুটার কেনার কথা ভাবছিলাম।

চলাফেরা করতে কখনো বাস ব্যবহার করি আবার কখনো হেঁটে যাই। কিন্তু আমি আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্কুটার কেনার পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছি। এখন ঋণ নিয়ে লাভ নেই। যদি ঋণ নিতেই হয় তাহলে অজয়ের পড়ালেখার জন্য নেব। ৯০ হাজার টাকা ছোট পরিমাণ নয়। ম্যাম, একবার অজয় ​​সেট হয়ে গেলে, আমি মালার সাথে বিমানে চড়ব। আর আমি আমার গ্রামে একটি মন্দির ও হাসপাতাল বানাতে চাই। আমার বাবা বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করতেন। সবাই তাঁকে অনেক সম্মান করত।

আমাদের ইচ্ছার তালিকা অবশ্য অন্তহীন। ম্যাডাম, এইবার দয়া করে মধ্যবিত্তের জন্য কিছু করুন যাতে আমাদের খরচ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অজয়ের পরবর্তী শিক্ষার খরচ যাতে আমি পূরণ করতে পারি তার জন্য কিছু করুন। সাধ্যের মধ্যেই সে যাতে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে। কিছু বৃত্তি বা আর্থিক সাহায্য পেলে তো দারুন উপকার হয়। আমার ছেলে সত্যিই মেধাবী।

নির্মলা ম্যাম, এটা আমার পুরো পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিরাশ করবেন না দয়া করে ম্যাম।

ধন্যবাদান্তে

কিশোর

Follow Us: