Dr. Chandan Sen: চিকিৎসকদের মিছিল থেকেই ফিরে এল ডঃ চন্দন সেনের নাম, কে তিনি?
রবিবার মশাল মিছিলের পর ১ অক্টোবর কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছেন চিকিৎসকরা। সেই মিছিলে অনেক জুনিয়র ডাক্তারের মুখেই ফিরে ফিরে এল ডঃ চন্দন সেনের নাম। কে চন্দন সেন? সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ডঃ সেনের নাম তুলেছিলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি।
ধর্মঘট যখন হাসপাতালে, স্বাস্থ্য তখন সঙ্কটে। কাল রাত থেকে আবারও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররা। ১০ দিন কাজের পর ১০ দফা দাবি। সেই দাবিতেই কর্মবিরতি। বুধবার মহালয়া, আগামী বুধবার মহাষষ্ঠী। পুজোর সময়ও কী আন্দোলন জারি থাকবে? এখনও অবধি তেমনই সম্ভাবনা।
রবিবার মশাল মিছিলের পর এদিন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছেন চিকিত্সকরা। সেই মিছিল থেকে অনেক জুনিয়র ডাক্তারের মুখেই ফিরে ফিরে এল ডঃ চন্দন সেনের নাম। কে চন্দন সেন? সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ডঃ সেনের নাম তুলেছিলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। আরজিকর হাসপাতালে কি ভুয়ো ওষুধ চক্র সক্রিয় ছিল? আরজিকরে চিকিত্সক তরুণীর ধর্ষণ ও খুনের পিছনে কী কোনওভাবে এই ভুয়ো ওষুধ চক্রের যোগ রয়েছে বা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে? সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলার সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন এডুলজি। শুনানির সময় এডুলজি দাবি করেন, আরজিকর থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য বাংলাদেশে পাচার হয়েছে। এর আগে রানাঘাট হাসপাতালে চিকিত্সক চন্দন সেন খুনেও বাংলাদেশের ওষুধ চক্রের যোগ সামনে এসেছিল। এডুলজি বললেন, আর প্রায় ১৪ বছর পর আবার ভেসে উঠল ডঃ চন্দন সেনের ঘটনা। ২০০৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিত্সক চন্দন সেনের দেহ পুকুরে ভাসতে দেখা যায়। হাসপাতালের এক কর্মীর বাড়িতেই নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলেন চন্দন। পুকুরে হাত ধুতে গিয়ে আর ফেরেননি। পরে পুকুর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ওইদিন চন্দনের সঙ্গে, নিমন্ত্রণের আসরে যাঁরা ছিলেন, সবাই রানাঘাট হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। ওই হাসপাতালেই চন্দনের দেহের ময়নাতদন্ত সেরে ফেলারও চেষ্টা হয়েছিল। স্ত্রী ও পরিবারের বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। কলকাতায় ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হয়, ওই চিকিত্সককে খুন করা হয়েছে। কেন? কেন খুন হতে হয় চন্দনকে? তদন্তে উঠে এসেছিল, রানাঘাট হাসপাতালে জাল ওষুধ চক্র ও নিম্নমানের সামগ্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন চন্দন। তাই পরিকল্পনা করে নিমন্ত্রণ করে তাঁকে পৃথিবী থেকে সরানোর পরিকল্পনা।
অভিযোগের আঙুল মূলত ৫ জনের দিকে। রানাঘাট হাসপাতালের এক চিকিত্সক দম্পতি সহ তিন চিকিত্সক, তাদের গাড়িচালক, জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক ও হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে দুই চিকিত্সক, গাড়িচালক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় রানাঘাট আদালত। ২০১০ সালে সবটা বদলে গেল হাইকোর্টের রায়ে। সেই রায়ে বলা হয়, চন্দন সেন খুনে অভিযুক্তদের কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। পুলিশ বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণই দিতে পারেনি। অতএব সবাই বেকসুর খালাস। চন্দন সেনের স্ত্রী বিদিশা, বহুদিন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, তা হলে খুনটা করল কে? চন্দন সেন মারা গেলেন কীভাবে? মুক্তি পাওয়ার পর অভিযুক্তরা দাবি করেছিল, মদ খেয়ে পুকুরে হাত ধুতে গিয়ে পুকুরে পড়ে ডাক্তারবাবু মারা যান। যদিও তদন্তকারী অফিসার রিপোর্টে বলেছিলেন, মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হেঁচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর জামাও ছিঁড়ে যায়। চন্দনকে খুন করে পুকুরে দেহ ফেলা হয়েছিল।
ডক্টর চন্দন সেনের স্ত্রী, পরিবারের দায়িত্ব সামলে মামলাটা আর টানতে পারেননি। সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেননি। ডক্টর ডাক্তাররা কি তিলোত্তমার বিচার নিয়েও একই আশঙ্কা করছেন? হয়তো করছেন। হয়তো করছেন না। তবে আমি বলব, বিচার সবে শুরু হয়েছে। সিবিআই তদন্তও চলছে। তাই অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারদের সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। পুজোর মুখে নতুন করে ধর্মঘটে যাওয়া নিয়ে তাঁরা যে যুক্তি দিচ্ছেন, তা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা কিন্তু ভেবে দেখার সময় এসেছে।