Israel War, Iran Nuclear Power Plant: ইজরায়েলের টার্গেটে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র
Israel-Gaza War: ইজরায়েল বিষয়টা এখানেই শেষ করতে রাজি নয়। আমেরিকা বা বাকি দুনিয়া যাই বলুক না কেন, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে ইজরায়েল। ইতিহাসের দিকে তাকালে, আমরা দেখব এই দুটো দেশের সম্পর্কের সমীকরণ বড়ই অদ্ভুত। যাতে জড়িয়ে বন্ধুত্ব, শক্রুতা আর বহু সিক্রেট অপারেশন।
ইজরায়েলের মাটিতে মিসাইল হানার জবাবে কি এবার ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চলবে? ঘটনা যেদিকে গড়াচ্ছে, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বুধবার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ব্রিটেন ও জার্মানির বিদেশমন্ত্রীর কথা হয়। আসলে, দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর উপর নেতানিয়াহুকে বুঝিয়ে সুজিয়ে নরম করার দায়িত্ব ছিল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দুজনকেই সাফ বলে দিয়েছেন, ইজরায়েল কীভাবে ইরানকে জবাব দেবে, সেটা একমাত্র আমরাই ঠিক করব। এখানে অন্য কারও ভূমিকা থাকতে পারে না। দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীকে কথা বাড়ানোর অবকাশই দেননি নেতানিয়াহু। ইজরায়েলি মিডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি, রবিবারই ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানোর অনুমতি চেয়েছিল ইজরায়েলি সেনা। সেই পথেই হাঁটা হবে নাকি অন্যভাবে জবাব দেওয়া হবে। তা নিয়েই আলোচনা চালাচ্ছে ইজরায়েলের সরকার। টাইমস অফ ইজরায়েলের প্রতিবেদনে দাবি, তিন সদস্যের ওয়ার ক্যাবিনেটে অন্তত একজন পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানোর পক্ষপাতী। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও বলে দিয়েছেন প্রত্যাঘাত হবেই এবং অত্যন্ত কঠোর প্রত্যাঘাতই হবে। কিন্তু তার মানে কি পরমাণু কেন্দ্রে হামলা? কোনও দেশই এত স্পর্শকাতর ইস্যুতে মুখ খোলে না। ইজরায়েলও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে আইডিএফের তত্পরতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। দেখুন, যুদ্ধ- সংঘর্ষ এসবের সঙ্গে দুনিয়া ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে যুদ্ধ-সংঘর্ষ আর পরমাণু কেন্দ্রে হামলা এক জিনিস নয়। পরমাণু কেন্দ্রে মিসাইল হানার ফল পরমাণু বোমা হামলার থেকে কম কিছু নয়।
পরমাণু কেন্দ্রে মিসাইল আছড়ে পড়লে বিরাট এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে। পরমাণু কেন্দ্রের কুলিং প্ল্যান্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তাঁর ফলও মারাত্মক। শুধু ইরান নয়। আশেপাশের দেশেও ভয়ঙ্কর বিপদের সম্ভাবনা। এমনটা হলে দুনিয়া ইজরায়েলকে ছেড়ে কথা বলবে না। তবুও ইজরায়েলের ক্ষমতাসীন পার্টি এমনকি বিরোধী নেতাদের অনেকেই পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পক্ষেই সওয়াল করছেন। তাঁদের বক্তব্য ১৪ তারিখ ইরান যেভাবে ইজরায়েলের ভূখণ্ডে একতরফা মিসাইল হামলা চালিয়েছে। তার কড়া জবাব না দিলে আমাদের দুর্বলতাই প্রকট হবে। সেদেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলতে শুনলাম, এমনটা চলতে থাকলে ইজরায়েল দেশটাই আর থাকবে না। তাই ঝুঁকি থাকলেও আমাদের পাল্টা হামলা চালাতেই হবে। ইজরায়েল পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাতে পারে, এমন সম্ভাবনা ইরানও উড়িয়ে দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন বা IAEA-র ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল মারিনো বলছেন, সোমবার পরমাণু কেন্দ্রে বন্ধ রেখেছিল ইরান। বৃহস্পতিবারও হামলার আশঙ্কায় ওখানে কাজকর্ম হয়নি। IAEA-র টিম ওখানে ইয়ারলি রিভিউ করতে গিয়েছিল। আমরা ওদের ওখানেই থাকার নির্দেশ দিয়েছি। IAEA-র তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে ইরানের বাসারহারে একটিই সক্রিয় পরমাণু কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে তিনটি চুল্লিতে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের কাজ হয়। দু-মাস আগে ইরান ঘোষণা করেছিল, এবছরই আরও ৪টি পরমাণু কেন্দ্রে ১০টি পরমাণু চুল্লির কাজ শুরু হবে। মারিনো মনে করিয়েছেন, ইউক্রেনের জাপোরঝিয়া হোক বা ইরানের বাসারহার – পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিণতি মারাত্মক।
এই ক্ষয়ক্ষতি আগাম আঁচ করাও সম্ভব নয়। দুনিয়াজুড়ে রাষ্ট্রপ্রধানরাও যে কোনও ভাবে এমন সম্ভাবনা এড়াতে মরিয়া। এমনকি আমেরিকারও সাফসাফ বলে দিয়েছে, তাঁরা ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে না। ইজরায়েলকে ভেবেচিন্তে, সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করারও পরামর্শ দিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু প্রশ্ন হল ইজরায়েল কী করবে? ১৪ এপ্রিল ভোররাতে ইজরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ৩০০ মিসাইল ছুঁড়েছিল রিপাবলিকান গার্ড অফ ইরান। সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা ও সেনাকর্মীদের মৃত্যুর বদলা নিতেই এই হামলা বলে দাবি করা হয়। এই প্রথমবার সরাসরি ইজরায়েলের মাটিতে হামলা চালাল ইরান। যদিও শক্তিশালী মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ও আমেরিকার সাহায্যে ৯৯ শতাংশ মিসাইল মাঝপথেই ধ্বংস করে দেয় আইডিএফ। এরপরই ইরান জানিয়ে দেয় ইজরায়েল নতুন করে হামলা না করলে এই বিষয়টা এখানেই শেষ। কিন্তু ইজরায়েল বিষয়টা এখানেই শেষ করতে রাজি নয়। আমেরিকা বা বাকি দুনিয়া যাই বলুক না কেন, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে ইজরায়েল। ইতিহাসের দিকে তাকালে, আমরা দেখব এই দুটো দেশের সম্পর্কের সমীকরণ বড়ই অদ্ভুত। যাতে জড়িয়ে বন্ধুত্ব, শক্রুতা আর বহু সিক্রেট অপারেশন।