Sheikh Hasina, Bangladesh News: হাসিনার ইস্তফার ‘প্রমাণ’ নেই, একই পরিণতি হবে রাষ্ট্রপতির?

Protest in Bangladesh: ফের উত্তাল ঢাকা, আবার বাংলাদেশের দিকে দিকে বিক্ষোভ। উঠল নতুন স্লোগান। এবার দাবির অভিমুখ বদলে গেল। হাসিনার পর এবার রাষ্ট্রপতির ইস্তফা দাবি। মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বিক্ষোভে সামিল হন ছাত্ররাও। কিন্তু কেন রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এভাবে খড়গহস্ত হলেন বিক্ষোভকারীরা?

Sheikh Hasina, Bangladesh News: হাসিনার ইস্তফার 'প্রমাণ' নেই, একই পরিণতি হবে রাষ্ট্রপতির?
| Updated on: Oct 23, 2024 | 11:31 PM

এপার বাংলায় যেমন ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক, তেমনি ঝড় উঠেছে ওপারেও। সেই ঝড়ের ধাক্কায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের গদি টলমল! কতক্ষণ তিনি টিকতে পারবেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবিতে মঙ্গলবার রাতে এমনই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বঙ্গভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বাধে। একটার পর একটা ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকেন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের দিকে। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন। শেষ পর্যন্ত লাঠি চালিয়ে, টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়ে অবস্থা সামাল দেয়। কিন্তু, কেন বাংলাদেশে আবার অশান্তি?

আড়াই মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের জমানায় নতুন করে ডামাডোল কেন? মঙ্গলবার রাতে যা ঘটল, তা দেখে অনেকেই বলছেন এ যেন আড়াই মাস আগের পুনরাবৃত্তি। ফের উত্তাল ঢাকা, আবার বাংলাদেশের দিকে দিকে বিক্ষোভ। উঠল নতুন স্লোগান। এবার দাবির অভিমুখ বদলে গেল। হাসিনার পর এবার রাষ্ট্রপতির ইস্তফা দাবি। মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বিক্ষোভে সামিল হন ছাত্ররাও। কিন্তু কেন রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এভাবে খড়্গহস্ত হলেন বিক্ষোভকারীরা?

এখানেই উঠে আসছে একটি সাক্ষাত্‍কারের প্রসঙ্গ। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সেদেশের একটি সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন, আর তাতেই বিতর্কের জল গড়িয়ছে অনেক দূর। তিনি বলেছিলেন, “আমি শুনেছি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে আমাকে কিছুই জানাননি। সেনাপ্রধানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্পষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি”।

বাংলাদেশের মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদকের দাবি তাঁকে দেওয়া সাক্ষাত্‍কারে একথাই বলেছেন রাষ্ট্রপতি।

সাহাবুদ্দিন নাকি হাসিনার পদত্যাগপত্র তন্ন-তন্ন করে খুঁজে পাননি। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে হাসিনা সত্যিই পদত্যাগ করে থাকলে, তা গেল কোথায়? নাকি, আদৌ তিনি অফিশিয়ালি পদত্যাগ করেননি? মানবজমিনের সম্পাদকের দাবি, তিন সপ্তাহ ধরে তিনি অনুসন্ধান চালিয়েছেন। খোঁজ নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা থাকার কথা। সেখানেও মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হন। তাঁর কাছেও নেই জেনে বেশ অবাক হন তিনি। তবে এই একটি সাক্ষাত্‍কার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। তবে হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছিলেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এ বার, মানবজমিনের সম্পাদক বলছেন, বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি তাঁকে জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছেও হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। তবে হাসিনা যে পদত্যাগ করেছিলেন, তা কিন্তু জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।

হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যে বেজায় ক্ষুব্ধ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। রাগে ফুঁসছেন ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরাও। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, হাসিনার মতোই পরিণতি হবে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের? জনরোষে গদি হারাতে হবে তাঁকে? রাষ্ট্রপতির বক্তব্য মিথ্যাচারের সামিল বলে দাবি বিক্ষোভাকরীদের।

বাংলাদেশের আন্দোলনে আবার ফিরল দফা এক, দাবি এক স্লোগান। মাস তিনেক আগে হাসিনার বিরুদ্ধে এই স্লোগান তুলে সফল হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা, এবার টার্গেট রাষ্ট্রপতি! মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের এক সাক্ষাত্‍কারে জল ঘুলিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। সে তিনি যতই বিতর্ক না তৈরি করার জন্য আহ্বান জানান, তাতে বয়েই গেছে আন্দোলনকারীদের। তারা যে রক্তের স্বাদ পেয়েছে। অনেকে বলছেন, আসলে বল রাষ্ট্রপতির হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। তার জন্যই তিনি নিশানায়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হওয়ার পিছনে কি অন্য সমীকরণ কাজ করছে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে কান পাতলে অনেক কিছু উঠে আসছে। কেন টার্গেট বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি?

এই পরিসংখ্যানে বুঝতে পারছেন কতটা হাসিনার দলের সঙ্গে মাখোমাখো সম্পর্ক ছিল সাহাবুদ্দিনের। অনেকেই বলছেন, সাহাবুদ্দিনকে সরানোর জন্য ছুতো খুঁজছিলেন বিক্ষুব্ধরা। আসলে তাঁকে সরিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ স্তরে হাসিনা ঘনিষ্ঠদের মুছে ফেলতে চান আন্দোলনকারীরা। শুধু কি রাষ্ট্রপতি? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের নিশানায় হাসিনার দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগও। যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছে, তার মধ্যে প্রথমের দিকেই রয়েছে ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি।

অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আন্দোলন তীব্র হলেও, নিয়মের বাধ্যবাধকতায় রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া এই মুহূর্তে কঠিন। পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে হাসিনার মতো আন্দোলনের চাপে সাহাবুদ্দিনও ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশের এখন যা পরিস্থিতি তাতে কেউ কেউ বলছেন, হাওয়া যেদিকে ঘুরছে তাতে মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সরে যেতেই হবে। তবে সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাত্‍কারের পর অনেকেই বলছেন হাসিনা যদি পদত্যাগই না করেন, তাহলে বর্তমান সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত কি বেআইনি? ক্ষমতা কি আদৌ নেই নতুন সরকারের, সেটাই তো সামনে আসায় এই আন্দোলন। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে শেখ হাসিনার লোক বলেই কি রাষ্ট্রপতির একই পরিণতি হবে? কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা!

সংরক্ষণ আন্দোলন ছিল হাসিনা সরকারের কাছে শেষ পেরেক! আর হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুলে কার্যত প্রাক্তন হওয়ার পথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। ‘৭১-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ওপার বাংলার মানুষ একটা বড় সময় সামরিক শাসনে থেকেছেন। কিছুদিন ঠিকঠাক থাকলে, আবার অচলাবস্থা। গণ অভ্যুত্থানের পর সেমি অভ্যুত্থান তৈরি হচ্ছে। কার্যত দিশাহীন পরিস্থিতি। এখানকার আন্দোলন মুজিবর রহমান, হাসিনা বিরোধী আর বলা ভাল ভারতবিরোধী। হাসিনার বিদায়ের পর্ব থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা আক্রান্ত হতে থাকেন। হিন্দুদের বাড়ি ঘর ভেঙে, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। হামলা হয় মন্দিরে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানেও উদ্বেগ উঠে আসে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের গলাতেও।

হাসিনার বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। শুধু অগাস্টেই রফতানি কমে যায় ২৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে অবশ্য ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা উঠে যায়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন যে শিশুদের পাতে ডিম-দুধ কার্যত পড়ছে না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশর পরিস্থিতি নিয়ে সাবধানী নয়াদিল্লি।

Follow Us: