Space Burial Mission: মৃত্যুর পর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন রইল অধরাই

| Edited By: সোমনাথ মিত্র

Jul 09, 2025 | 9:20 PM

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবির সেই কবিগানের দৃশ্যটা মনে আছে তো নিশ্চই? সে যুগের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা, আদতে পর্তুগিজ অ্যান্টনির জাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তোর কি ইষ্ট কালীকৃষ্ট? ভজগে যা তুই যীশুখৃষ্ট।’ ফিরিঙ্গি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ঐহিকে লোক ভিন্ন ভিন্ন, অন্তিমে সব একাঙ্গী।’ মান্না দে-র গলায় গানের কথাগুলো লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি রিলিজ করেছিল ১৯৬৭ […]

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছবির সেই কবিগানের দৃশ্যটা মনে আছে তো নিশ্চই? সে যুগের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা, আদতে পর্তুগিজ অ্যান্টনির জাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তোর কি ইষ্ট কালীকৃষ্ট? ভজগে যা তুই যীশুখৃষ্ট।’ ফিরিঙ্গি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ঐহিকে লোক ভিন্ন ভিন্ন, অন্তিমে সব একাঙ্গী।’ মান্না দে-র গলায় গানের কথাগুলো লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি রিলিজ করেছিল ১৯৬৭ সালে। এর দশ বছর পর ১৯৭৭ সালে প্রতিমা নামে আরেকটা ছবি রিলিজ করে। সেখানে সেই গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথাতেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন, ‘কবর দাও বা চিতায় পোড়াও, মরলে সবাই মাটি।’ কথাপ্রসঙ্গ এল, কারণ, অন্তিমে সব একাঙ্গী কিংবা মরলে সবাই মাটি। এই কথাগুলোর মানে একইরকম। কবরে যাওয়া কিংবা চিতায় পোড়ার কথা যাঁদের। বা যাঁদের ধর্মে শেষকৃত্যের অন্য কোনও প্রথা আছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন মৃত্যুর পর স্পেস ব্যুরিয়াল চাইছেন।

পশ্চিমী দুনিয়ার বড়লোকদের মধ্যে ইদানিং এই মহাকাশে সমাহিত হতে চাওয়া নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নতুন ট্রেন্ড আর কী! আমেরিকার টেক্সাসের Celestis নামে একটা কোম্পানি ১৬৬ জন ক্লায়েন্ট জোগাড় করেছিল। এই ১৬৬ জন চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর মহাকাশে বিলীন হয়ে যেতে। পরিবার এঁদের দেহাবশেষ Celestis-কে দেয়। Celestis যোগাযোগ করে জার্মান স্পেস স্টার্টআপ The Exploration Company’র সঙ্গে। গত ২৩ জুন মহাকাশ রওনা হয় তাদের NYX ক্যাপসুল। গ্রিক মিথোলজিতে রাতের দেবীর নামে নাম। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল Mission Possible. ক্যাপসুলে ছিল ১৬৬ জনের দেহাবশেষ। যা মহাকাশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আর স্পেসে গাছ কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে তা নিয়ে গবেষণার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গাঁজা গাছের বীজ।

শুরুটা ঠিকঠাকই ছিলো। রকেট থেকে ক্যাপসুল বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর চারদিকে দু-পাক ঘুরেও ফেলে। ঘুরতে ঘুরতেই লোয়ার আর্থ অরবিট থেকে ক্যাপসুলের আউটার স্পেসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, আচমকাই পৃথিবীর কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সেটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। The Exploration Company জানিয়েছে, তাদের NYX ক্যাপসুল প্রশান্ত মহাসাগরে ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণে সব জ্বলে গেছে। কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। মহাকাশে দেহাবশেষ ছড়িয়ে দেওয়ার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ফলে যাঁরা স্পেস ব্যুরিয়াল চেয়েছিলেন, বলতে পারেন শেষপর্যন্ত তাঁদের জলসমাধি হল।

এই ধরনের অভিযান দুনিয়ায় এটাই ছিল প্রথম। দুটো কোম্পানি তাঁদের ক্লায়েন্টদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। জানিয়েছে, একটু গুছিয়ে নিয়ে আবার অভিযান হবে। মহাকাশে যাওয়া অনেক সহজ। ফিরে আসার প্রক্রিয়া তুলনায় অনেক বেশি জটিল। আমাদের ইসরো গগনযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই মিশনে ৪ ভারতীয় মহাকাশে যাবেন। স্পেস ক্যাপসুল ফিরিয়ে আনার পরীক্ষায় সফল হওয়াই এখন দেশের
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীদিনে যুদ্ধ হবে মহাকাশে। মহাকাশকে ব্যবহার করে যুদ্ধ। বড় দেশগুলো সেইভাবেই নিজেদের তৈরি করছে। ফলে, ভারতকেও সেই পথেই হাঁটতে হবে।