India-Canada Bilateral Relations: ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, কানাডার 'আচরণ পরিবর্তনের' পিছনে অন্য কারণ?

India-Canada Bilateral Relations: ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, কানাডার ‘আচরণ পরিবর্তনের’ পিছনে অন্য কারণ?

সুপ্রিয় ঘোষ

|

Updated on: Oct 31, 2024 | 12:06 AM

Canada News: কানাডা কি পরিকল্পনা করেই নির্জ্জরের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে ভারতের উপর চাপ বাড়াতে চেয়েছিল? যদি এই সম্ভাবনাই সত্যি হয়, তা হলে প্রশ্ন হল, কেন এমন করছে কানাডা? শুধুই কানাডায় থাকা খালিস্তানপন্থীদের চাপ নাকি অন্য কিছু?

ভারতের বিরুদ্ধে, কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে বড়সড় চক্রান্ত। কারা জড়িত, কী চক্রান্ত, কেন চক্রান্ত? সব প্রশ্নের উত্তর কেউ জানে না। তবে, ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গত কয়েক মাস ধরে যা, যা চলছে, তার অনেকটাই পরিকল্পিত। ভারতকে চাপে রাখতে একটা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। কানাডা, খালিস্তান, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মৃত্যু, কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের বিক্ষোভ, খালিস্তানি নেতাদের মদত দেওয়া, পুরোটাই এই প্ল্যানের অংশ। কানাডার পার্লামেন্ট কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করেছেন জাস্টিন ট্রুডো সরকারের দুই মন্ত্রী।

ঠিক স্বীকারোক্তি নয়। বলা যেতে পারে প্যানেলের প্রশ্নের মুখে তাঁরা অনেক গোপন কথা উগরে দিয়েছেন। তাঁরা মূলত তিনটি বিষয় মেনে নিয়েছেন। প্রথমত, ভারত ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে বহু টপ সিক্রেট তথ্য ও নথি ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১৮ জুন ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় হরদীপ সিং নির্জ্জরকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় অজ্ঞাত পরিচয় দুস্কৃতীরা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সেই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে। অথচ ওই বছর সেপ্টেম্বরেই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে যাবতীয় তথ্য ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল। এবং ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে একইসঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের হাতেও তা তুলে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, কানাডার এই দুই মন্ত্রী মেনে নিয়েছেন, নির্জ্জর খুনের পিছনে ভারতের কোনও হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির ভূমিকা আছে – এটা ধরে নিয়েই তদন্ত হয়। অর্থাত্‍ তদন্তের অভিমুখ আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল। পার্লামেন্ট প্যানেল ওই দুই সাংসদকে প্রশ্ন করে, ভারতের যে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, তার জড়িত থাকার কী প্রমাণ আপনাদের হাতে রয়েছে? দুই সাংসদই জবাব দিয়েছেন, প্রমাণ তেমন কিছু নেই। তবে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে তাঁরা নিশ্চিত যে, যা হয়েছে ওই ব্যক্তির কথাতেই হয়েছে। তৃতীয়ত, দুই মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে হরদীপ সিং নির্জ্জর হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি । কেউ বা কারা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিল, সেভাবেই তদন্ত এগোয়।

তবে কী কানাডা পরিকল্পনা করেই নির্জ্জরের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে ভারতের উপর চাপ বাড়াতে চেয়েছিল? যদি এই সম্ভাবনাই সত্যি হয়, তা হলে প্রশ্ন হল, কেন এমন করছে কানাডা? শুধুই কানাডায় থাকা খালিস্তানপন্থীদের চাপ নাকি অন্য কিছু? ফাইভ আইজের সদস্য হিসাবে তদন্তে এফবিআইয়ের সাহায্য চেয়েছিল কানাডা। নির্জ্জরের মৃত্যুর তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা যত বেড়েছে, ততই তদন্তের অভিমুখ বদলে গিয়েছে। খুনের তদন্ত ছেড়ে ভারতের ভূমিকা, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এর ভূমিকা, কানাডায় ভারতের হাইকমিশনারের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছে জাস্টিন ট্রুডো সরকার। ঘটনার ক্রোনোলজি, কানাডার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ট্রুডো সরকারের বক্তব্য পাশাপাশি রেখে খতিয়ে দেখলেই পুরোটা স্পষ্ট হবে।

এই সব থেকে একটা কথা স্পষ্টই বোঝা যায়, নির্জ্জরের মৃত্যুর আগে থেকেই ভারতকে চাপে ফেলার একটা উপায়ের খোঁজ চলছিল। আর এর পিছনে যে ফাইভ আইজ কান্ট্রিজ কলকাঠি নেড়েছিল, সেকথাও মনে করার যথেষ্টই কারণ আছে। অর্থাত্‍ আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন। পাঁচ দেশের এমন এক জোট, যা নিয়মিত নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য আদানপ্রদান করে। ২০২২ সালে মার্কিন সেনেটের ইনটেলিজেন্স ও স্পেশাল অপারেশনস বিষয়ক কমিটি ভারত সহ আরও ৪ দেশকে ফাইভ আইজ জোটে সামিল করার সুপারিশ করে। তবে রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের ভূমিকায় খুশি হতে পারেনি আমেরিকা। সেই রিপোর্টকে হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কেননা, ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতি, রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব, আরও অনেক কিছুই আমেরিকা হজম করতে পারেনি। এত কথার একটাই মূল কথা। হরদীপ সিং নির্জ্জরের হত্যাকে ব্যবহার করেই ভারতকে চাপে ফেলার চক্রান্ত হয়। আজ থেকে ৩০ বছর পর যখন আমেরিকার সিক্রেট ফাইলগুলি সবার সামনে আসবে, তখন সেখানে হয়ত আরও অনেক চমক থাকবে।