পৌরসভায় গুপ্ত কক্ষ, ৬ফুটের আলমারি, জানেনই না পুরপ্রশাসক, শ্যাম-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

Bishnupur Tender Case: তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ বিষ্ণুুপুর পৌরসভায় অভিযান চালানো হয়। তখনই সন্ধান মেলে ওই  গোপন কক্ষের। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে ওই গোপন কক্ষের খবর পুর আধিকারিকদের কেউ জানতেন না বলেই জানিয়েছেন।

পৌরসভায় গুপ্ত কক্ষ, ৬ফুটের আলমারি, জানেনই না পুরপ্রশাসক, শ্যাম-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2021 | 5:42 PM

বাঁকুড়া: শ্যাম-কাণ্ডে (Bishnupur Tender Case) চাঞ্চল্যকর মোড়। বিষ্ণুপুর পৌরসভার ভেতরেই খোঁজ মিলল একটি গোপন কক্ষের। সেই ঘরের ভিতরে আবার রয়েছে শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রাম শঙ্কর মহন্তের নামে একটি ৬ফুটের আলমারি! কেন এতদিন ওই গোপন কক্ষ নিয়ে মুখ খোলেননি পুর আধিকারিকরা কীভাবেই বা গোটা একটা আলমারির মালিকানা পেয়ে বসলেন রাম শঙ্কর তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ বিষ্ণুুপুর পৌরসভায় অভিযান চালানো হয়। তখনই সন্ধান মেলে ওই  গোপন কক্ষের। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে ওই গোপন কক্ষের খবর পুর আধিকারিকদের কেউ জানতেন না বলেই জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অধুনা পুরপ্রশাসক অর্চিতা বিদও গোটা ঘটনায় অন্ধকারে। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, নতুন কাজে যোগ দেওয়ায় তিনি এ সম্পর্কে  কিছুই জানেন না। তবে তদন্তকারীদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে যথার্থ নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই গোপন কক্ষে তল্লাশি করে একটি আলমারির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জানা গিয়েছে ওই আলমারিটি শ্যাম-ঘনিষ্ঠ ধৃত রামশঙ্করের। আলমারি ছাড়াও ওই ঘর থেকে ১টি কম্পিউটার, ১ টি প্রিন্টার ও বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে। সেইসব কাগজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রায় ৫০ মিনিটের ম্যারাথন অভিযানে আরও বেশ কিছু তথ্য় হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের বলেই জানিয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সেগুলি নিয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি গোয়েন্দারা।

উল্লেখ্য়, কিছুদিন আগেই শ্যামাপ্রসাদের ‘কুকীর্তির’ জেরে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের জমিতে বিষ্ণুপুর পৌরসভার দৌলতে তৈরি হওয়া প্রায় দেড়কোটি টাকার একটি পার্ক রাজপরিবারের হাতেই তুলে দিতে হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ মেনেই কার্যত এই সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। এরপর পুরসভার মধ্য়েই এভাবে গুপ্ত কক্ষ ও আলমারির সন্ধান মিলতে কার্যত আতান্তরে পুর আধিকারিকরা। অনেকেই মনে করছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদের ‘কুকীর্তির’ জেরে সন্দেহের আঙুল পুরসভার দিকেই উঠবে। ফলে আদতে পুরসভার সুনাম নষ্ট হতে পারে।

উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুরে ১০ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতিতে মূল অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়কে গ্রেফতার করেছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রাম শঙ্কর মহন্তকেও। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি টাকার সোনার গয়না ছাড়াও প্রায় ১২ বিঘার উপর জমিজমা ও অন্য়ান্য স্থাবর সম্পত্তি।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন ‘কত্তাবাবু’। সম্প্রতি তাঁকে ১০ কোটি টাকার বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতিতে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পড়ুন: এসেছিল ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ফোন, তারপরেই বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব ৯৮ হাজার টাকা!