৮২ বছর বয়সে ‘ইউটিউব স্টার’ বনভিলার পুষ্পরানি, চিনেও ঢুকে পড়েছে বাঙালি রেসিপি!

ঠাকুমার হাতের তৈরি গ্রাম্য রান্নার রেসিপির ভিডিয়ো আপলোড করেই ইউটিউব থেকে বছরে ৮ থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা উপার্জন করছে 'ভিলফুড ব্লগ'।

৮২ বছর বয়সে 'ইউটিউব স্টার' বনভিলার পুষ্পরানি, চিনেও ঢুকে পড়েছে বাঙালি রেসিপি!
বৌমার সঙ্গে রান্না করছেন পুষ্পরানি
Follow Us:
| Updated on: Jun 05, 2021 | 11:53 PM

বীরভূম: বীরভূম থেকে ইলামবাজার যাওয়ার পথে একটি প্রত্যন্ত গ্রাম আছে। নাম বনভিলা। সেখানকার বাসিন্দা অশীতিপর পুষ্পরানি সরকার। প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা এই বৃদ্ধাই আজ ইউটিউব স্টার। দেশ-বিদেশের হেঁসেল ঘরের স্বাদ বাড়াচ্ছে তাঁর বাঙালি রান্নার রেসিপি।

বোলপুর থেকে ইলামবাজার যেতে জঙ্গল শুরুর প্রথমে একটি গ্রাম পড়ে নাম বনভিলা। সেখানেই ৮২ বছরের পুষ্পরানি সরকারের বাড়ি। গ্রামের খড়ের ছাউনি দেওয়া রান্না ঘরে বসে খাবার বানান পুষ্পরানি। আর সেই রান্নার ভিডিয়ো যায় ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশ বিঁভুয়ে থাকা পেটুক বাঙালির কাছে। শুধু বাঙালিই নয়, চিনারাও চেখে দেখছেন বৃদ্ধার বাতলে দেওয়া রান্নার রেসিপি।

এবার আসা যাক কীভাবে ইউটিউব স্টার হলেন পুষ্পরানি। কীভাবে তাঁর ইউটিউব পেজের সাবস্ক্রাইবার ছাড়াল ১.৫ মিলিয়ন। এর পিছনে কারই বা হাত রয়েছে।

পুষ্পরানির প্রিয় বড় নাতি কাজল সরকার। তাঁর কাছ জানতে চাওয়া হয়েছিল এবিষয়ে। তিনি জানান, বনভিলা এলাকা জুড়ে একাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেগুলির বেশিরভাগই বাঙালি পদের জন্য হিট। খাদ্য রসিকদের কাছে বেশ প্রিয় এখানকার বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁ। তাঁরও রান্নার প্রতি ভীষণ ঝোঁক।

ইউটিউবে বেশিরভাগ সময়ে সময় কাটে দেশ-বিদেশের রান্নার রেসিপি দেখে। কিন্ত সেখানে একবারে প্রত্যন্ত গ্রামের বাঙালি রান্নার রেসিপি খুঁজে পাননি তিনি। এ জন্য নিজেই একটা ইউটিউব চ্যানেল বানান। নাম দেন ‘ভিলফুড ব্লগ’। তবে তাঁর চ্যানেলের শেফ হলেন ঠাকুমা ও মা। ছোট থেকে ঠাকুমার হাতের যে সব পদ খেয়ে আসছেন তার স্বাদ নাকি কোনও রেঁস্তরাতেই পাননি তিনি।

এভাবেই ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় তাঁর ইউটিউব। মাত্র একমাসের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড় তে থাকে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা। এখন ১.৫ মিলিয়ন সাবক্রাইবার হয়েছে ভিলফুড ব্লগের।

গ্রাম বাংলার অতি সাধরণ রেসিপিতেই সবচেয়ে বেশি ভিউজ হয়েছে চ্যানেলের। যেমন কাচকলার কোপ্তা, বিভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি ভাপা ইলিশ, কচু শাক, থানকুনি পাতার চচ্চড়ি, তেল কই, লাউয়ের ঘণ্ট, কুমড়ো ফুলের রেসিপি। এই সব ভিডিয়ো দেখেছেন ১ মিলিয়ন লোক। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পুষ্পরানির রেসিপি পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও। ইউটিউব সংস্থার তরফে ২০২০ সালে’ ভিলফুড ব্লগকে দেওয়া হয়েছে গোল্ড প্লে সম্মান। ঠাকুমার হাতের তৈরি গ্রাম্য রান্নার রেসিপির ভিডিয়ো আপলোড করেই ইউটিউব থেকে বছরে ৮ থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা উপার্জন করছে ‘ভিলফুড ব্লগ’।

এমনকি এই ইউটিউবের চ্যানেলের চিনা গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। তার পর রয়েছে, বাংলাদেশ,আফ্রিকা, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকার বাসিন্দারা। এখন পুস্পরানি ও তাঁর নাতির ইউটিউব চ্যানেলে কোনও রান্নার ভিডিয়ো আপলোড হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা দেখে ফেলেন এক লক্ষ দর্শক!

এ পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে ‘ভিলফুড ব্লগ’- এ। শেফ পুস্পরানির কথায়, “আমি রাঁধতে ভালোবাসি। তবে কোনও দিন ভাবতে পারিনি মানুষজন আমকে চিনতে পারবে এই রান্নার জন্য! আনন্দ হয় নাতিদের জন্য। দুই নাতি, কাজল আর সুদীপ্ত আমার রান্নার ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছে দেশ-বিদেশে। অনেকে ফোন করে রেসিপি জানতে চান। অনেকের ভাষা বুঝতে পারি না। তবে সকলেই জানতে চায় কোন রান্না কীভাবে বানাতে হয়। আমি তাঁদের শুধু বলি ভিডিয়োটা দেখ।

আরও পড়ুন: ভ‍্যাকসিন কেনার জন্য বাটি হাতে ভিক্ষা! নজিরবিহীন ঘটনায় হইচই

পুষ্পরানির খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘেরা রান্নাঘরের শীল-নোড়ায় পেষা মশলা, আর বাগানের সবজি দিয়ে তৈরি একের পর এক পদের রান্না শিখছে দেশ বিদেশে বসে থাকা খাদ্য রসিকরা। পয়সা নয়, এটুকুই তাঁর কাছে বিশাল প্রাপ্তি, জানালেন অশীতিপর বৃদ্ধা।