ভ‍্যাকসিন কেনার জন্য বাটি হাতে ভিক্ষা! নজিরবিহীন ঘটনায় হইচই

"ভিক্ষা করে ভ‍্যাকসিনের টাকা জোগাড় করছি। সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমরাও বাঁচতে চাই। যতদিন না টাকা সংগ্রহ হবে আমরা এইভাবে ভিক্ষা চালিয়ে যাব। এরমধ্যে যদি প্রশাসন এগিয়ে এসে আমাদের ভ্যাকসিন দিয়ে দেয় তবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।''

ভ‍্যাকসিন কেনার জন্য বাটি হাতে ভিক্ষা! নজিরবিহীন ঘটনায় হইচই
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 05, 2021 | 4:51 PM

জলপাইগুড়ি: তাঁরা কোভিড যোদ্ধা। তবু সরকারি ভাবে করোনার ভ্যাকসিন পাননি। বেসরকারি ভাবে ভ্যাকসিন কেনার জন্য ভিক্ষে করতে বসলেন জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম কোভিড যোদ্ধা সমৃদ্ধ সেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রীন জলপাইগুড়ির ৪০ জন কোভিড যোদ্ধা। শনিবার এই ঘটনায় কার্যত হইচই পড়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরে।

এই করোনা কালে গত দেড় বছর ধরে কোভিড আক্রান্ত রোগী, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন, টোটো অ্যাম্বুল্যান্স, অ্যাম্বুল্যান্স, শববাহী গাড়ি ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ দিয়ে জলপাইগুড়িবাসীর পাশে রয়েছেন তাঁরা।

এতসব পরিষেবা দেওয়ার পরেও জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনকে বারবার আবেদন নিবেদন করার পরও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রীন জলপাইগুড়ির কোভিড যোদ্ধারা ভ‍্যাকসিন পাননি বলে অভিযোগ। তাই জলপাইগুড়ি শহরে করোনা সহ বিভিন্ন পরিষেবা চালু রাখতে গিয়ে তাঁরা যাতে করোনায় আক্রান্ত না হয়ে পড়েন, বেসরকারি ভাবে ভ্যাকসিন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

কিন্তু বেসরকারি ভাবে ভ্যাকসিন কিনে সংগঠনের ৪০ জন সদস্যদের দিতে গেলে প্রায় ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতটাকা একসঙ্গে যোগাড় করা স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে অসম্ভব বলে দাবি তাঁদের। তাহলে উপায়?

এরপর তারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পরিষেবা বজায় রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় তাঁরা ভিক্ষে করে ভ্যাকসিন কেনার টাকা যোগাড় করবেন।

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক শনিবার সকালে জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলা দুর্গা বাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে ভিক্ষে করতে বসেন তাঁরা। এতদিন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান স্বেচ্ছাসেবীরা। তাঁদের অসহায় অবস্থা দেখে সহানুভূতি প্রকাশ করে পাশে দাঁড়ান পথ চলতি মানুষেরা। প্রথম দিন এক ঘন্টায় ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।

ঘটনায় মিঠুন সাহা নামে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, “বাজার যাচ্ছিলাম। ভ্যাকসিনের জন্য ভিক্ষে চাইছে আচমকা এই দৃশ্য দেখে আমার খুবই লজ্জা লাগল। তাই আমার পক্ষে যা সাহায্য করার করলাম। তবে আমি চাই প্রশাসন এগিয়ে এসে ওনাদের সমস্যার সমাধান করুক। ওনারা শহরবাসীসর জন্য কাজ করেছেন।”

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, “জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন নিবেদন করে বিনামূল্যে কোভিড ভ‍্যাকসিন না পেয়ে অবশেষে বেসরকারি ভাবে টাকার বিনিময়ে ভ‍্যাকসিন নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা। ভ‍্যাকসিন কেনার জন্য অনেক টাকার দরকার। যা জোগাড় করা আমাদের সংগঠনের পক্ষে অসম্ভব। কারণ, আমাদের বেশিরভাগ সদস্যই বেকার। আর মানুষ আমাদের যেই টাকা সাহায্য করে তা নির্দিষ্ট খাতে খরচ করা হয়। তাই আজ আমরা জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলা দুর্গাবাড়ির সামনে সংগঠনের কিছু সদস্য হাতে বাটি নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “ভিক্ষা করে ভ‍্যাকসিনের টাকা জোগাড় করছি। সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমরাও বাঁচতে চাই। যতদিন না টাকা সংগ্রহ হবে আমরা এইভাবে ভিক্ষা চালিয়ে যাব। এরমধ্যে যদি প্রশাসন এগিয়ে এসে আমাদের ভ্যাকসিন দিয়ে দেয় তবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।”

ঘটনায় জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু টেলিফোনে জানান, এই সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কেউ দেখা করেননি। তবে সংস্থার নথি এবং কাজের রিপোর্ট নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন: বিজেপির এগিয়ে থাকা বুথে কাজ করলেই খুন! অভিযোগ তুলে ইস্তফা তৃণমূল প্রধানের