বগটুই: ২১ মার্চ, ২০২২ থেকে ২১ মার্চ, ২০২৩। এক বছর ঘুরে আবারও সংবাদ শিরোনামে বগটুই। নৃশংস ‘গণহত্যাকাণ্ডের’ এক বছর পূরণ হল। আবারও সংবাদ শিরোনামে সেই বগটুই। বীরভূমের রামপুরহাটের প্রত্যন্ত ওই গ্রামকে নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শহিদ সম্মান জানাতে কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল-বিজেপি। মিছিল করবে বামেরাও। সকাল থেকেই এত রাজনৈতিক নেতৃত্বের চাপে কার্যত দমবন্ধ অবস্থা নিহতদের পরিজনদের। কাদের মঞ্চে থাকবেন তাঁরা, এও ডাকছে, ও ডাকছে- দিশেহারা পরিবার। কী বলছেন মিহিলাল শেখ কিংবা শেখলালরা? মঙ্গলবার সকালে বগটুইতে গিয়ে দেখা গেল সাত সকালেই বাড়ি থেকে উধাও সন্তান- স্ত্রী- মা হারানো মিহিলাল শেখ। ফোন বন্ধ। বাড়িতে গিয়ে মিহিলালের খোঁজ করলেন তৃণমূল নেতা সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। বাড়িতে নেই তিনি। রয়েছেন স্বজন হারানো কিরণ শেখ। কোন মঞ্চে থাকবেন? উত্তর নেই কিরণের। কোন মঞ্চে থাকবেন? বিজেপি নাকি তৃণমূল? মৃতদের আত্মীয় সেকলাল শেখ বললেন, “আমরা সকলের সঙ্গেই আছি। তৃণমূলের বিধায়ক- নেতা- মন্ত্রী কেউ আমদের খোঁজ রাখেনি। একমাত্র ব্লক সভাপতি জিম্মি এবং মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন।”
রামপুরহাটের বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন বগটুইয়ের মৃতদের পরিজনরা। এখনও পর্যন্ত অনেকের ডেথ সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। নিহতের পরিজন শেখ নুর বলেন, “এখন পর্যন্ত সবে তিন জনের ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া গিয়েছে, সাত জনেরই মেলেনি। এত ভয়ানক একটা হত্যাকাণ্ড, একই বাড়িতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।” সরকারি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন পরিজনরা।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সকাল ১১টায় হওয়ার কথা। সাড়ে দশটা নাগাদ প্রায় শ’দুয়েক যুবক বাইক মিছিল করে গ্রামে ঢোকে। এদিনই বিকাল তিনটেয় বগটুই আসার কথা রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। বিকাল চারটেয় সিপিএমের মিছিল। ঘটনার এক বছরে বগটুইয়ের মাটিতে এখনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভিড়। কিন্তু এসবে বিব্রত নিহতদের পরিজনরা। শেখলাল মঙ্গলবার সকালে তড়িঘড়ি গ্রাম ছেড়ে বেড়িয়ে যান। সব মিলিয়ে চাপা আতঙ্ক। দুই তরফেই চাপ আসছে অনুরোধ আসছে তাঁদের মঞ্চে থাকার জন্য।
তৃণমূল ও বিজেপি- দুটি শহিদ বেদীর দূরত্ব চার মিটার। বিজেপির শহিদ বেদী মিহিলাল শেখের দরজায়। ঠিক তার উল্টো দিকে রাস্তার ধারে লালনের বাড়ির পাশে তৃণমূলের শহিদ বেদী। তৃণমূল নেতা অস্বীকার করলেও তড়িঘড়ি তৈরি শহিদ বেদীতে কোনও শহিদের নাম নেই। কাগজে নাম প্রিন্ট করে এনে আঁঠা দিয়ে সেলোটেপ দিয়ে তা লাগানো হয়েছে। স্পষ্টতই তা বোঝা যাচ্ছে। তবে মৃতদের নিয়ে রাজনীতি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ২১ মার্চ সন্ধ্যায় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাচক্রে মাঝ রাতেই বেপরোয়া বোমাবাজি হয় ওই গ্রামে। একটি বাড়িতে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপরের ঘটনা আরও ভয়ানক। অভিযোগ, আগুন ধরানোর আগে গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে বাড়ির মহিলা-শিশুদের কোপানোও হয়। অভিযোগ, ভাদু শেখ খুনের বদলা নিতে বগটুই গ্রামে ১০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে আট জনের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার কয়েকদিন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়। ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে উঠে আসে আনারুল শেখের নাম।