
বীরভূম: ধর্ষণ-গণধর্ষণ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু এই সবের মধ্যেও বীরভূমের গ্রামে আবারও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রকাশ্যে। শরীরে ডাইনি ভর করেছে, এই অপবাদ দিয়ে এক গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে নাচানোর অভিযোগ। গোটা গ্রাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিও মহিলা। সেই মহিলা ওঝাই ডায়নি তাড়াতে এইরূপ নিদান দিয়েছেন বলে দাবি। বিষয়টি খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে গিয়ে দুই ওঝাকে আটক করে। গৃহবধূকে উদ্ধার করে বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আটক হয়েছেন মহিলার স্বামী।
ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের রামপুরহাট থানার তাতঁবাঁধা গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এক গ্রামের গৃহবধূ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। বহু চিকিৎসা করেও কোনও ফল মেলেনি বলে পরিবারের দাবি। এরপরেই গ্রামবাসীরা ওঝার শরণাপন্না হন। অভিযোগ, ওঝা নিদান দেন গৃহবধূকে ডাইনি ধরেছে। তাঁকে সামনে এনে পুজো করলেই সব অসুখ সেরে যাবে।
পুজোর জন্য মোটা অঙ্কের খরচ রয়েছে। সেই মতো দুই পাড়ার পঞ্চাশটি ঘর থেকে চাঁদা তোলেন গ্রামবাসীরা। এরপরই রবিবার সকালে সীমন্তবর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে দুই ওঝা গ্রামে পৌঁছন। হনুমান বেদিতে শুরু হয় পুজো। সেখানে নিয়ে আসা হয় ডাইনি সন্দেহে গ্রামের ওই গৃহবধূকে। অভিযোগ, এরপর গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে সেখানে নাচানো হয়। ভিড়ে ঠাসা সেই দৃশ্য সকলেই উপভোগ করতে থাকেন।
বিষয়টির খবর পেয়েই প্রতিবাদ করে রামপুরহাট থানায় ফোন করেন গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ মির্ধা। খবর পেয়ে গ্রামে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। তাঁরা লাঠিপেটা করে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেন। এরপরেই মহিলা এবং তার স্বামীকে উদ্ধার করে রামপুরহাটে নিয়ে আসে। মহিলাকে ভর্তি করা হয় রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
ওই গৃহবধূর ছেলে অজয় রায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মা মানসিক অবসাদগ্রস্থ ছিল। আমরা অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই গ্রামবাসী মিলে ওঝা ডেকে রোগ দূর করাচ্ছিলাম। ওঝা আমাদের ভালোর জন্যই করছিল।”
গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ মির্ধা বলেন, “আমি খবর পেয়ে সেখানে যাই। দেখলাম এক গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে পুজোর নামে নাচানো হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করি। কারণ গ্রামের লোকের সামনে এভাবে কোনও মহিলাকে অর্ধনগ্ন করা উচিত নয়। এরপরেই আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসে থানায় ফোন করি। পুলিশ ওঝাকে আটক করেছে। গৃহবধূ এবং তার স্বামীকে নিয়ে গিয়েছে।”