বীরভূম: ভোটবঙ্গে হাইভোল্টেজ প্রচার। মঙ্গলবার ভোটবঙ্গে প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের প্রচারে জনসভা করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘প্রচারবাবু’ বলে কটাক্ষ করেন। তবে এদিনও কেষ্ট ভূমে দাঁড়িয়ে মমতার মুখে শোনা গেল কেষ্ট স্তূতি। কী বললেন এদিনের কথায় দেখুন এক নজরে…
শীতলকুচির ঘটনা মনে আছে? চার জন সংখ্যালঘু ও এক জন রাজবংশীকে গুলি করে মেরেছিল, আমি ছুটে যাই। তিনি এখন আপনাদের এখানে প্রার্থী। কাল শুনলাম তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফাঁসিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাউকে ফাঁসানোর ক্ষমতা নেই। আপনার বিরুদ্ধে তো ডিপি চলছে। আপনাকে তো রাজ্য সরকার ক্লিয়ারেন্স দেয়নি। আপনি বিজেপি করছেন করুন, আমি আপনার বিরুদ্ধে কথা বলতাম না, যদি আপনি এই বিবৃতি না দিতেন। আমি যদি ফাঁসাতাম ভালো করে ফাঁসাতাম। বিএসএফ কার কথায় গুলি চালিয়েছিল? এই প্রশ্নটা শুধু করুন। বিজেপি করছেন, কারোর জীবন কাড়বেন না।
তোমরা জিতবে, এটা নিশ্চিত থাকলে এত ভোট দেখানোর কী আছে? ভোটের সময়ে প্রতিবার কেষ্টকে ঘরবন্দি করত, তাতে কী ভোট আটকাতো? এবারও বলেছিল উদয়ন গুহকে গৃহবন্দি করতে, তাতে কী খুদে মন্ত্রী জিতবে? আমি একটা এফআইআর কপি পেয়েছি। বর্ডার এরিয়ায় গিয়ে বলছে বিজেপিকে ভোট দিতে, কেন দেব বলেছিল ওরা, তাতেই গুলি চলে যাচ্ছে।
আপনাদের এখানে চাকরির অসুবিধা নেই। বিজেপির একটা কথায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা কাজ করছেন, তাঁদের বলছে ৮ বছরের বেতন ফেরত দাও সুদ সহ! তাঁরা পারে? নির্বাচন চলাকালীন বিজেপির এক গদ্দার বললেন বোমা ফাটালেন! আরে বোমা ফাটানোর হলে মমতা ব্যানার্জির ওপর রাগ হলে মেরে দে, অভিষেককেও তো খুন করতে গিয়েছিলি, ধরে ফেলেছিলাম আমরা, কীভাবে করেছিলি, তার বাড়ি পর্যন্ত রেইকি করেছে, ফেস টাইমে ফোন করেছে, কথা বলতে চেয়েছিল, সময় দিলেই গুলি করে পালিয়ে যেত। ওরা চায় যারা ওদের বিরুদ্ধে কথা বলে মেরে দাও।
ডিসেম্বর মাসে বাংলার বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা ১১ লক্ষ লোক পাবেন। সেই টাকা শেষ হলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাবেন।
আমাদের এমপি-রা ধর্না দিয়েছে, মার খেয়েছে, প্রতিবাদ করেছে। বড় মন্ত্রী ছেড়ে দিন. খুদে মন্ত্রীরও কত তেল, একবার মাছ ভাজার জন্য এক ফোঁটা তেলও দিল না। দেখা করল না। আমরা কথা দিয়েছিলাম। একশো দিনের কাজের টাকা আমরা দিয়েছি। ওরা একশো দিনের কাজ বলে দিত ৩০ দিন। এখন আমরা কর্মশ্রী করেছি। ৫০ দিনের গ্যারান্টি কাজ। ১১ লক্ষ বাড়ি করে দেব।
বলছে না, ইসবার চারশো পার। মনে আছে ২০২১ সালে কী বলছে, ২০০ পার করার কথা বলেছিল। ১০০ই পার হতে পারেনি। প্রথম দফা নির্বাচনের পরই ওদের বুক ধড়ফড় করা শুরু করে দিয়েছে। লোকে ওত বোকা নয়। আমি সংবাদ দেখিনি। মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে জলসা, জি টিভির দিকে তাকাই। যে গুলো সিরিয়াল দেখায়। হঠাৎ দেখি, বলছে বিনা পয়সায় রেশন নাকি ওরা দিচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে যাচ্ছি। কোভিডের সময়ে কিছুদিন দিয়েছিল, বন্ধ করে দেয়। নির্বাচনের আগে ৬ মাসের জন্য চালু করেছে। বাংলায় বিনা পয়সায় রেশন দেওয়ার জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়। আর ওদের ছিল সাত হাজার কোটি টাকা। মানে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২ বছর ধরে ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। তার মানে ৩০ হাজার কোটি টাকা আমরা দিই। রেশন আমরা দিই। মিথ্যা কথার দল।
বিভাজনের রাজনীতি বিজেপি করছে। বিজেপি সিপিএম, কংগ্রেসের হাত ধরেছে কেন? ওরা চায় সংখ্যালঘু ভোটটা তৃণমূল না পায়। আর ওরা তৃণমূল ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। বাংলার আমরা সিপিএমের অত্যাচার ভুলব না। ৩৪ বছর যে অত্যাচার করেছে। আর কংগ্রেস, বাংলায় যেভাবে আমাদের রোজ গালি দেয়। বাংলায় ওদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। এবার বলতেই পারেন দিল্লিতি আমরা কী করব? হ্যাঁ দিল্লিতে ওদের সঙ্গে মিলে ইন্ডিয়া জোটকেই ক্ষমতায় আনব। কিন্তু বাংলায় লড়াইটা তৃণমূলের। বাংলায় তৃণমূল যত বেশি সিট পাবে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা শক্তিশালী হবে।
আগে বলেছিল মমতাদিদি দুর্গাপুজো করতে দেন না। আর এখন সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলছে। আজ পর্যন্ত কোনও মহিলাদের কোনও সম্মানীয় পদে দিয়েছেন? মহিলাদের সম্মানের কথা তো বলেন? দেননি। রাষ্ট্রপতি পদটা তো সবার জন্য। আমরা সবাই মিলে নির্বাচিত করি। তাও বিজেপির লোক ছাড়া দেন না।
যাঁরা বীরভূমে ভোট চাইছেন, তাঁরা বীরভূমের জন্য কী করেছেন? আমরা বীরভূূমের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের জিতিয়েছেন। আপনাদের এমপি লোকসভায় আপনাদের হয়ে লড়েছেন। তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। শতাব্দী রায়, অসিত মালকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। চাঁদুর বাড়িতে হঠাৎ চলে গেল কেন? আমাকে বলুক না বলুক, আমি বুঝি, বলে তৃণমূলটা করবে না বসে যাও, কবে কাজলকে গিয়ে বলবে… এসব খেলা চলছে। ভয় দেখানোর খেলা চলছে। NRC, CAA, খেলা চলছে। একটা সরকার, একটাই পার্টি, প্রচারবাবু যা বলে দেবে, এবার সেই জামাকাপড়ই পরতে হবে। হিন্দু? আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমাদের হিন্দুত্বের অস্তিত্বও থাকবে না। আমরা অন্য হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি, যেখানে একই সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম-সংখ্যালঘু সবাই বিরাজ করে। সেই হিন্দুত্ব থাকবে না।
তারা মা ডেভলপমেন্ট বোর্ড করা হয়েছে। মা তারার জন্য নতুন গেট করা হয়েছে, নতুন ভোগ, পাঁচ বছর আগেও যাঁরা এসেছেন, তাঁরা এখন এলে চমকে যাবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই খবরের কাগজে দেখা যায় মোদীবাবুর ছবি, আমি বলি প্রচারবাবু। টিভিতে দেখবেন প্রচারবাবু। চাল যেখানে দিচ্ছে, সেখানেও প্রচারবাবুর ছবি। তিনি নাকি সেরার সেরা। আজ ভারতের গণতন্ত্রকে জেলখানায় ভরে দিয়েছে। যার জন্য আমরাও দুঃখিত।
কেষ্ট আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাঁকে আর তাঁর মেয়েকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দেখবেন নির্বাচনের পর ছেড়ে দেবে। ইচ্ছা করে রেখে দেওয়া হয়েছে। যাতে সে তৃণমূল করতে না পারে। নির্বাচনের আগে বেরোতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির নেতাদের মুখ থেকে যে কথাগুলো বেরোচ্ছে, ভেদাভেদের প্রাচীর তৈরি করছে, তার জন্য আমি মর্মাহত। আগামী দিনে এর মূল্য দিতে হবে। ভাগাভাগি করে দেশ হয় না। নির্বাচন হয় না।