বীরভূম: তৃণমূলের কার্যালয় থেকে এবার মুছল অনুব্রত মণ্ডলের নাম, ছবি। বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতার নাম এখন আবছা দলেরই কার্যালয়ের দেওয়ালে। ছবিতেও চুন পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, এখানে এক সময় অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন বটে। তবে এখন তাতে সাদা রং চড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নানুরের হোসেনপুরের এই ঘটনায় চাপানউতর তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন নানুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য।
হোসেনপুর গ্রামে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার মুখেই দেওয়ালে একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি আঁকা, অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। শুধু তাই নয়, ওই কার্যালয়েরই আরেকটি দেওয়ালে একদিকে লেখা ‘মমতা ব্যানার্জী জিন্দাবাদ’, অন্যদিকে ‘অনুব্রত মণ্ডল কেষ্টদা জিন্দাবাদ’ লেখা। সৌজন্যে হোসেনপুর তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি।
কিন্তু শুক্রবার দেখা গেল সেই দেওয়াল থেকে ‘অনুব্রত মণ্ডল কেষ্ট’ শব্দ তিনটি মুছে দেওয়া হয়েছে। ছবিতেও সাদা রং। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, কারা এমন ঘটনা ঘটাল বোঝা যাচ্ছে না। তবে নানুরের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “এটা স্পষ্টভাবে আমি জানি না। তবে এমনও হতে পারে পুজোর আগে হয়ত দেওয়াল নতুন করে রং করা, ধোয়া মোছা করা চলছে। হয়ত ছবি মুছে নতুন করে ছবি করবে। আমি খোঁজ নিয়ে বলব।”
প্রসঙ্গত, এই নানুর সবসময়ই বীরভূমের বাকি সমস্ত জায়গা থেকে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। এই নানুরের মুখ কাজল শেখ। যে কাজলের সঙ্গে অনুব্রতর অম্লমধুর সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। নানুরের রাজনীতির অলিন্দে কান পাতলে এমনও শোনা যায়, অনুব্রত কোনওদিন উঠতেই দিতে চাননি কাজলকে। সে কারণে গদাধর হাজরাকে একসময় লাইম লাইটেও তুলে আনেন ‘কেষ্টদা’। কাজল কার্যত কোণঠাসাই হয়ে গিয়েছিল।
তবে রাজনৈতিক মহলের মত, অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই আবারও গ্রহ ঘুরতে শুরু করে কাজলের। জেলার কোর কমিটি থেকে এখন কাজল শেখ বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি। অনুব্রতর এক সময়ের ‘চোখের বালি’ কাজল এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরই ‘চোখের মণি’। অন্তত ভরসা তো বটেই, বলছেন রাজনীতি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ যাঁদের প্রধান কাজ। সেই কাজলের নানুরে পুজোর মুখে ‘ভ্যানিশ’ অনুব্রত। নিন্দুকেরা অনেকরকম হিসাবই করছেন।
এমনও শোনা যাচ্ছে, দলীয় কার্যালয়ের সামনে ইতিমধ্যে কাজল শেখের ব্য়ানার লাগানো হচ্ছে। বীরভূমে তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কে কোথায় ব্যানার লাগাচ্ছে, কী মুছছে সেটা সবসময় জানা বা বোঝা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত ছবি লাগানো যেতেই পারে। তবে দলের এ বিষয়ে কোনও অনুমতি রয়েছে কি না আমার জানা নেই। অন্যদিকে কাজল শেখ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।