‘সন্ধির’ পথে শতাব্দী-অনুব্রত! ৩ বছর পর জেলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত দুই নেতৃত্ব

এই পরিস্থিতিতে, প্রায় তিন বছর পর বৈঠকে মুখোমুখি হতে চলেছেন শতাব্দী-অনুব্রত। শেষ লোকসভা নির্বাচনের আগে একবার মাত্র জেলা কমিটির বৈঠকে দেখা গিয়েছিল শতাব্দীকে। তিনবছর পর আবার বৈঠকে তাঁরা।

'সন্ধির' পথে শতাব্দী-অনুব্রত! ৩ বছর পর জেলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত দুই নেতৃত্ব
বৈঠকে যোগদান, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 25, 2021 | 9:49 PM

বীরভূম: বঙ্গ রাজনীতিতে তাঁদের ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’ বরাবরই সুবিদিত। তিন তিন বার বীরভূমের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরেও তৃণমূল নেত্রী শতাব্দী রায়ের সঙ্গে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘সুসম্পর্ক’ স্থাপিত হয়নি। কিন্তু, রবিবার যেন এক লহমায় বদলে গেল সমস্ত ছবি। বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে জেলা কমিটির বৈঠকে এসে উপস্থিত হলেন শতাব্দী রায়। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই আসেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে কি তিন বছর পর বরফ গলছে?

তৃণমূলে থাকলেও বারবারই চর্চায় এসেছে কেষ্ট বনাম শতাব্দীর ঠাণ্ডা লড়াই। সেভাবে স্পষ্ট করে কখনও জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ না খুললেও বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শতাব্দী। জেলা সভাপতির বিতর্কিত মন্তব্যের সমালোচনাও করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে একুশের বিধানসভা নির্বাচন আবহে এই ক্ষোভ থেকেই ‘বেসুর’ বাজতে শুরু করেন সাংসদ অভিনেত্রী। তাঁর ফেসবুক ফ্যান পেজের থেকে শেয়ার হওয়া একটি পোস্ট ঘিরে তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।

বীরভূমের মানুষের উদ্দেশে লেখা সেই পোস্টে শতাব্দী অভিযোগ করেন, দলের কেউ কেউ চাইছেন না তাঁর সঙ্গে বীরভূমের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকুক। কারও নাম না নিয়ে শতাব্দী সেই পোস্টে লেখেন, “এলাকার সঙ্গে আমার নিয়মিত নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু ইদানিং অনেকে আমাকে প্রশ্ন করছেন কেন আমাকে বহু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। আমি তাঁদের বলছি যে আমি সর্বত্র যেতে চাই। আপনাদের সঙ্গে থাকতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু মনে হয় কেউ কেউ চায় না আমি আপনাদের কাছে যাই। বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেওয়া হয় না। না জানলে আমি যাব কী করে? এ নিয়ে আমারও মানসিক কষ্ট হয়।” তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘প্রিয়’ শতাব্দীর এই সুর বদল ভাল চোখে দেখেনি ঘাসফুল শিবির।

শুধু ফেসবুক পোস্ট দিয়েই ক্ষান্ত হননি সাংসদ অভিনেত্রী। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। পরিচিতদের সঙ্গে এমনকী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করার জল্পনা উস্কে দেন সাংসদ। দলের সঙ্গে তাঁর তাল কেটেছে এমন প্রাথমিক ভাবে মনে হলেও শতাব্দীর নিশানায় যে অনুব্রতই তা আর আলাদা করে বুঝতে অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক মহলের। শতাব্দীর বেসুর হওয়ার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সাংসদের বাড়িতে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ সারেন অধুনা তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। অনতিপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন শতাব্দী। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, সমস্যা মিটে গিয়েছে। বৈঠক সেরে শতাব্দীও জানিয়েছিলেন, দলের সমস্যা দলেই মিটিয়েছেন তিনি। দল ছেড়ে যাচ্ছেন না। তৃণমূলেই থাকছেন তিনি। তৃণমূলের তরফে তড়িঘড়ি শতাব্দীকে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতির পদও দেওয়া হয়।

দলে ফিরলেও কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘স্নেহের কেষ্টর’ সঙ্গে ‘সম্মানজনক দূরত্ব’ বজায় রেখেছিলেন শতাব্দী। নির্বাচন আবহে দলের প্রচারে অনুব্রতের পাশে দেখা যায়নি তাঁকে। পাল্টা ‘বীরভূমের নায়ক’ বলেছিলেন, “তিনি সাংসদ মানুষ। ব্যস্ত। আমরা তো কর্মী। কাজ করি। ওঁর যা ইচ্ছে ওঁ করবেন।” বীরভূমে অনুব্রতর দাপট অজানা নয়। ফলে, শতাব্দী দলকে সহযোগিতা করছেন না এমন অভিযোগও পাল্টা এসেছিল কেষ্টানুগামীদের তরফে। নির্বাচনে অবশ্য, জয়ের মুখ দেখেছে তৃণমূল। এগারোটি আসনের দশটিতেই জয় পেয়েছে ঘাসফুল শিবির।

এই পরিস্থিতিতে, প্রায় তিন বছর পর বৈঠকে মুখোমুখি হতে চলেছেন শতাব্দী-অনুব্রত। শেষ লোকসভা নির্বাচনের আগে একবার মাত্র জেলা কমিটির বৈঠকে দেখা গিয়েছিল শতাব্দীকে। তিনবছর পর আবার বৈঠকে তাঁরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, তৃণমূলের জেলা কমিটির এই বৈঠকটি আসলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য আয়োজিত। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এই বৈঠকে কেবল সাংসদ বিধায়করা নন, উপস্থিত থাকছেন ব্লক সভাপতি থেকে শুরু করে বুথ স্তরের নেতৃত্বও। নির্বাচনের পর থেকেই দলের আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকোন্দলে রাশ টানতে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করেছে ঘাসফুল। ফলে, দ্বন্দ্ব মিটুক বা না মিটুক দলের স্বার্থেই কার্যত বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন অভিনেত্রী সাংসদ শতাব্দী রায় ও জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিন, অভিনেত্রী সাংসদ বলেন, “আজ বৈঠক ছিল। কিছুদিন পর ব্লক সভাপতিদের সঙ্গেও বৈঠক করব। যেখানে যেখানে হার হয়েছে , সেই জায়গাগুলোতে কেন হার হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। আমি বলেছিলাম সিস্টেমে থেকে কাজ করতে পারছি না। অনুব্রত মণ্ডলের নাম করিনি কখনও। কিছু কিছু রদবদল হয়েছে। যেগুলো হওয়া দরকার ছিল। কারণ, এটা অনেকটা পরীক্ষার মতো। বারবার যদি হার কোনও জায়গায় তাহলে বুঝতে হবে নেতৃত্বের সমস্যা। সেক্ষেত্রে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁকে পদ ছাড়তে হবে। তিনি আবার অনত্র নেতৃত্ব দেবেন। এইভাবে রদবদল করেই তো কাজ এগোবে।”

আরও পড়ুন: ‘পাগলে কী না বলে’, ‘বিজেপির মুখপাত্র’ রাজ্যপাল, তোপ তৃণমূলের