পূর্ব মেদিনীপুর: ২০১৫ সাল। চণ্ডীপুরের এক জনসভায় মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠেছেন তৎকালীন তৃণমূল যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসময়, ভরা জনসভায় মঞ্চে উঠেই তাঁকে সপাটে চড় মারেন এক যুবক। নাম দেবাশীস আচার্য। সেই অভিযোগের পর ছয় বছর কেটে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার, রহস্যজনকভাবে মৃত্য়ু হল দেবাশীসের। বিজেপির (BJP) অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে খুন করেছে তৃণমূল। যদিও, বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে কোলাঘাটের হলদিচক এলাকায় এনএইচএআই-এর (NHAI) কর্মীরা আহত অবস্থায় ওই যুবককে রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। তখনও তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। দুপুরের পর থেকে ক্রমশ তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। বিকেলে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় দেবাশীসের। তখনই তাঁর পরিচয় জানা যায়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন দেবাশীসের বন্ধু ও পরিজনরা। আসেন বিজেপির কর্মী সমর্থকেরাও।
দেবাশীসের বন্ধু সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, “বুধবার রাতে আমরা দেখা করতে বেরিয়েছিলাম। সেইসময়ে, দেবাশীসের একটা ফোন আসে। তখন ও একটু আসছে বলে চলে যায়। আমরা রাতে সাড়ে ন’টা নাগাদ তিন বন্ধু বেরিয়েছিলাম। দেবাশীসের ফোন আসার পরেই ও মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ও ফিরে আসেনি। ওর ফোনও বন্ধ ছিল। সকালেও ওর বাড়ির লোক বলল ও ফেরেনি। খোঁজখবর করতে জানলাম ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কে বা কারা মেরেছে কিছুই জানি না। ওর মোটরসাইকেলটাও পাওয়া যায়নি।”
দেবাশীসের অন্য এক বন্ধু শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমরা রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ চা খেতে যাই। সেইসময়ে দেবাশীসদার ফোন আসে। ও আমাদের অপেক্ষা করতে বলে চলে যায়। তারপর আর ফেরেনি। ফোনের পর ফোন করেছি। ফোন বন্ধ ছিল। এত কিছু যে হতে পারে তা তো বুঝিনি। তারপর আমরা বাড়ি চলে আসি। আমি আর সঞ্জয় ছিলাম। সকালে খবর পাই হাসপাতাল থেকে। এসে শুনি মারা গিয়েছে। দাদার মাথায় আর গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমার অনুমান,দাদা অনেকের ভাল করেছে। তাই চক্রান্ত করে মারা হয়েছে দাদাকে। পোস্টমর্টেম হলেই সব জানা যাবে।”
তমলুকের বিজেপি জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, “দেবাশীসকে চক্রান্ত করে মারা হয়েছে। কী হয়েছে তা বলতে পারব না। প্রকৃতভাবে, এজেন্সি দিয়ে তদন্ত হোক। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জের না অন্যকিছু তা জানি না। শুধু তদন্ত চাই।” মৃত দেবাশীসের পরিবারের দাবি, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের ছেলেকে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনাক সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছে আচার্য পরিবার।
যদিও এই ঘটনায় তৃণমূলের (TMC) তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও উত্তর মেলেনি। তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অতীশ বিশ্বাস বলেন, “আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছি। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল জানিয়েছে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। আমরা তদন্ত করে দেখছি।”
সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে অভিষেককে (Abhisek Banerjee) চড় মারার ঘটনায় সেই জনসভাতেই দেবাশীসকে মারধর করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। সুস্থ হয়ে পরিবার-সহ কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন দেবাশীস। সংবাদমাধ্য়মের সামনে ক্ষমাও চান তিনি ও তাঁর পরিবার। এমনকী, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পিসি, অভিষেক আমার দাদা’ এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছিল দেবাশীসের মুখে। তারপর থেকে তৃণমূলের হয়েই কাজ করবেন এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেবাশীস। একুশের নির্বাচনের আগে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কণিষ্ক পণ্ডার হাত ধরে পরিবার-সহ বিজেপিতে যোগ দেন দেবাশীস। তাঁর মা বিজেপি মহিলা মোর্চার সদস্যা।
ঘটনায়, বিজেপি নেতা কণিষ্ক পণ্ডার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “গতকাল রাত থেকে দেবাশীস বাড়ি আসেনি। খোঁজখবর করেও পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে তমলুক জেলা হাসপাতালে ওকে পাওয়া যায়। দেবাশীস আমাদের সক্রিয় কর্মী ছিল। ওকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। আমরা এফআইআর করতে প্রস্তুত। দেবাশীসের খুনীদের শাস্তি চাই।”
আরও পড়ুন: ‘মহামানব’ অনুব্রত! পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন বিডিও, ‘ভাল ছেলে’ প্রশস্তি কেষ্টর