গরুপাচারের সব তথ্য ফাঁস করতে আঘধণ্টা সময় চাইল এনামুল

ঋদ্ধীশ দত্ত |

Feb 03, 2021 | 9:47 PM

যখন এনামুল হককে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিশের ভ্যানে বসে সে সাংবাদিকদের বলে, "আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক। আধঘণ্টায় সব বলে দেব।"

গরুপাচারের সব তথ্য ফাঁস করতে আঘধণ্টা সময় চাইল এনামুল
এনামুল- নিজস্ব চিত্র

Follow Us

পশ্চিম বর্ধমান: এর আগে সে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেছিল, “আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে সিবিআই (CBI)।” বুধবার ফের একবার জামিন নাকচ হওয়ার পর গরুপাচার কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক (Enamul Haque) আসানসোল আদালত চত্বরে সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে বলল, “আমাকে টিভি চ্যানেলের আধঘন্টা লাইভে বসার সুযোগ দিন, অনেক কিছু বলব।”

বুধবার দিনভর সওয়াল-জবাবের শেষে আবারও জামিন হল না গরুপাচার মামলায় ধৃত এনামুল হকের। আরও ৭ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। এদিন সিবিআইয়ের তরফে বেশকিছু তথ্য-সহ কাগজ বিচারকের কাছে জমা দেওয়া হয়।

সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু তাঁর জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “আমার মক্কেল সবমিলিয়ে ৮৪ দিন সিবিআইয়ের সংযোগে রয়েছেন। যারমধ্যে ৫৫ দিন জেলে কাটাতে হয়েছে। তাঁকে জেরা করেও প্রমাণ দেওয়ার মতো কোন তথ্য এখনও সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। এই মামলায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ২ জনের নামে পরোয়ানা জারি হয়েছে। সেই দু’জনের নামে অন্য মামলাও রয়েছে। তাঁরা কোথায় কেউ জানে না। সিবিআই এখনও পর্যন্ত এমন কোন কিছু জোগাড় করতে পারেনি, যাতে প্রমাণ হয় যে এনামুল গরুপাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।”

সওয়াল করে এজলাসে আইনজীবী আরও বলেন, “এখানে কোনও গরুপাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে গরুপাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। গরু নিলাম করা হয়েছে। সেই সব গরু তো চাঁদ থেকে আসেনি। রাস্তা দিয়ে নিয়ে আনা হয়েছে। সেই সব গরু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে। সেখানে কাউকে এই মামলায় ধরা হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, ওই রাজ্যগুলোয় অন্য একটা দলের সরকার আছে বলে সেখানে কিছু করা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সরকার রয়েছে, তাই এই মামলায় এত তৎপরতা।”

অন্যদিকে, এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী কালিচরণ মিশ্র ও রাকেশ সিং পাল্টা সওয়াল করে বিচারককে বলেন, “আমরা অনেক কাগজ জমা দিয়েছি। এখনই তাঁকে জামিন দেওয়া হলে এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। তাঁকে আরও ১৪ দিনের জন্য জেলে পাঠানো হোক।” তখন এনামূল হকের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, “তা কী করে হবে? ৫৫ দিন তো জেল হাজতে থাকা হয়ে গেছে।” এরপর বিচারক সিবিআইয়ের জমা দেওয়া তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখেন।

আরও পড়ুন: বাংলায় ভোট প্রচারে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা করে বাড়তি খরচে অনুমতি কমিশনের

সওয়াল-জবাবের শেষে বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ৭ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক জানিয়েছেন, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী দিন শুনানির জন্য ধার্য হয়েছে। সেদিন আবার এনামুল হককে এজলাসে পেশ করা হবে।

এদিকে, এদিন শুনানির পরে বিচারকের নির্দেশ শেষে যখন এনামুল হককে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন পুলিশের ভ্যানে বসে সে সাংবাদিকদের বলে, “আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক। আধঘণ্টায় সব বলে দেব। আমার কাছে সব তথ্য আছে।” প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আসানসোল আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিল এনামুল। তারপর থেকে সে জেল হেফাজতেই আছে।

আরও পড়ুন: ‘আমি মুখ খুললে বটগাছ নড়ে যাবে’, শুরুটা করেছিলেন মমতা, পর্দাফাঁস করলেন রাজীব

Next Article