পশ্চিম বর্ধমান: এক সময়ের ভরসা আজ প্রতিপক্ষ। চেনা মাটিতে দুই পক্ষের মরিয়া লড়াই। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে ‘এপিসেন্টার’ নন্দীগ্রামে মমতা (Mamata Banerjee) বনাম শুভেন্দু (Suvendu Adhikary)। রাজ্যের চোখ যখন নন্দীগ্রামে, তখন এই লড়াইতে দুই তৃণমূল-বিজেপির হেভিওয়েটের মাঝে নজর কাড়ছে নতুন তরুণ মুখ সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়।
আসানসোল কুলটির চলবলপুর গ্রামেই থাকেন মীনাক্ষি (Minakshi Mukhopadhay)। যৌথ পরিবারেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই দেখেছেন নিজের মা-বাবাকে পার্টির জন্য কাজ করতে। মীনাক্ষির বাবা মনোজ মুখোপাধ্যায় সিপিআইএমের কুলটি এরিয়া কমিটির সম্পাদক। মা পারুল মুখোপাধ্যায় ব্লকের মহিলা সম্পাদিকা। বাড়িতে সবাই পার্টি কর্মী।
মেয়ে যখন খবরের শিরোনামে তখন স্মৃতিমেদুর হয়ে মনোজ জানান, ছোট থেকেই অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছেন। পড়ার জন্য মেয়েকে ভাল বই কিনে দিতে পারেননি। সেই মেয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে এমফিল-এর গবেষণা শেষ করেছেন মীনাক্ষি।
মমতা-শুভেন্দুর মতো পাল্লাভারি নেতৃত্বের মাঝে মীনাক্ষি কতটা মানুষের কাছের হয়ে উঠতে পারেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী রাজনৈতিক মহল। ১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার যখন নন্দীগ্রামে ভোটপর্ব চলছে তখন মীনাক্ষির পরিবারের নজর টেলিভিশনের পর্দায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে নন্দীগ্রামে (Nandigram)। হামলা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর গাড়িতেও। এর আগে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দুইবার ‘হামলার’ সম্মুখীন হয়েছেন মীনাক্ষি। পথে বসে বিক্ষোভও করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ভোটের দিনও সিপিএম কর্মীদের বুথ পরিদর্শনে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের উপর কোনও হামলা হোক চান না মনোজবাবু ও পারুল দেবী।
নন্দীগ্রামের মতো এপিসেন্টারে মীনাক্ষির জয় নিয়ে কতটা আশা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা? একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রামের (Nandigram) আনাচে-কানাচে চোখ রাখলেই স্পষ্ট, দাদা-দিদির লড়াইয়ে মীনাক্ষি নিমিত্ত মাত্র। দেওয়াল লিখন থেকে ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন সর্বত্রই এগিয়ে তৃণমূল-বিজেপি (TMC-BJP)। যেখানে গোটা মেদিনীপুর চষে বেড়াচ্ছেন মমতা-শুভেন্দু সেখানে, নন্দীগ্রামের ঘরে ঘরে গিয়েছেন মীনাক্ষি। কিন্তু তাতে ঠিক কতটা জয়ের রাস্তা সহজ হয়েছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, নন্দীগ্রামে এ বারের নির্বাচনে মেরুকরণের চড়া দাগ স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বামেদের (CPM) ভোট। সেখানে সংযুক্ত মোর্চার তরফে আইএসএফ প্রার্থী দিলে ভোট কাটাকাটির চেষ্টা করতেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, সেখান থেকে সিপিএম প্রার্থী দেওয়ায় পুরো ছকটিই ঘুরে গিয়েছে। মীনাক্ষি যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশও ভোট কাটেন তার বিস্তর লাভ পাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও এইসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন খোদ মীনাক্ষি। মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে সজাগ করার পাশাপাশি শিক্ষা-স্বাস্থ্যের দাবি নিয়েই নির্বাচনে লড়ছেন মীনাক্ষি। কুলটি কখনও উত্তেজনা, সন্ত্রাস দেখেনি। দেখেনি হামলা-দাঙ্গা। নন্দীগ্রামে নির্বাচন সেরে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরুক এমনটাই চান মীনাক্ষির পরিবার।
আরও পড়ুন: ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামের ‘কুরুক্ষেত্রে’ কেন এলেন মমতা?