
শিলিগুড়ি: শিলিগুড়িতে একটি বাড়ির সামনে রাখা রাখা কফিন। কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। শুরু হল জটলা। কে মারা গেলেন? কেনই বা কফিন রাস্তায় এভাবে পড়ে আছে? রবিবার সকাল ১১ টা নাগাদ এই দৃশ্য দেখে কার্যত চমকে যান শিলিগুড়ি পৌর নিগমের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষজন। যার জেরে খেলাঘর মোড় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। গণ্ডগোলের আঁচ পেয়ে কেউ কেউ ফোন করেন পুলিশকেও। পরে যা জানা গেল, তা কার্যত চমকে ওঠার মতো।
গতকাল অর্থাৎ রবিবার স্থানীয় বাসিন্দারা ফোন করেন স্থানীয় কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের। সকলেই জানান, তাঁদের কোনও কিছুই জানা নেই। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা ফোন করেন শিলিগুড়ি থানার পুলিশকে। খবর পাওয়া মাত্রই শিলিগুড়ি থানার দুটি পুলিশ ভ্যানে পুলিশ ফোর্স এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে।
পুলিশ এসে ওই যুবকদের এবং মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিবেশ দিবস নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে। তার শুটিং চলছে। ওই কফিনটিকে একটি মৃত গাছের সঙ্গে তুলনা করে শুটিং চলছিল। একের পর এক গাছ কাটা এবং হাইওয়ের জন্য প্রচুর গাছ কাটা যাওয়ায় বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে। ওই কফিন টিকে একটি মৃত গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে। স্কুল ছাত্র ও ছাত্রীদেরকে দিয়ে অক্সিজেনের অভাব বোঝানো এবং আগামী প্রজন্মের অক্সিজেন নিয়ে ঘুরতে হবে এমন বার্তা দেওয়ার জন্যই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি ডকুমেন্টারি তৈরির উদ্যোগ নেয়।
বস্তুত, কয়েকদিন আগেই ব্লগার জ্যোতি গ্রেফতারের পর থেকে সতর্ক পুলিশ প্রশাসন।
কোনও ফটোগ্রাফি করার ক্ষেত্রে নিতে হবে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি, এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুমতি নেয়নি বলেই অভিযোগ। অপরদিকে সাতসকালে বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে কফিন দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া লোকজনের বক্তব্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উচিত ছিল পুলিশ প্রশাসনের এবং কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়ে শুটিং করতে আসা। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। পুলিশকে ফোন করি। কাউন্সিলরকে খবর দেওয়া হয়। পরে বুঝি শুটিং হচ্ছে।”
শিলিগুড়ি থানার পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সাফ জানিয়ে দেয়, পুলিশ প্রশাসন এবং শিলিগুড়ি পৌরনিগমের অনুমতি ছাড়া শুটিং করা যাবে না। এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সদস্যরা প্যাকআপ করেন। তাদের দাবি, বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না যে শহরে শুটিং করতে গেলে পুলিশ এবং পৌরনিগমের অনুমতি প্রয়োজন। এই কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁরাও ক্ষমাপ্রার্থী। শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার সদস্যা সুমিত্রা পাল বলেন, “আমি শিক্ষিকা। আমরা চেয়েছিলাম যে গাছ লাগানো নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির। সেই কারণেই এই ডকুমেন্ট্রি। তবে জানতাম না এত কিছুর প্রয়োজন।”