শিলিগুড়ি: খোলা যাচ্ছে না ত্রিহানা চা বাগান। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের রোষে কার্যত বন্ধ হয়েছে রয়েছে বাগানটি। গুরুতর অভিযোগ চা বাগান মালিকের। বাগান লকআউট থাকায় গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ হাজার কেজি চা। বস্তুত, যখন চা বাগান ও শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একাধিক বার্তা দিয়েছেন। বারবার বাগান খোলার কথা বলেছেন। শ্রমিকদের বোনাস সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তৃণমূলেরই মালিকপক্ষের এহেন কীর্তিতে কার্যত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বন্ধ চা বাগান খোলা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি।
ত্রিহানা চা বাগানের মালিক পক্ষের দাবি, চা বাগানের পাশ থেকে বয়ে চলা বালাসন নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি-পাথর তোলা হয়। আর তারপর সেগুলি বাগান ব্যবহার করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পাচার আটকে দিতেই তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের রোষে পড়তে হয় বাগান কর্তৃপক্ষকে। যার জেরে বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয় চা বাগান। এরপর গত অক্টোবরে বোনাস নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বাগানে উনিশ শতাংশ বোনাসের বদলে ১৮ শতাংশ বোনাস দিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বেঁকে বসায় বোনাস দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, খেপিয়ে তোলা হয় শ্রমিকদের। জেলা আইএনটিটইউসির নেতাদের মদতেই বাগানে অস্থিরতা তৈরি করা হয় বাগানে। এই পরিস্থিতিতে গত অক্টোবর থেকেই বাগানে অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু হয়। তৈরি চা বাজারে পাঠানোর কাজ আটকে যায়। বাগানেই এই মুহুর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পঁচাশি হাজার কিলোগ্রাম উৎপাদিত চা।
মালিকপক্ষের আরও অভিযোগ, এই অর্থনৈতিক অবরোধের পাশাপাশি বাগানে চা পাতা তোলার কাজ অর্ধেক করে দেন শাসক দলের শ্রমিক নেতারা। ফলে বছরে ১৬ লক্ষ কিলোর গড় উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৮ লক্ষ কিলোগ্রামে। লকআউট ঘোষণার পরেও বাগানে চা পাতা ও নানা সামগ্রী চুরি চলছে। এ নিয়ে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও সাড়া মেলেনি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
এই বাগানের তিনটি ডিভিশনের মধ্যে দুটি লকআউট থাকলেও একটা খোলা। সেখানে কাজ চলছে। তবে মূল ডিভিশন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা যদিও বলেছেন তাঁরা বাগান খুলতে চাইছেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সদিচ্ছার কারণে তারা বাগান খুলতে পারছেন না। অপরদিকে, মালিকপক্ষের দাবি, তৃণমূল নেতাদের একাংশ বাগানে রটিয়ে দিচ্ছে বিকল্প মালিকের খোঁজ তারা দেবেন। ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাগানকে খুলতে না দিয়ে নানা ঝামেলা করা হচ্ছে।
ত্রিহানা চা বাগানের ম্যানেজার সুজয় মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “বেআইনি বালি পাথর তুলে বাগানে রাখত। প্রতিবাদ করতেই বাগানে অচলাবস্থা তৈরি করল। শ্রমিকদের উস্কিয়ে বিক্ষোভ করানো হল। এমনকী ১৮ শতাংশ বোনাসে বিষয়টা রফা করতে দিল না ওরা।ওরা সকলেই তৃণমূল করে।”
যদিও সমস্ত অভিযোগ নিয়ে জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি নির্জল দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ক্যামেরার সামনে আসেননি। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান চা শ্রমিক নেতা অলোক চক্রবর্তী জানান, “খোঁজ নিয়ে দেখছি। শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে। শ্রমিক নেতারা এসব করবেন এমনটা হতে পারে না। তবে বাগান বন্ধ থাকুক চাই না। মালিক দ্রুত বাগান খুলুন। শ্রমিকদের বকেয়া দ্রুত মেটান। শ্রমিকদের রক্ষা করতেই হয়ত কিছু আন্দোলন হয়েছে। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা কাটুক।”