মমতার উপস্থিতিতেই শিলিগুড়িতে সস্ত্রীক দলত্যাগ নান্টুর, নির্দল হয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা

শিলিগুড়িতে মমতা (Mamata Banerjee)'র উপস্থিতির মধ্যেই তৃণমূল নেতা নান্টু পালের (Nantu Pal) বিদ্রোহ ঘোষণা

মমতার উপস্থিতিতেই শিলিগুড়িতে সস্ত্রীক দলত্যাগ নান্টুর, নির্দল হয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা
নিজস্ব ফটো
Follow Us:
| Updated on: Mar 07, 2021 | 5:10 PM

শিলিগুড়ি: ভোটমুখী বাংলায় টানটান রবিবার। একদিকে যখন ব্রিগেড থেকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), তখন শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার (Mamata Banerjee) হুঁশিয়ারি, “খেলা হবে, দেখে হবে, জেতা হবে।” কিন্তু সেই সভার আগে শিলিগুড়িতেই তাঁর দলের অন্দরে ছন্দপতন। শিলিগুড়ি বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান নান্টু পাল (Nantu Pal) ঘোষণা করে দিলেন,  তিনি আর তৃণমূলে নেই। সেই সঙ্গে স্ত্রীও দল ছাড়ছেন বলে জানান তিনি।  ওমপ্রকাশ মিশ্র (Omprakash Mishra) কে প্রার্থী হিসেবে মানতে না পেরে এভাবেই যুদ্ধ ঘোষণা করলেন নান্টু।

শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে জায়গায় জায়গায় টিকিট না পাওয়া নেতা ও বিদায়ী বিধায়কদের বিক্ষোভ, অভিমান এবং দলবদলের ধারা অব্যাহত। শিলিগুড়ি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রকে তিনি যে মেনে নেবেন তা আগেই ঘোষণা করে দেন নান্টু পাল। রবিবার ওমপ্রকাশকে সঙ্গে নিয়ে মমতার সভার আগেই নান্টুর ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগী হন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল না। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর নান্টু পালের ঘোষণা, “আমি নির্দল হিসাবে লড়াই করব।” তার অব্যবহিত পরে নান্টু জানালেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী আর দলেও থাকছেন না। নান্টু ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলর।

তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বহু জায়গায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এমনকি অভিযোগ উঠেছে‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়েও। শিলিগুড়িতেও ছবিটা আলাদা নয়। সেখানে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদানকারী অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিত্র। আর তাতেই বেজায় চটেছেন নান্টু পালরা। সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যের বিপরীতে তৃণমূলের প্রার্থীর নাম শুনতেই শহরের তৃণমূল নেতারা বলেছেন, ফের অশোকবাবুকে ওয়াক ওভার দিয়ে দিল দল! ক্ষোভ উগরে দিয়ে শিলিগুড়ি বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান বলেছিলেন, কোনো ভূমিপুত্র প্রার্থী হবেন এটাই আশা করেছিলেন। কিন্তু দল যাঁকে প্রার্থী করল তিনি দীর্ঘদিন ধরে দিদিকে গালিগালাজ করেছেন বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় নান্টুকে। এদিন পেট্রোপণ্য মূল্য বিরোধিতায় যখন তৃণমূল সুপ্রিমো শিলিগুড়িতে মিছিল ও সভা করছেন তখন সারাদিন তাঁর পাশে দেখা যায়নি নান্টু পালকে। তাঁর সাফ ঘোষণা, “এবার নির্দল হয়ে লড়ব”।

প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্যে বামেরা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হলেও শিলিগুড়িতে ছবিটা আলাদা। সেখানে নিজেদের রাজ্যপাট দখলে রেখেছেন অশোক ভট্টাচার্য। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন বাদ দিলে শিলিগুড়িতে কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। ২০১৬-তে যে বাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল, তিনি নিজেই এবার অশোকের হয়ে প্রচারে করেছেন। এই পরিস্থিতিতে শহর থেকেই প্রার্থী নির্বাচন করতে দলনেত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে দেখা যায়, সেই অনুরোধ রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানায়, ভোটপ্রচারে অংশগ্রহণ করবেন না তাঁরা।

আরও পড়ুন: ‘ভারতে একটাই সিন্ডিকেট চলে, সেটা হল মোদী-শাহ সিন্ডিকেট’, শিলিগুড়িতে আক্রমণ শানালেন মমতা

তৃণমূল সূত্রে অবশ্য খবর ছিল এবার প্রার্থী হতে পারেন নান্টু পাল। তাই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর মন খারাপ হয় তাঁর। সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এবার আমরা দলগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলাম, শহরের কাউকে প্রার্থী করা হোক। শিলিগুড়ির বাইরের কেউ যেন প্রার্থী না হন। কিন্তু তা না হওয়ায় আমি মর্মাহত। আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। যিনি ক’দিন আগেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য সমালোচনা করতেন তাঁকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে পারব না।’ এবার শিলিগুড়িতে মমতার উপস্থিতির দিনই যুদ্ধ ঘোষণা করে নান্টু জানালেন তিনি এবার নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট লড়বেন।