
হাওড়া: কবে হবে নির্বাচন? সেই প্রশ্নচিহ্নের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে হাওড়া পুর-বাসিন্দারা। গত ছয় বছর ধরে সেখানে নির্বাচনের নেই কোনও বালাই। মূলত, আইনি জটিলতার কারণেই তালা ঝুলেছিল পুরসভার ভোট পর্বে।
সম্প্রতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল-এ সই করার পর সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল নির্বাচনের। তবে একটা একটা করে দিন কেটে গেলেও বাজেনি নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। সূত্রের খবর, নতুন বিলের হাত ধরে হাওড়ার ৫০ টি ওয়ার্ডে এবং বালির ১৬ টি ওয়ার্ডে ভোটের শিকে ছিঁড়লেও পুনর্বিন্যাসের কারণে তৈরি হয়েছে জটিলতা। যা কাটিয়ে আদৌ কবে ভোট হবে, সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
কোথায় রয়েছে জটিলতা?
২০১৫ সালে বালি পুরসভাকে হাওড়ার পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। যার জেরে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৬টি। পরে আবার বালিকে পৃথক করে হাওড়ার পুরসভার অন্তর্গত ৫০টি ওয়ার্ডকে ভেঙে তৈরি হয় ৬৬টি ওয়ার্ড। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে হাওড়া পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর দফায় দফায় প্রশাসক বসায় রাজ্য সরকার। গত আড়াই বছর সুজয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে প্রশাসকমন্ডলী হাওড়া পুরসভার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
এছাড়াও, এই সব এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার দেখভালের জন্য মাস ছয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরীকে বিশেষ দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারপরেও হাওড়া পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘ভোট না হওয়ার কারণে এলাকায় নির্বাচিত কোনও কাউন্সিলর নেই। ফলত, পানীয় জল সরবরাহ থেকে নিকাশি ও জঞ্জাল সাফাই, ভেঙে পড়েছে গোটা ব্যবস্থা। শহরের ভ্যাটগুলিতে উপচে পড়ছে আবর্জনা।’ তাদের আরও অভিযোগ, ‘বিভিন্ন সময় সাধারণ শংসাপত্রে জন্য ছুটতে হচ্ছে সাংসদ, বিধায়কদের কাছে। যা কার্যত ঝক্কিপূর্ণ। পুরভোট হলে এই সমস্যায় পড়তে হত না তাদের।’
বলে রাখা ভাল, এই সময়কালে হাওড়ার পাশাপাশি বালি পুরসভাতেও ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৬টি বেড়ে হয়েছে ৩৬টি। রাজ্যপাল বিল সই করলেও, এখন সমস্যা একটাই। কতগুলো ওয়ার্ডে হবে ভোট, ৫০ নাকি ৬৬? তা নিয়ে ধন্দে পুরসভা।
এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘একজনের মাধ্যমে এত বড় পুরসভার সমস্ত কাজ দেখা সম্ভব নয়। তাই ভোট দরকার। ইতিমধ্যেই চারজন বিধায়কের কাজের চাপ প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। সরকার চায় ভোট হোক। আশা করা যায়, এবছরের মধ্যেই হাওড়া পুরসভার ভোট হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘হাওড়া পুরসভার আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ। কিন্তু ৫০টি ওয়ার্ডে ভোট হবে নাকি ৬৬ টি ওয়ার্ডে ভোট হবে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’ অর্থাৎ, শেষ ১৬ ওয়ার্ডের ষোলোকলা পূর্ণ করতে গিয়েই চাপে পড়েছে ঘাসফুল শিবির।
অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাইয়ের দাবি, ‘ছয় বছর ধরে ভোটের বালাই নেই। লাটে উঠেছে পরিষেবা। সাধারণ মানুষ সব দিক থেকে বঞ্চিত। কেনই বা রাজ্য সরকার হাওড়া পুরসভাকে বালি পুরসভার সঙ্গে জুড়ল এবং পরে আলাদা করল তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে যেভাবে সকলকে অন্ধকারে রেখে ওয়ার্ডগুলিতে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে তা শাসক দলের সুবিধার জন্য। তবে আমরা চাই ভোট হোক।’