Babul Supriyo: ‘বিলম্বিত বোধোদয়’, কটাক্ষ হেনেই বাবুলকে স্বাগত সমবায় মন্ত্রীর
TMC: তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এই ঘটনাকে ‘বিরাট বড় সুযোগ’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন বাবুল। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যা ঘটার গত ৪ দিনেই ঘটেছে।শনিবার ক্যামার স্ট্রিটের অফিসে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বাবুল
হাওড়া: সপ্তাহন্তের বারবেলায় আচমকাই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। শনিবার, তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের টুইটার হ্য়ান্ডেলে ও পরে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল হ্য়ান্ডেলে প্রকাশিত হয় বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে (TMC) যোগদানের ছবি। যোগদানের অনতিপরেই সাংবাদিক বৈঠকও করেন বাবুল। তাঁর যোগদানকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় (Arup Roy) কিছুটা কটাক্ষ হেনেই এদিন স্বাগত জানান বাবুলকে।
এদিন, অরূপবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বাবুল একটা অন্য দলে ছিলেন। তবে, সেই দলে ওঁর যোগ্য জায়গা ছিল না। পরে বুঝেছেন। তাই আমাদের দলে এসেছেন। দেরি হলেও তাঁর এই যোগদানকে স্বাগত। এটা বাবুলের বিলম্বিত বোধোদয়।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “বাবুলকে স্বাগত। ওঁ ভাল সঙ্গীতশিল্পী। মধ্য হাওড়ার আবাসনেই থাকে বাবুল। ভালই হয়েছে, এ বার থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের মাঝেমধ্য়ে কথাও হয়েছে। আশা করছি ওঁ এখানে এসে কাজ করতে পারবে।”
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এই ঘটনাকে ‘বিরাট বড় সুযোগ’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন বাবুল। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যা ঘটার গত ৪ দিনেই ঘটেছে।শনিবার ক্যামার স্ট্রিটের অফিসে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন বাবুল। বলেন, “আমি প্রথমেই খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। আমি রাজনীতি ছাড়ার যে কথা বলেছিলাম, সেটা পুরোপুরি হৃদয় থেকেই বলেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ৭ বছর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য আমি যে কাজ করেছি, সেখানে একটা ফুলস্টপ এসে গিয়েছিল। কেন এসেছিল জানি না। এর পেছনে আমি যুক্তিও পাইনি। ৭ বছরের সময় পুরোপুরি ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। এটা কোনও প্রতিশোধের রাজনীতি নয়। আমি সুযোগ হিসেবে এটাকে দেখছি।”
যদিও বাবুল এ দিন বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতি ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, তাতে কোনও ভনীতা ছিল না। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার তাঁর সিদ্ধান্ত যে বিরাট বড় একটা সুযোগ, এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে তাঁকে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হবে, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে আসা রাজ্যসভার আসনে তাঁকে প্রার্থী করে ফের একবার দিল্লি পাঠাতে পারে তৃণমূল। কারণ তিনি যে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন, সে কথা এ দিন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করেছেন এই সাংসদ। তৃণমূল যে উষ্ণতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে, তাতে তিনি ‘আপ্লুত’ বলেও উল্লেখ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
উল্লেখ্য, নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ‘অলভিদা’ বলে রাজনীতি ছাড়ার নেপথ্য কারণ বর্ণনা করে এক দীর্ঘ পোস্ট দেন। কিন্তু, সাংসদ পদ ত্যাগ করবেন না বলেই জানিয়েছিলেন। পোস্টে বাবুল এও লেখেন, এরপর সিপিএম তৃণমূল কোনওদলেই যোগ দিচ্ছেন না তিনি। কিন্তু, পরে ধীরে ধীরে বদলে যায় পোস্টের ভাষা। দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেও অন্য দলে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি উড়ে যায় বাবুলের পোস্ট থেকে। বাবুল সুপ্রিয়ের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জল্পনা উস্কে দেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বলেন, “বাবুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলে কেউ যোগ দেবেন কি না তা তৃণমূল সুপ্রিমো ঠিক করবেন।”
পাশাপাশি, বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা আরও বলেছিলেন, “বিধানসভার নির্বাচনে ও হেরে গিয়েছে বলে মন্ত্রিসভা থেকে ওকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবুলের সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়। দলের ভেতরে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে ওর সমস্যা ছিল। দল ওর সঙ্গে সুবিচার করেনি। ও তো রাজনীতির লোক নয়। আমরা যেমন জেতার মধ্যে দিয়ে রাজনীতি ধরে রাখি। ওর সেই স্ট্য়ামিনা নেই। তাই ও রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে। তবে আমি ওকে বলেছিলাম রাজনীতি না ছাড়তে। আমার মনে হচ্ছে না বাবুলকে আর ধরে রাখা যাবে।”
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরই তাল কাটে বাবুলের। টালিগঞ্জে প্রার্থী হয়ে হেরে যান বাবুল। এর কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি তাঁর। আর তার পর থেকেই তাল কাটতে শুরু করে। অবশেষে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফের ‘সুরে’ ফিরছেন বাবুল।
আরও পড়ুন: ‘গতকাল কথা হয়েছে বাবুলের সঙ্গে’, সৌগতের মন্তব্যে সাংসদের ‘অলভিদা’-য় জল্পনা
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: মামলা রুজু করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের নোদাখালিতে নিহত চন্দনার বাড়িতে সিবিআই