হাওড়া: সাতসকালে কারখানায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। ঘুসুরি এলাকার একটি কারখানার ভিতরে বিস্ফোরণের জেরে আহত হলেন ৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এক জনের বাম পা বাদ গিয়েছে। অন্য জনের ডান হাতে গুরুতর আঘাত লাগায় তাঁর হাতটিও বাদ যেতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারখানার শ্রমিকদের আহত হওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণের শব্দে পাশের একটি বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায় ও দেওয়ালে ফাটল ধরে যায়। পাশপাশি কালো ধোঁয়ায় কার্যত ঢেকে যায় গোটা এলাকা। এমনকি পেট্রোলের গন্ধেও ভরে যায় চতুর্দিক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের বাসিন্দারা উঠে পড়েন। আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু কী থেকে এই বিস্ফোরণ? কারখানার অন্য শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অন্যান্যদিনের মতো এদিনও সকালে গ্যাস কাটার দিয়ে বাতিল পেট্রোল ট্যাঙ্কার কাটাইয়ের কাজ চলছিল। আহত ৬ জন শ্রমিক এই কাজ করছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। হঠাৎই গ্যাস কাটারের ফুলকি থেকে খালি পেট্রোল ট্যাঙ্কারে জমে থাকা গ্যাসে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন ৬ জন। তাঁদের প্রথমে উত্তর হাওড়ার টিএল জয়সওয়াল হাসপাতাল ও সেখান থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পিন্টু সিং (২৬), পঙ্কজ রাই (২৫), রামকুমার যাদব (২৪) ও হরিকিশোর যাদব (৫০)। তাঁদের মধ্যে রামচন্দ্র যাদবের বাম পা বাদ গিয়েছে। এছাড়া পঙ্কজ রাইয়ের ডান হাতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। তাঁর ডান হাতটি বাদ যেতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাকি ২ জনের আঘাতও গুরুতর। তাঁরা প্রত্যেকেই লিলুয়া ও মালিপাঁচঘড়া থানা এলাকার বাসিন্দা।
বিস্ফোরণের খবর পেয়েই ওই কারখানায় ছুটে যান দমকল, সিইএসসি, মালিপাঁচঘড়া থানা ও হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। হাওড়া পুরসভার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিস্ফোরণস্থল থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন দমকল কর্মীরা। কারখানার ভিতর দাঁড়িয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি নর্থ অনুপম সিং বললেন, ‘‘এই ঘটনার জন্য কারখানাটির বিরুদ্ধে একটি মামলা রজু করা হচ্ছে। দমকল আধিকারিকদের তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। দমকল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে কারখানাটির বিরুদ্ধে আইনানুগ যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।’’ এদিকে এদিন এই ঘটনার পর কারখানাটির মালিক বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কারখানাটি চলছে। সৌমেন ঘোষ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, প্রত্যেকদিনই কারখানাটিতে কোনও নিয়ম না মেনে শ্রমিকদের দিয়ে পেট্রোল ট্যাঙ্কার কাটাইয়ের কাজ করে। এই কাজ করতে গিয়ে কালীপুজোর সময়ও বড়সড় বিস্ফোরণ হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই কাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁর।