Howrah: আচমকা হাওড়া পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, কারণ কী?

Howrah Municipal Corporation: বছর চারেক আগে হাওড়া পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদে যোগ দেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুজয় চক্রবর্তী। আগে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যোগ না থাকলেও রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়ের হাত ধরে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। অরূপ রায়ের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে নেন সুজয়বাবু।

Howrah: আচমকা হাওড়া পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, কারণ কী?
সুজয় চক্রবর্তীImage Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Oct 27, 2025 | 12:08 AM

হাওড়া: বেশ কয়েক বছর ধরেই নির্বাচন হয়নি হাওড়া পৌরনিগমে। রয়েছে প্রশাসক মণ্ডলী। সেই প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি গত চার বছর ধরে পৌরনিগমের দায়িত্ব সামলেছেন। কী কারণে এই পদত্যাগ, সে ব্যাপারে খোলসা করে কিছু না বললেও তিনি জানান, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে তিনি পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে গতকাল (২৫ অক্টোবর) ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আশা, এই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হবে। তাঁর এই ইস্তফা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তৈরি হয়েছে।

বছর চারেক আগে হাওড়া পৌরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানের পদে যোগ দেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুজয় চক্রবর্তী। আগে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যোগ না থাকলেও রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়ের হাত ধরে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। অরূপ রায়ের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে নেন সুজয়বাবু। কিন্তু গত ৬ বছর হাওড়া পৌরনিগমে কোনও নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত। শহরজুড়ে জঞ্জালের পাহাড়, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জলের সংকট এবং ভাঙাচোরা রাস্তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের পারদ চড়তে থাকে।

হাওড়া পৌরনিগমের ৫০টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৫ লক্ষ বাসিন্দাদের কাছে কাউন্সিলর না থাকায় তাঁরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। আর এই নিয়েই চলছিল টানাপোড়েন। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বারবার নির্বাচনের দাবি করা হলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তা মানা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কার্যত একার হাতেই হাওড়া শহরের দায়িত্ব সামলেছেন সুজয় চক্রবর্তী।

কিন্তু এবছর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির ফলে হাওড়া শহর দীর্ঘদিন জলমগ্ন অবস্থায় থাকে। ঘরে ঘরে নোংরা জল জমে থাকায় নাগরিক পরিষেবা কার্যত তলানিতে ঠেকে। বর্ষার জল কমলে বেরিয়ে পড়ে রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা। সেই নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে বাসিন্দাদের। এমনকি জেলার অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় টাউন হলের এক অনুষ্ঠানে পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। যদিও সুজয় চক্রবর্তী দাবি, তিনি ওলাবিবিতলা আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার, সালকিয়া ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ বেশ কিছু অসম্পূর্ণ কাজ চালু করেছেন। তিনি বলেন, পৌরনিগমের কাজ শেষ হওয়ার নয়। শহরে জল জমলেও আগের তুলনায় অনেক দ্রুত তা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্পের কাজ হয়েছে।

কেন তিনি পদত্যাগ করলেন সে ব্যাপারে খোলসা করে কিছু না বললেও দলীয় সূত্রে খবর, তাঁর পারফরমেন্সে খুশি ছিল না দলের একটা বড় অংশ। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পুর পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ ভোট বাক্সে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে দল। তাই হাওড়া পৌরনিগমকে প্রশাসনিক স্তরে ঢেলে সাজাতে এই সিদ্ধান্ত বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। তবে এ ব্যাপারে সুজয় চক্রবর্তী বলেন, দল তাঁকে পদত্যাগ করতে কোনও নির্দেশ দেয়নি।

এর আগে একবার চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন সুজয় চক্রবর্তী। কিন্তু দলের প্রভাবশালী মহলের চাপে তা প্রত্যাহার করে নেন। তবে এবারে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় কি না সেটাই এখন দেখার।

যদিও এ বিষয়ে বিরোধী দলগুলি কটাক্ষ করেছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই জানান, দীর্ঘদিন পুর ভোট না করে প্রশাসক মণ্ডলী বসিয়ে পৌরনিগম চালানোর কোনও মানে হয় না। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে। হাওড়া শহর দেশের মধ্যে এক নম্বর জঞ্জালের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ মনে করেন, শাসকদলের অন্দরে ব্যাপক গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। চলছে লুটের রাজনীতি। এমন অবস্থায় দ্রুত হাওড়া পৌরনিগম এবং বালি পুরসভায় ভোট করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নাগরিক পরিষেবা সুষ্ঠুভাবে প্রদান করতে রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক। অন্যথায় হাওড়া তথা বালির মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।