
সালকিয়া: বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর তারপরই সামনে এসেছে একের পর এক তথ্য। প্রসেনজিৎ চৌধুরী নামে ৩১ বছরের ওই যুবককে জেরা করে একের পর এক তথ্য সামনে আনল পুলিশ। উঠে এলে সমকামী সম্পর্কের তত্ত্ব। এমনকী ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি ধৃতের।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ সালকিয়া অরবিন্দ রোডের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে খুন হন অসীম দে (৬৪) নামে এক বৃদ্ধ। তারপরের দিন পরিবারের সদস্যরা গোলাবাড়ি থানায় খবর দিলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পুলিশ পাশের ফ্ল্যাট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টা নাগাদ এক ব্যক্তি ব্যাগ হাতে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকছে। রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ তাকে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় তাকে।
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তিই অসীমের দুটি সোনার আংটি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা শুরু করে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মাস চারেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে অসীমের সঙ্গে পরিচয় হয় ধৃত প্রসেনজিৎ চৌধুরীর। পেশায় কাপড় বিক্রেতা প্রসেনজিৎ মঙ্গলাহাট, গোবরডাঙা হাট সহ বিভিন্ন হাটে কাপড় বিক্রি করত। মাস চারেক আগে দু’জনের মধ্যে আলাপের পর মাসখানেক আগে তারা দুজনেই সালকিয়ার বাঁধাঘাটে সাক্ষাৎ করে।
পুলিশ জানতে পেরেছে আলাপ হওয়ার পর দু’জনের মধ্যে ভিডিয়ো কলে কথাবার্তা চলতে থাকে। এই ভিডিয়োকল চলাকালীন অসীম দে বেশ কিছু ছবি মোবাইলে স্ক্রিনশটের মাধ্যমে তুলে রাখেন বলে অভিযোগ। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, ওই গোপন ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখিয়ে প্রসেনজিৎকে নিজের ফ্ল্যাটে ডাকতেন অসীম। গত বৃহস্পতিবারও একইভাবে প্রসেনজিৎকে সালকিয়ার ফ্ল্যাটে ডাকা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রসেনজিৎ ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে মদ, কচুরি এবং তরকারি কিনে ঢোকেন। এরপর দুজনে মদ্যপান করেন, খাবার খান। দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের পর গোপন ছবি নিয়ে বচসা শুরু হয়ে যায় বলেই দাবি পুলিশের। তারপর রাগের মাথায় প্রসেনজিৎ অসীমের মাথা দেওয়ালে ঠুকে দেয় বলে অভিযোগ। মাথার মধ্যে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের।
চোখের সামনে বৃদ্ধের মৃত্যু দেখে ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে প্রসেনজিৎ অসীমের হাতের দুটি সোনার আংটি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খোঁজ পায়।
রবিবার প্রসেনজিৎকে গোবরডাঙার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ। সোমবার ধৃত ব্যক্তিকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়েছে। রবিবার ঘটনাস্থল থেকে ফরেনসিক টিম খাবারের টুকরো, আধপোড়া সিগারেট এবং মদের বোতল উদ্ধার করে। ধরা পড়ার পর প্রসেনজিৎ তাঁর সমস্ত অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানায়, প্রসেনজিতের একাধিক পুরুষসঙ্গী ছিলেন। এমনকী অসীমের চুরি করা সোনার আংটি তাঁর এক বন্ধুকে উপহারও দেন। জেরায় নাকি সে কথাও জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ।