বাংলাদেশ: সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি থেকে মাঝে-মধ্যেই পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। কখনও গরুপাচার তো কখনও সোনা-রূপো। সীমান্তের এই গ্রামগুলিতেই এখন ‘হিরো’ অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ড্যান্ট মনোজ কুমার। কেন জানেন? বস্তুত, বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তপ্ত আবহের মধ্যে এলাকায় ‘ক্রস বর্ডার ক্রাইমের’ হার স্থায়ী ভাবে কমিয়ে আনতে এক অভিনব উদ্যোগ নিল বিএসএফ (BSF)-এর ৯৩ নং ব্যাটালিয়ন। সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের সীমান্ত এলাকার গ্রামে বসবাস করেন পাচারকারীরা। সেই সকল গ্রামগুলিতে শিক্ষার প্রসারে এগিয়ে এসেছেন BSF জওয়ানরা। ছোট বাচ্চাদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি কলেজ পড়ুয়াদের জন্য শুরু হয়েছে কেরিয়ার কাউন্সিলিং। বর্ডার সামলানোর মতো প্রতিদিনের কঠিন ডিউটি সেরে নিয়ম করে প্রতিদিন শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন বিএসএফ কর্তা মনোজ কুমার।
সূত্রের খবর, BSF-এর ৯৩ নং ব্যাটেলিয়নের অধীনে থাকা সীমান্ত এলাকার সর্দার পাড়া, ঘোড়া দাওয়া,সিং পাড়া,জমিদার পাড়া, কালিন্দী পাড়া, নতুন সর্দার পাড়া, বাঙ্গাল পাড়া,খিড়কি ডাঙা গ্রামগুলিতে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। অভিযোগ, ওই গ্রামগুলির একাংশ মানুষ গরু পাচার , চোরাচালান সহ অন্যান্য বর্ডার কেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। গত ডিসেম্বর মাসেও এই এলাকায় পাচারকারীদের সঙ্গে বিএসএফ-এর সংঘর্ষ হয়। পাচারকারীরা হামলা চালায় আধা সেনার উপর। বাধ্য হয়ে গুলি চালায় বিএসএফ। মারা যায় এক পাচারকারী।
কেন এই সকল ব্যক্তিরা প্রাণ হাতে নিয়ে চোরাচালান করে? তার কারণ খুঁজতে নামেন গিয়ে BSF-এর গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। উঠে আসে ভয়ানক তথ্য। সূত্রের খবর, এই সকল গ্রামের মানুষরা অত্যন্ত দরিদ্র। শিক্ষার অঙ্গনে আসেনি। তাই চাকরিও জোটেনি। ফলে পেট চালাতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান তাঁরা। আর এদের কাজে লাগায় আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের সিন্ডিকেট। এইসমস্ত পরিবারগুলিকে শিক্ষার আলোয় আনতে আদাজল খেয়ে শিক্ষাদানের কাজে লেগেছে BSF আধিকারিক মনোজ কুমার।
প্রাক্তন পঞ্চায়েত সুকুমার ভৌমিক বলেন, “ভাল চাকরি পেতে কীভাবে পড়াশোনা করতে হবে, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের গ্রামের ছেলে মেয়েদের সঠিক কোনও দিশা ছিল না। কেউ হয়ত ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু সে কলা বিভাগে পড়াশোনা করছে। কলা বিভাগে পড়ে চিকিৎসক হওয়া যাবে না। তাই কোন পথে পড়াশোনা করলে চিকিৎসক হওয়া যাবে সেই দিকেই নজর দেওয়া হবে।”
গ্রামবাসী মেঘলাল বিশ্বাস বলেন, “এই ভাবে শিক্ষাদানের কাজ যদি আরও অনেক আগে থেকে BSF করত তবে আমাদের এলাকায় অশিক্ষিত মানুষ কম থাকতো। পাচারকারী গ্রামের তকমা লাগতো না।” এক পাচারকারী বলেন, “বাড়িতে চরম অভাব ছিল। তাই বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারিনি। পেটের টানে একসময় পাচার কাজে জড়িয়ে যাই। আমি চাই না আমার সন্তান এই ভুল পথে আসুক। বিএসএফ পড়াশোনা করাচ্ছে। আমার বাচ্চাদের অবশ্যই সেখানে পাঠাব।” মহম্মদ ফজিমুদ্দিন নামে কালিন্দী পাড়ার বাসিন্দা বলেন, “এই ক্যাম্পে মনোজ কুমার আসার পর আরও কড়া পাহারা। ফলে পাচার অনেক কমে গিয়েছে। পাশাপাশি যারা পাচার করতো তারা এখন চাষবাস কিংবা টোটো রিক্সো চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা উপলব্ধি এসেছে ওই পথ ভাল নয়। তাই এখন বিকেল হলেই বাচ্চাদের বি এস এফ এর স্কুলে পড়াশোনা করতে পাঠাচ্ছে।” অপরদিকে, নন্দিনী বিশ্বাস, অনামিকা ভৌমিক নামে ছাত্রীরা জানায়, “BSF-এর কেরিয়ার কাউন্সিলিং শিবিরে এসে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি। এসব আগে আমরা জানতাম না। তাই নিয়মিত আসছি। খুব ভালো উদ্যোগ। আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগবে।”