জলপাইগুড়ি: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। উমা বিদায়ের পর একাদশীতে ভাণ্ডানী দেবীর আরাধনায় মাতল ময়নাগুড়ির তিস্তাপারের গ্রাম। ভাণ্ডানীর পুজো এক রাতের। তবে দশমীর পর একাদশীতে এই ভাণ্ডানী পুজোকে ঘিরে ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামপঞ্চায়েতের ভাণ্ডানী গ্রামে বসে মেলা। বহু মানুষ যোগ দেন এই পুজোয়।
গ্রামের লোকজনের কাছে ভাণ্ডানী দুর্গারই রূপ। তবে ভাণ্ডানী দেখতে কিন্তু একেবারে বাড়ির মেয়ের মতো। এই পুজো নিয়ে নানা গল্প শোনা যায়। কথিত আছে, দেবী দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি থেকে কৈলাসে ফিরছিল। বৈকুন্ঠপুরের ঘন জঙ্গলে ঘেরা পথ ধরে ফেরার সময় এক সাধারণ নারীর রূপ নেয় উমা। এদিকে জঙ্গলের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে পথ হারায় সে।
এক রাখাল গরু চড়িয়ে সেই পথ ধরেই ফিরছিল। গভীর জঙ্গলে একা মেয়েকে দেখতে পেয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতে রাখালের বাড়িতে থাকার বন্দোবস্তও হয়। এদিকে মাঝরাতে ওই মেয়ে আসল রূপ ধারণ করে। রাখাল সে রূপে অবাক হয়ে যায়।
দেবী জানায় সে রাখালের সেবায় তুষ্ট। যে কোনও বর যেন চায়। সেই সময় মায়ের কাছে কেঁদে রাখাল জানায়, তিস্তাপারের জমি অনুন্নত। তাই সেখানে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। শস্য শ্যামলা হোক এ জমি। বর দেয় দেবী। এরপরই সেখানকার রাখালরা দেবীর পুজো করতে চায়। সেই থেকেই ভাণ্ডানী বা বনদুর্গার পুজো শুরু। প্রায় ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। দুর্গা দশমীর পর একাদশীতে একদিনের জন্য এই পুজো হয়।
ভাণ্ডানী দশভূজা নয়, দ্বিভূজা। সাধারণ নারী রূপে এখানে পূজিত হয়। এমনও শোনা যায়, জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ায় তিস্তাপারের এই এলাকায় এক সময় প্রচুর বাঘ ছিল। ভাণ্ডানী দেবী বাঘের উপর অধিষ্ঠান করে। সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীও থাকে। তবে থাকে না কোনও অসুর। ময়নাগুড়িতে ভাণ্ডানী পুজো ঘিরে লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে প্রতি বছর। পুজোর সঙ্গে মধ্যরাত অবধি চলে মেলা।
পূজো কমিটির সহ সভাপতি দীনেশ রায় বলেন, “৫০০ বছর হয়ে গেল এই মেলার। উত্তরবঙ্গ তো বনজঙ্গলে ঘেরা ছিল একটা সময়। দশমীর দিন কিছু রাখাল মায়ের দেখা পায়। তারাই মায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, কৈলাস যাওয়ার আগে একদিনের জন্য এখানে পুজো নিয়ে যাও। সেই থেকে পুজো শুরু।” উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি নেপাল ভুটান, অসম থেকে লক্ষাধিক ভক্ত আসে পুজো দিতে।