
জলপাইগুড়ি: ভরা তিস্তায় ফেলে দেওয়া দুধের শিশুকে বাঁচাতে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিল তারা। নদীতে ঝাঁপিয়ে সাঁতরে উদ্ধার করেছিল ময়নাগুড়ি ব্লকের মরিচ বাড়ি এলাকার দুই বীরাঙ্গনা স্কুল পড়ুয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী মল্লিকা পাল ও পৌলমী কীর্তনিয়া। দু’জনেই ময়নাগুড়ি দোমহনী পল হোয়েল হাইস্কুলের ছাত্রী। রাজ্যের নির্দেশে মঙ্গলবার দুই ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানালেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন। এই মর্মে তিনি ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুন্ডুকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।
স্বামীর কাজ নেই। ফলে ঘরে নেই খাবার। আর খিদের জ্বালায় সকাল থেকেই কান্না জুড়ে দিয়েছিল কোলের সন্তান। উপায় না পেয়ে দেড় বছরের পুত্রসন্তানকে ভরা তিস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন মা। সেসময় নদীর পারে উপস্থিত মল্লিকা, পৌলমী ও এক মহিলা বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে। রবিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ি ব্লকের তিস্তা সেতু সংলগ্ন মরিচবাড়ি এলাকায়৷ ওই মহিলার নাম সীমা বাওয়ালি। তাঁর স্বামীর নাম বিপুল বাওয়ালি। কাঠ মিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁদের তিন বছরের একটি কন্যাসন্তান ও দেড় বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে।
জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক ধরে কোনও কাজ ছিল না বিপুলের। ঘরে খাবারের অভাব। খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করছিল ছোট্ট সন্তানটি৷ এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। এরপর বিপুল কাজের খোঁজে বাড়ির বাইরে যান। তখন সীমা তাঁর পুত্রসন্তানকে নিয়ে বাড়ি লাগোয়া তিস্তা নদীতে গিয়ে শিশুটিকে নদীতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। এমনিতেই ভরা বর্ষায় তিস্তা এখন ফুলে ফেঁপে রয়েছে। সীমার এই কাণ্ড দেখে মল্লিকা, পৌলমীরা বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মহিলাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে খবর পেয়ে পুলিশ যায়।
খবর প্রচারিত হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ময়নাগুড়ির জয়েন বিডিও। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। আপাতত কিছু খাদ্যসামগ্রী ও জামাকাপড় দিয়ে সাহায্য করেন ওই পরিবারকে। তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
অপরদিকে এই ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন পঞ্চায়েতকে দায়ী করছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য ওই পরিবারের পাশের বাড়িতে থাকেন। তিনি যদি সক্রিয় থাকতেন, তবে এই সমস্যা হত না।