
জলপাইগুড়ি: ‘যদি মর্নিং না হয়ে অন্য ডিউটি থাকত তাহলে…’ এখনও বিমান দুর্ঘটনার সেই ভয়াবহ স্মৃতি থেকেই বেরতে পারছেন না ডাক্তার বরুণ বিশ্বাস। কারণ, তাঁর ছেলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অভ্রজ্যোতি বিশ্বাস আহমেদাবাদের ওই মেডিক্যাল কলেজেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। যে সময় বিমানটি বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ভেঙে পড়েছিল, সেই সময় কপাল জোরে তিনি ডিউটিতে ছিলেন না। অভ্রবাবুর আবাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি অভ্রবাবুর মর্নিং শিফট না থাকত, তাহলে হয়ত….। এই চিকিৎসকের বাবা বরুণ বিশ্বাসের কাছে গোটা বিষয়টি এখন দুঃস্বপ্নের মতো। ছেলের যদি অন্য শিফট হত তাহলে তো বড় কিছু হতেই পারত। হয়ত কোনও এক জাদুবলেই প্রাণ রক্ষা হয়েছে তাঁর। টিভি ৯ বাংলাকে এই অভিজ্ঞতাই বললেন বরুণবাবু।
জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বরুণ বিশ্বাস। তিনি জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। তাঁর ছেলে অভ্রজ্যোতি বিশ্বাসও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি আমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের ইউএন মেহতা কার্ডিয়োলজি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
এই মেডিকেল কলেজের একটি হস্টেলেই সেই অভিশপ্ত দিনে ভেঙে পড়েছিল বিশাল বোয়িং বিমানটি। সেই হস্টেলের উল্টোদিকের আবাসনেই থাকেন অভ্রজ্যোতি। দুর্ঘটনার অভিঘাতে সেই আবাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অভ্রজ্যোতিবাবু সেই সময় হাসপাতালের ডিউটিতে থাকায় বরতাজোরে বেঁচে যান।
দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনে ছুটে যান সেখানে। তবে তখন আর নিজের বিধ্বস্ত আবাসনে ঢুকতে পারেননি। পরে কোনও মতে ঢুকে নিজের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন ৷ আপাতত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জন্য থাকার অনত্র ব্যবস্থা করেছে।সেদিন দুর্ঘটনার সঙ্গে-সঙ্গে অভ্র তাঁর মাকে ফোন করে অক্ষত থাকার কথা জানিয়ে ছিলেন। তবে তারপর থেকে উদ্বিগ্ন তাঁর বাবা, মা।
বরুণ বিশ্বাস বলেন, “ঘটনা ঘটবার খানিকক্ষণের মধ্যেই ছেলে আমার স্ত্রীকে ফোন করে। বলে, মা প্লেন ক্রাস করেছে। সেটা আমাদের হস্টেলের উপর পড়েছে। চারিদিকে সব জ্বলে গিয়েছে। তুমি টিভি দেখো। আমি হাসপাতালে ব্যস্ত আছি। ওর ওই দিন ডিউটি ছিল। সকাল ৯টায় ডিউটিতে চলে গিয়েছেন। তারপর থেকে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন আছি। ওর যদি আগের দিন নাইট ডিউটি থাকত, তাহলে পরের দিন সকালে অন্য কোনও ডিউটি থাকত। আর তার জন্য অন্য কিছু হতে পারত।” প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা বেজে ৩৯ মিনিট নাগাদ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান লন্ডন যাওয়ার পথে আহমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ভেঙে পড়ে। বিমানের ভিতরে যাত্রী তো বটেই ওই হস্টেলের অনেক জুনিয়র চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছিল।