Murder Case: বেস্ট ফ্রেন্ডকে বাড়িতে ডেকে ‘খুন’, পুঁতে দিল মাটির তলায়, পরে বৌ-কে নিয়ে পালিয়ে গেল বন্ধু

Jalpaiguri: ময়নাগুড়ি ব্রহ্মপুর এলাকার বাসিন্দা পরিমল রায় ও গৌতম রায়। ছোটবেলার বন্ধু। সেই বন্ধুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে কুপিয়ে খুন। আর এরপর তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে দেহ বাড়ির মধ্যে পুঁতে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পরিমলের বিরুদ্ধে।

Murder Case: বেস্ট ফ্রেন্ডকে বাড়িতে ডেকে খুন, পুঁতে দিল মাটির তলায়, পরে বৌ-কে নিয়ে পালিয়ে গেল বন্ধু
ময়নাগুড়িতে হাড়হিম হত্যাImage Credit source: Tv9 Bangla

| Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Jun 05, 2025 | 10:04 AM

ময়নাগুড়ি: স্বামী স্ত্রী মিলেই কি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন? হত্যা-কাণ্ডের পিছনে কি ত্রিকোণ প্রেম,নাকি অন্য কোনও কারণ? ময়নাগুড়ির রহস্য মৃত্যু নিয়ে এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশ মহলে। যাবতীয় জল্পনার মাঝে রহস্য উন্মোচনে ময়নাগুড়িতে বৃহস্পতিবার আসছে ফরেন্সিক দল।

ময়নাগুড়ি ব্রহ্মপুর এলাকার বাসিন্দা পরিমল রায় ও গৌতম রায়। ছোটবেলার বন্ধু। সেই বন্ধুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে কুপিয়ে খুন। আর এরপর তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে দেহ বাড়ির মধ্যে পুঁতে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পরিমলের বিরুদ্ধে। তাহলে স্বামী স্ত্রী মিলেই কি প্ল্যান করে খুন? সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে পুলিশ আধিকারিকদের।

বুধবার বিকেলে ব্রহ্মপুর এলাকার পরিমলের বাড়ির কলপাড়ে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে গৌতম রায়ের মৃতদেহ। তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বছর ত্রিশের গৌতমের বাড়ি ব্রহ্মপুর লাগোয়া পাঠানেরডাঙা এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গৌতমকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক বাড়ির মালিক পরিমল রায় ও তার স্ত্রী সঙ্গীতা রায়। পরিমলের বাড়ির পাশ থেকে একটি মটর সাইকেলও উদ্ধার হয়েছে।

জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ সমীর আহমেদ জানান, “মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে ঘটনার তদন্ত হবে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

জানা গিয়েছে, গৌতম ও পরিমল অসমে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন। গত রবিবার দু’জনে অসম থেকে ময়নাগুড়ি আসে। গৌতমের বাবা দীপেন রায়ের অভিযোগ, তাঁর ছেলের বিয়ের কথা চলছিল। মঙ্গলবার রাতেও বাড়ির লোকজন মিলে পাত্রী দেখে ফিরেছিলেন। এরপর রাত এগারোটা নাগাদ পরিমল ফোন করেন গৌতমকে। তাঁকে বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। এর আগে গৌতমের থেকে পরিমল টাকা ধার নিয়েছিলেন। আমার ছেলেকে খুন করে নিজের বাড়ির মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে গিয়েছেন পরিমল।

গৌতমের দাদা হরিশচন্দ্র রায় বলেন, “ভাইয়ের দেহ আমরা সনাক্ত করেছি ময়নাগুড়িতে ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছিল। এর মধ্যে ভাইকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করেছে পরিমল।”

বুধবার সকালে পরিমলের বাড়ির পাশে একটি মটর সাইকেল পরে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে খবর আসে বুধবার সকালে পরিমল তাঁর নিজের বাড়ি থেকে কিছু দূরে মায়ের বাড়িতে যায়। তারপর তাঁকে গিয়ে মাকে জানায়, “মা আমি একজনকে খুন করেছি, আমরা পালিয়ে যাচ্ছি।” পরিমল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাবার পর ঘটনার তদন্তের সূত্রে ধরে পুলিশ পরিমলের মায়ের বাড়িতে পৌঁছয়। বৃদ্ধাকে একাধিকবার জেরা করা হয়।

সূত্রের খব,র পরিমলের মা পুলিশকে যাবতীয় ঘটনা জানান৷ এরপর খুনের ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হলেও কাকে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে প্রথম দিকে ধন্ধ ছিল। এদিকে পরিমলের বাড়ির ভিতর দেহ রয়েছে এই সন্দেহে পুলিশ বাড়িটি ঘিরে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সমীর আহমেদ, ডিএসপি ক্রাইম শান্তিনাথ পাঁজা, ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ সহ পুলিশের একটি দল।

পরবর্তিতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুন্ডুর উপস্থিতিতে পরিমলের বাড়ির পিছন দিকে কলের পাড়ের মাটি খুঁড়ে গৌতমের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযুক্তের বাড়ি থেকে পুলিশ ধাতব সামগ্রী উদ্ধার করেছে। ওই সামগ্রী দিয়ে গৌতমকে খুন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ মৃতটি দেহটি উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।

বুধবার রাতেই গৌতমের বাবা দীপেন রায় ময়নাগুড়ি থানায় পরিমল তার ছেলেকে পরিকল্পনা করে খুন করেছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। তবে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা স্পষ্ট নয়। মৃতের বাবার বয়ান থেকে গৌতমের সঙ্গে পরিমলের টাকা লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে। আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের এক অংশের বক্তব্য, এই ঘটনার পেছনে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও থাকতে পারে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বাবলু রায় বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এলাকায় প্রথম ৷ স্বাভাবিক ভাবেই এলাকার মানুষদের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছে। পরকিয়ার জেরে এই খুন।”  পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মৃতের হাত,পা  গলায় নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃতদেহটি জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থানার আওতাধীন বালাসনের বাসিন্দা গৌতম রায় হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু করা হয়েছে।”