
জলপাইগুড়ি: একে অন্যের হাত কেটে সেলাই। ফাঁকা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ একে অপরের শরীরে পুশ করানোর মাধ্যমে তালিম দেওয়া হত নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে। জলপাইগুড়ি দিশারি নার্সিং ট্রেনিং স্কুল নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন ছাত্রীরা। স্কুল নিয়ে আরও নানাবিধ অভিযোগ তুলে জলপাইগুড়ি জেলাশাকের দারস্থ হলেন ছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের কর্ণধার শান্তনু শর্মা তাঁদের ভুয়ো সার্টিফিকেট দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এই সমস্ত অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন প্রতারিত ছাত্রীরা।
জলপাইগুড়ি শহরের দিশারি নার্সিং অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল সেন্টার ইন্সটিটিউট কাজকর্ম নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। ইতিমধ্যে পদ্মশ্রী করিমুল হক কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এবার সেন্টারের প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রীরা চাকরি না পেয়ে জেলাশাকের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা এই কাণ্ডে নতুন মাত্রা আনছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে কয়েকশো পড়ুয়াকে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ওই সেন্টার থেকে। শুধু তাই নয়, ভুয়ো সার্টিফিকেট প্রাদান করা হচ্ছে এই অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসার পরেই গত ১৯ তারিখ ইন্সটিটিউটে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয় জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরেই ওই সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া পড়ুয়াদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ে। নানাবিধ অভিযোগ নিয়ে তাঁরা সামনে আসতে থাকেন।
পিঙ্কি রায় নামে এক ছাত্রী বলেন, আমাদের একে অপরের শরীরে ফাঁকা ইঞ্জেকশন পুশ করিয়ে ইঞ্জেকশন এর তালিম দেওয়া হত। ২৫০০০ টাকার বিনিময়ে আমি দিশারি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে আমি তিন মাস ট্রেনিং নিয়েছি। প্রতি ব্যাচে এইরকম ৩০ জন করে ছাত্র ছাত্রী প্রশিক্ষণ নিত। তিনমাস পর আমাকে বলা হয় আমি চাইলে এখন ANM সার্টিফিকেট নিতে পারি। কিন্তু তার জন্য আরও ৫০০০/- দিতে হবে। সেই টাকা দিই। এরপর সার্টিফিকেট নিয়ে নার্সিং হোমে গেলে আমাকে বলা হয় এটা ভুয়ো সার্টিফিকেট। এরপর আমরা খবরে দেখতে পাই ওই নার্সিং স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এখন জেলাশাসকের দ্বারস্থ হলাম। লিখিত অভিযোগ দায়ের করলাম।
আর এক ছাত্রী সুস্মিতা দাস বলেন, আমরা নিজের হাত নিজে কাটতাম। তারপর সেলাই করতাম। রাতে ব্যথায় কাতরাতাম। একজন অন্যজনের শরীর থেকে রক্ত নিত। এইভাবে ট্রেনিং দিত শান্তনু শর্মা। তিন বছর আগে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন মাস নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছিলাম। এরপরে সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আরও ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এখানে টাকা দিয়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা টাকা ফেরত না পেলে আইনের দ্বারস্থ হব।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আমরা টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলাম শান্তনু শর্মার সঙ্গে। কিন্তু তার ফোন সুইচ অফ থাকায় প্রথমে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বলেন এইসব মিথ্যে অভিযোগ। আমরা পুতুলের ওপর ইঞ্জেকশন ও সেলাই শেখাতাম। এছাড়া ওদের প্র্যাকটিক্যালের জন্য বিভিন্ন নার্সিং হোমে পাঠিয়ে তালিম দেওয়া হত।
প্রসঙ্গত, করোনাকালে আক্রান্তদের বাড়িতে অক্সিজেন,খাবার,ওষুধ ইত্যাদি পৌঁছে প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন জলপাইগুড়ির এক দম্পতি। অক্সিজেন দম্পতি নামে তাঁরা শীঘ্রই পরিচিতিও পান। তাঁদেরই রয়েছে দিশারি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার। এবার সেই ‘ভুয়ো’ স্কুল নিয়ে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে।