
জলপাইগুড়ি: ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে উত্তরবঙ্গে। নিম্নচাপের প্রবল বৃষ্টি নিঃস্ব করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। ভেঙেছে রাস্তা, ভেঙেছে বাড়িঘর। কত অসহায় মানুষের মানুষের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গিলে খেয়ে নিয়েছে নদী। মানষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াল মানুষই। আরও যদি খুলে বলা যায় তাহলে বলা ভাল এক হিন্দুর পাশে দাঁড়ালেন এক মুসলমান। যে সময় ধর্মের সুরসুরি দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় সাধারণ চন্দ্র রায়দের পাশে দাঁড়ালেন করিমুল হকরা।
গত ৫ অক্টোবরের বন্যা ভাসিয়ে নিয়েছে ঘর। একইসঙ্গে ভেসে গিয়েছে ঘরে থাকা গীতা। সব হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন সনাতনী হিন্দু (কীর্তনিয়া) ছিলান চন্দ্র রায়। এখন কার্তিক মাস চলছে। আর এই মাসে খোল-কর্তাল বাজিয়ে গান করেন তাঁরা। কিন্তু ওই যে বন্যা! খোল-কর্তাল সব ভেসে যাওয়ায় ভালভাবে নাম কীর্তন করতে পারছেন না তিনি।
সম্প্রতি,বানভাসিদের ত্রাণ দিতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন ‘বাইক অ্যাম্বুল্যান্স’ দাদা করিমুল হক। করিমুল তাঁর সঙ্গে সারাক্ষণ গীতা নিয়ে ঘোরেন। বিষয়টি জানতে পেরে খারাপ লাগে তাঁর। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর সঙ্গে থাকা গীতা ওই সনাতনীর হাতে তুলে দেন খাঁটি মুসলমান পদ্মশ্রী করিমুল হক। পাশাপাশি তাঁকে খোল কর্তাল সহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
করিমুল হক বলেন, “আমি বেশ কিছুদিন ধরে মানুষকে চাল-ডাল দিচ্ছিলাম। সেই সময় একজন বললেন, দাদা আমার খোল-কর্তাল সব জলে ভেসে গেছে। গীতা-মহাভারত সব জলে ভেসে গেছে। আমি তো সব সময় গীতা রাখি তাই আপাতত সেইটাই তুলে দিলাম।” অপরদিকে, চন্দ্রবাবু বলেন, “আমার তো হারমনিয়ামটাও ভেসে গেছে। আর সবার উপরে তিনি (ভগবান) তাঁর উপরে কেউ নেই। তাই করিমুল দাদাকে সবটা বললাম।” এখানে উল্লেখ্য, করিমুল হক পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেনন। সাধারণ গরিব মানুষকে তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে থাকেন অহরহ। তাঁর সঙ্গে থাকা বাইকই হয়ে যায় সেই সময় আস্ত অ্যাম্বুলেন্স। সেই কারণে তাঁকে বাইক-অ্যাম্বুলেন্স দাদা বলেও ডাকা হয়।