
জলপাইগুড়ি: জমি তাঁদের। কিন্তু, জমির খতিয়ান নেই। এই নিয়ে সমস্যায় জলপাইগুড়ির ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দক্ষিণ বেরুবাড়ির বাসিন্দারা। খতিয়ান না থাকায় জমি অধিগ্রহণও হচ্ছে না। আর এর জেরে আটকে আছে বর্ডার রোড সহ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ। সমস্যা মেটাতে বিষয়টি সংসদে তুলতে উদ্যোগী হলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়।
ভারতীয় মানচিত্রে উল্লেখ থাকলেও আজও বিঘার পর বিঘা ভারতীয় জমির ভারতীয় কোনও বৈধ নথি নেই। এমন অবস্থায় এলাকার উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও সড়ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিএসএফ। জমির ভারতীয় নথি না থাকায় অধিকৃত জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই কাঁটাতারের বেড়া ও সড়ক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করা হলেও কৃষকদের অমতের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রায় ১৬ কিমি উন্মুক্ত সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে ময়দানে নেমেছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়। শুক্রবার দক্ষিণ বেরুবাড়ির বিতর্কিত জমি পরিদর্শন করেন। বিএসএফ ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়ের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা
যেসব কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যাচ্ছে না-
জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতে থাকা চিলাহাটি, বড়শশী,নাওতারি দেবোত্তর এবং কাজল দিঘি এই চারটি জায়গায় প্রায় ৮০০০ মানুষ বসবাস করেন। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যেন নিজভূমে পরবাসী। সেই কারণে তাঁরা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রকল্পের সুবিধা পায় না।
জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সালে যখন ভারত, বাংলাদেশ সীমান্ত চিহ্নিত হচ্ছিল, তখন জানতে পারা যায় এই জায়গাগুলো বাংলাদেশের ম্যাপে রয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা ভারতীয়। বিচারব্যবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা সব কিছু রাজ্য সরকার দেখে।
এরপর শুরু হয় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আন্দোলন। আন্দোলনের ফলে পরবর্তীতে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে গিয়ে সেদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেইসময় ছিটমহল বিনিময় হয়। এবং তার সঙ্গে দক্ষিণ বেরুবাড়ি অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজায় থাকা শুরু হয়। এবং এলাকা চিহ্নিত করে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত চিহ্নিত হয়।
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজলদিঘি, বড়শশী, চিলাহাটি ও নাউতারি দেবোত্তর মৌজার গ্রামগুলির বাসিন্দাদের জমির খতিয়ান নেই। পূর্বপুরুষের নামে থাকা জমির নথিতে এখনও বাংলাদেশের বোদা থানার উল্লেখ রয়েছে।
নিজেদের নামে জমির খতিয়ান না থাকায় সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। এতে সমস্যায় রয়েছে ওই সব মৌজার প্রায় আট হাজার মানুষ। তাঁদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের আগে এলাকার সমস্ত জমির ভারতীয় নথির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তারপর তাঁরা সীমান্ত সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া তৈরির জমির জন্য সম্মতিপত্র দেবেন। সাংসদের কাছে এই মর্মে স্মারকলিপি দেন গ্রামবাসীরা। এই নিয়ে জেলাশাসক শামা পারভিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফিজিক্যাল পজেশনের উপর ভিত্তি করে জমির সমীক্ষা করা হচ্ছে। জেলাশাসকের এই কথায় আশার আলো দেখছেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।