
জলপাইগুড়ি: ভোটের আগে তৃণমূলের আদি-নব্যের মধ্যে তুমুল গণ্ডগোল। আর এর জেরে চরম অশান্তি ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। অভিযোগ, জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূলের নতুন অঞ্চল কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বেশিরভাগ অঞ্চলে আদি তৃণমূল কর্মীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এর জেরেই অশান্তি ছড়িয়েছে দলের অন্দরে। কোথাও-কোথাও আবার প্রকাশ্যে এসেছে এই গণ্ডগোল।
জলপাইগুড়ি বাহাদুর অঞ্চল। সেখানেই এই আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, এই অঞ্চলের নতুন অঞ্চল কমিটির সভাপতি হরেকৃষ্ণ শর্মাকে করা হয়েছে। তিনি মাত্র ছয় মাস আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে নতুন অঞ্চল কমিটিতে সমস্ত আদি তৃণমূল নেতাদের নাম নতুন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এই কারণে তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য পল হাসানের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ আদি তৃণমূল কর্মীরা বৈঠক করে কার্যত দলের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করেছেন। তাঁদের সাফ কথা সদ্য সিপিএম ছেড়ে দলে আসা লোককে অঞ্চল সভাপতি করা যাবে না। অবিলম্বে সভাপতি বদল করতে হবে।
প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি তথা বিক্ষুব্ধ আদি তৃণমূল নেতা মেহেবুব আলম বলেন, “এমন ব্যক্তিকে অঞ্চল সভাপতি করা হল যিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের দলে এসেছে। একবারও তৃণমূলকে ভোট দেয়নি।আর এটাই আমাদের মূল ক্ষোভের কারণ। আমরা দলকে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এরপর সভাপতি বদল না হলে আমরা চরম সিদ্ধান্ত নেব।” অপরদিকে, মহসীন হোসেন নামে এক বিক্ষুব্ধ আদি তৃণমূল কর্মী বলেন, “এই হরেকৃষ্ণ শর্মা একটা হার্মাদ। সিপিএম-এর আমলে আমাদের মেরেছে। এখন তাঁকে আমরা অঞ্চল সভাপতি মানি না।”
তৃণমূল জেলা কমিটির সদস্য তথা বিক্ষুব্ধ আদি তৃণমূল কর্মীদের মুখ পল হাসান বলেন, “এক প্রভাবশালী নেতা এবং আইপ্যাক মিলে এসব করেছে। আমরা এই কমিটি মানি না। ওই প্রভাবশালী নেতার জন্য গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের A টিম B টিম তৈরি হয়েছিল। যেই প্রভাবশালী নেতা এই অঞ্চল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থাকে সে কীভাবে এখানকার মাটি চিনবে? গত বিধানসভা ভোটে যখন দলের বিধায়ক জলপাইগুড়ি পৌর এলাকায় পিছিয়ে যায়। আমরা তখন এই এলাকা থেকে পিছিয়ে থাকা ওই ভোট মেকাপ করে দলকে লিড দিই।” নতুন অঞ্চল সভাপতি হরেকৃষ্ণ শর্মা বলেন, “কোথায় কী গোষ্ঠী কোন্দল তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। কারণ আমি নিজে পদ চাইনি। দল আমাকে পদ দিয়েছে।”
বিজেপির সদর উত্তর মণ্ডলের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস রায় বলেন, “আমি ১৯৯৫ সাল থেকে বিজেপি করি। সেইসময় আমি যাদের তৃণমূল করতে দেখেছি আজ তারা কেউ নেই। এবার দেখলাম সিপিএমের লোক তাদের অঞ্চল সভাপতি হল। আসলে এদের নীতি আদর্শ বলে কিছুই নেই। এটা পিসি ভাইপোর দল।”
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বিকাশ মালাকার বলেন, “একই লোক চিরকাল একই পদে থাকতে তা হয় না। নতুন পুরনো মিলিয়ে চলতে হয়। আমিও দলের অনেক কমিটিতে নেই। তাই বলে আমি ক্ষোভ দেখাব তা হয়না। সামনেই ভোট আসছে। আমাদের কাজ আদি নব্য মিলে মমতা ব্যানার্জী ও অভিষেক ব্যানার্জীর হাত শক্ত করা।”