রাজ্যে প্রথম বিক্ষুব্ধ ‘বিজেমূল’ প্রার্থী! ধূপগুড়িতে এবার ‘নির্মল ফ্যাক্টর’
একুশের ভোটের আগে যেন বাস্তবিকভাবেই 'বিজেমূল' প্রার্থী পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি বিধানসভা, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি (BJP) নেতা কর্মীরা একজোট হয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করালেন ওই কেন্দ্রে
ধূপগুড়ি: বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021) যুযুধান দুই পক্ষ হল তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি (BJP)। আবার দুই দলের মধ্যেই গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলে বারবার অভিযোগ করে আসছে বাম ও কংগ্রেস। ‘দলে থেকে কাজ করতে পারছি না’ বলে ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন একাধিক নেতা। কোনও পুরনো বিজেপি নেতা আবার দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিরোধীরা এই দলবদলুদের ‘বিজেমূল’ বলে কটাক্ষ করছেন। কিন্তু একুশের ভোটের আগে যেন বাস্তবিকভাবেই ‘বিজেমূল’ প্রার্থী পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি বিধানসভা। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল ও বিজেপি নেতা কর্মীরা একজোট হয়ে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাতে চলেছেন ওই কেন্দ্রে। যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, ইনিই রাজ্যের প্রথম ‘বিজেমূল’ প্রার্থী।
তৃণমূল এবং বিজেপির দুই দলেরই একটা বড় অংশের কর্মী-সমর্থকদের প্রার্থী পছন্দ হয়নি, তাই বিকল্প ভাবে তাঁরা মিলিতভাবে একজন নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাল ধূপগুড়ি বিধানসভায়। বিক্ষুব্ধ ঘাসফুল ও গেরুয়া শিবির মিলেমিশে ধূপগুড়ি থেকে প্রার্থী করলেন অধ্যাপক ডঃ নির্মলচন্দ্র রায়কে।
ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ডঃ নির্মল চন্দ্র রায় বরাবরই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। একুশের বিধানসভা নির্বাচন ভোটে আবার তিনিই বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠে। আবার একটা মহল বলে, না তিনি তৃণমূলেই থাকছেন এবং এবারের প্রার্থী হিসেবে নির্মলবাবুকেই বেছে নেবে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় অধ্যাপক নির্মলবাবুকে কোনও দলই টিকিট দেয়নি। এদিকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর তৃণমূল এবং বিজেপির একটা বড় অংশের প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দুই দলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্মলবাবুকেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করাবেন তাঁরা।
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ধূপগুড়ির বিদায়ী বিধায়ক মিতালী রায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের বহু কর্মীরা ভেবেছিলেন তাঁর জায়গায় হয়ত এবার অন্য কাউকে প্রার্থী করবে দল। কিন্তু প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় মিতালীতেই আস্থা রেখেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। অপরদিকে, বিজেপির দাবি ছিল কোনও যুব নেতাকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু দুই তরফের কারও দাবি পূরণ না হওয়ায় নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
এর ফলশ্রুতিতে নির্মলবাবুকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়া করানো হচ্ছে বলে খবর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে তৃণমূল এবং বিজেপির ব্যাপক সংখ্যাক ভোট কাটতে পারে নির্দল প্রার্থী। তাছাড়া, ধূপগুড়ির নিরপেক্ষ মানুষরা নির্মলবাবুকে ভোট দিতে পারেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাই ধূপগুড়ির রাজনীতিতে এবার ‘নির্মল-ফ্যাক্টর’ বড় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত। সূত্রের খবর, নির্মল চন্দ্র রায়কে পিছন থেকে অক্সিজেন জোগাছে অরাজনৈতিক বেশ কয়েকজন যুব নেতা।
আরও পড়ুন: ২০ বছরে কোনও উন্নয়ন করেননি! ভোট চাইতে গিয়ে গো-ব্যাক স্লোগানের মুখে তৃণমূল প্রার্থী
নির্মলচন্দ্র রায় আগাগোড়া স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বর্তমানে রাজবংশী যুব মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন তিনি। এর ফলে রাজবংশী ভোট কোনদিকে যাবে তা নিয়ে চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল বিজেপির। এদিন সন্ধ্যায় ধূপগুড়িতে নিজস্ব বাসভবনে নির্মলবাবু সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে আমরা নির্দল হয়ে লড়ব। ধূপগুড়ি ব্লক তৃণমূলের যুব সম্পাদক তথা ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা মহাদেব রায় বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষকে চাই। অধ্যাপক ডঃ নির্মলচন্দ্র রায় তেমনই একজন। তাই আমরা তাঁকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই। এদিকে নির্মলবাবুকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাকর্মি ও সমর্থকরাও।