ঝাড়গ্রাম: বাবাকে যখন ওরা গুলি করেছিল, তখন ছেলেরা নাবালক। মা দুই ছেলেকে বুকে আগলে বাপের বাড়ি গিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। প্রায় ২৭ বছর আগের ঘটনা। অবশেষে সিপিএমের এক সময়ের জামবনি লোকাল কমিটির সদস্য জাহ্নবী বেরার খুনিদের সাজা শোনাল ঝাড়গ্রাম আদালত। বাবার খুনের সাজা শুনে কিছুটা স্বস্তি ছেলেদের। বুকের ভিতর জমে থাকা যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হল এদিন। আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল অভিযুক্তকে।
১৯৯৭ সালের ১৫ জুলাই। জামবনি থানার ঢ্যাংবহরা গ্রামের বাসিন্দা জাহ্নবী বেরা নিজের চাষের জমি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় ঝাড়খণ্ড পার্টির কয়েকজন তাঁর উপর হামলা করে। অভিযোগ ওঠে, সিপিএমের জামবনি লোকাল কমিটির সদস্য জাহ্নবী বেরাকে সামনে থেকে গুলি করা হয়।
গুলি পেটের ডানদিকে লাগে। তবে সেই অবস্থাতেই আক্রান্ত জাহ্নবী বেরা দৌড় লাগান। এদিকে গুলির আওয়াজ পেয়ে এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাতেই পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তবে সেই ঘটনার সপ্তাহখানেকের মাথায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে জাহ্নবী বেরার মৃত্যু হয়।
তবে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি ও মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়। গ্রেফতার হয় অভিযুক্তরা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে যায় তারা। অভিযোগ ওঠে, নাবালক দুই সন্তান নিয়ে জাহ্নবীবাবুর স্ত্রী লালগড়ে বাপের বাড়ি চলে যান। সেখানেই ছেলেরা বড় হন।
এখন বড় ছেলে ভিক্টর বেরা প্রাইমারি স্কুলে পড়ান। তিনি বলেন, অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বাবার খুনিদের শাস্তির দাবিতে অনড় থেকেছেন। বন্ধ করেননি কোর্টে আসা। এক সময় মায়ের হাত ধরে এসেছেন, ভোলেননি সেই দিনগুলোও।
ভিক্টর বেরা বলেন, “কোর্টের উপর আমাদের প্রথম থেকেই আস্থা ছিল। সাক্ষীদের উপর নানা চাপ এসেছে। তারপরও কেসটা এই জায়গায় এসেছে। তবে ২ জন প্রমাণের অভাবে মুক্ত হলেন। তাঁরাও সাজা পেলে খুশি হতাম।”
এই ঘটনায় মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও বিচার চলাকালীন ২ জন মারা যান। বাকিরা প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পান। তবে মূল অভিযুক্ত সুন্দর সোরেনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনায় আদালত।