
বেলপাহাড়ি: জ্বরে কাতরাচ্ছিলেন বাড়িতেই। হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়ত বাঁচত! কিন্তু যাবে কোথা দিয়ে! ওপারে যেতে গেলে খাল পেরতে হবে। একখানা সেতু, তাও ভেঙে পড়েছে। রোগীকে জল পেরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল। তাই মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গোনা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না পরিবারের কাছে। বাড়িতেই মৃত্যু বছর ৪০-এর যুবকের।
নিম্নচাপের জেরে গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে চলেছে একটানা বৃষ্টি। ফুলে-ফেঁপে উঠেছে জেলার একাধিক নদী ও খাল। আর তাতেই বহু অস্থায়ী সেতু ভেঙে পড়েছে। যার জেরে চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। চরম হয়রানির ছবি দেখ গেল বেলপাহাড়ি ব্লকের সন্দাপাড়া পঞ্চায়েতের ডড়রা গ্ৰামে। গ্রামবাসীদের সুবিধার জন্য একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছিল, সেটিও ভেঙে পড়ে। ফলে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন।
যে গ্রামে খাল পেরিয়ে যাতায়াত, সেই গ্রামে সেতু নেই! স্থানীয় উদ্যোগে তৈরি সাঁকোও ভেঙে গিয়েছে জলের তোড়ে। বেলপাহাড়ির সুনীল শবর নামে ওই যুবক অসুস্থ হয়ে পড়লেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না, এমনটাই দাবি পরিবারের। শনিবার রাতে বাড়িতেই মৃত্যু হয় সুনীলের।
সন্দাপাড়া পঞ্চায়েতের ডড়রা গ্রামে প্রায় ৪০টি শবর পরিবারের বাস। গ্রামের ওই খালে বছরের অন্য সময়ে তেমন জল থাকে না, হেঁটেই পারাপার করা যায়। কিন্তু বর্ষায় তা সম্ভব হয় না। সেই কারণেই গ্রামবাসীরা একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শনিবার সকালে জলের তোড়ে ভেঙেছে সেই বাঁশের সাঁকো।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই জ্বর ও রক্তাল্পতায় ভুগে হাসপাতালে যান সুনীল। সেখানে তাঁর চিকিৎসা হয়। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন সুনীল। কিন্তু সম্প্রতি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর দিদি বলেন, “সাঁকো ভেঙে গিয়েছে। এত জল পেরিয়ে কী করে ভাই কে হাসপাতাল নিয়ে যাব? বাড়িতেই মৃত্যু হল। সেতু থাকলে এভাবে মরতে হত না!”
কবে সেতু নির্মাণ হবে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন এলাকার মানুষজন। বর্তমানে ওই গ্রামের বাসিন্দারা বেলপাহাড়ি সদরের সঙ্গে কানের ঝুটি নিয়ে এক কোমর জল পেরিয়ে যাতায়াত করছেন। ঘটনা জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন ঝাড়গ্রাম জেলার DCRD ডিপার্টমেন্টের ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ করণ। তিনি বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এখানে সেতু তৈরি করার ব্যবস্থা হচ্ছে। এখানে যা অবস্থা একটা রোগী পারাপার করার মতো পরিস্থিতি নেই।”